বাংলাদেশে শহর এলাকায় মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ মানুষ দরিদ্র

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ রোববার নতুন বছরের প্রথম প্রহরে নানা রঙের আতশবাজি, ফানুস আর রাতভর ডিজে পার্টির শব্দে প্রকম্পিত হয়েছিল ঢাকার বাড্ডা ও এর আশেপাশের এলাকা।

কিন্তু নতুন বছরের সেই আনন্দের ছিটেফোঁটাও স্পর্শ করেনি ওই এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে।

কেমন আছেন শহরের খেটে খাওয়া এই মানুষেরা – তা তাদের মুখ থেকে শুনতেই সকাল ৯টার দিকে চলে যাই ভাটারা বস্তিতে।

ঘুপচি তিনটি গলির দুই পাশে দশটি করে মোট তিরিশটি ঘর। এতো ছোট একটি জায়গায় গাদাগাদি করে বাস করছে অন্তত ২০০০ মানুষ।

আর তাদের জন্য ওই বস্তিতে রয়েছে মাত্র তিনটি রান্নাঘর আর দুটি গণ টয়লেট।

“যেকোনো সময় ভাড়া বাড়ায়া দিতে পারে”

সকালে গিয়ে দেখা যায় পুরুষ সদস্যরা ইতিমধ্যে কাজে বেরিয়ে পড়েছেন। বাড়ির নারী সদস্যরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ঘরের কাজ সারতে।

এই নারীদের অনেকেই আবার আশেপাশের এলাকায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। সেই ব্যস্ততার মাঝেও নিজেদের টানাপড়েনের নানা কথা জানান বস্তির বাসিন্দারা।

তারা যেখানে থাকেন সেখানে প্রতি মাসে একটি ঘর বাবদ ভাড়া গুণতে হয় সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার মতো।

নতুন বছরের আনন্দ তো দূরে থাক তারা বরং আতঙ্কে আছেন কবে না আবার বাড়িভাড়া বাড়ানোর নোটিশ আসে।

দুই সন্তানের মা নুরুন নাহার অনেকটা আক্ষেপের স্বরেই বলেন, “এই ঘরে একটা বিছনা ফালায়া কোনরকমে থাকি। আর তো জায়গা নাই। কিন্তু যেই ভাড়া এটাই দিতে পারি না। নতুন বছরে আমাদের আনন্দের কিছু নাই। যেকোনো সময় ভাড়া বাড়ায়া দিতে পারে। কিছুই করার নাই। এমনেই আমাদের চলে।”

“এখন পাঁচশ টাকায় একমুঠ বাজার করতে পারি না”

আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় রীতিমত হিমশিম খাওয়ার কথা জানান তিন সন্তানের মা রুপা আক্তার।

তার সংসার চলে স্বামীর একজনের উপার্জনে। যার ওপর নির্ভর করে আছে ছয় জনের পরিবার।

সেই পরিবারের বাজার খরচ সামলাতে গিয়ে তার বাড়িভাড়া বাকি পড়েছে ৫০ হাজার টাকার মতো। কিভাবে সেই টাকা শোধ করবেন তিনি জানেন না।

“আমরা তো গরিব মানুষ। রোজ আনি রোজ খাই। আগে ৫শ টাকায় হাত ভইরা বাজার হইতো। এখন ৫শ টাকায় এক মুঠ বাজার আনতে পারি না। কয়টা আলু, পেঁয়াজ, সবজি কিনলেই শেষ। এম্নে তো আমরা চইলা খাইতে পারি না।”  বলেন মিসেস আক্তার।

দুপুরে রান্নার জন্য আলু কাটছিলেন তিনি। প্রায় প্রতিদিনই তাদের খাবার রুটিন আলু, বেগুন না হলে শাক সবজিতে সীমাবদ্ধ।

মুরগির মাংস জোটে মাসে দুই একবার। অন্যদিকে গরুর মাংস খাওয়ার কথা চিন্তাতেও আনতে পারেন না।

“গরুর মাংস তো বছরে একদিন পাই, ওই কুরবানির ঈদে। আর নাইলে খাই না। ভাগ্যে জোটে না খাই না।” বলেন তিনি।

গ্যাস আর পানির সংকট

গ্যাস ও পানির সংকটে বস্তিতে নিদারুণ কষ্টের কথা জানালেন পারুল বেগম। স্বামী অসুস্থ থাকায়, পাঁচ সদস্যের ভার টানতে হচ্ছে তাকে একাই।

পারুল বেগমের দিন শুরু হয় ভোর ছয়টা থেকে, সারাদিন বিভিন্ন বাড়িতে কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল ঘনিয়ে যায়।

ততোক্ষণে চুলায় কোন গ্যাস পান না। আবার সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহারের কোন সামর্থ্যও তাদের নেই।

এমন অবস্থায় শহরে থেকেও মাটির চুলায় কাজ সারতে হয় বেলা করে ফেরা এই মানুষগুলোকে।

আবার গরমকালে যখন পানির চাহিদা বেড়ে যায় – তখন তীব্র পানি সংকট এসব বস্তির নিয়মিত চিত্র।

কিন্তু দারিদ্র্যের চাপে সব কিছু মেনে নিয়েই চলতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের এই মানুষগুলোকে।

এমন অবস্থায় নতুন বছরে খেটে খাওয়া এই মানুষগুলো প্রত্যাশা – শহরে জীবনযাত্রার ব্যয়, আর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যেন সরকার তাদের সীমার মধ্যে রাখে।

গ্রামের তুলনায় শহরে দারিদ্র্য কম হলেও লড়াই বেশি

বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় জানা গিয়েছে বাংলাদেশে শহর এলাকায় মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ মানুষ দরিদ্র।

আরও সহজ করে বললে শহরের পাঁচ জনের মধ্যে এক জনই দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন যাপন করেন এবং শহরের অর্ধেক পরিবার দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ‘বাংলাদেশ সোশ্যাল প্রটেকশন পাবলিক এক্সপেনডিচার রিভিউ’ শিরোনামের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।

অন্যদিকে গ্রামে দারিদ্রের হার তুলনামূলক বেশি প্রায় ২৬ শতাংশ হলেও টিকে থাকার লড়াই শহরে দরিদ্রদের মধ্যেই বেশি।

এর কারণ গ্রামের ৩৬ শতাংশ মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পান। যেখানে শহরের দরিদ্রদের এই সুবিধা পাওয়ার হার বেশ সীমিত, মাত্র ১১ শতাংশের মতো। অর্থাৎ এই কর্মসূচিগুলো মূলত গ্রামকেন্দ্রিক।

সে কারণে শহরের বস্তিবাসীর জীবন গ্রামের শ্রমজীবীদের তুলনায় অনেক বেশি অরক্ষিত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে শহরে, কিন্তু..

ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে ভাটারা বস্তির এই মানুষগুলো গ্রাম ছেড়ে শহরে এলেও সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গিয়েছে।

গ্রামের চাইতে শহরে আরও বেশি টানাপড়েনের জীবন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বলে তারা জানান।

“শহরে থাকার কারণে আমার খরচ বেড়ে গেসে। দেশে থাকলে কিছু একটা টোকায়-টাকায়া খাইতাম। একটা লাউ লাগায়া খাইতাম, পুষ্কুনি থেইকা মাছ খাইতে পারতাম। মুরগি থাকলে ডিম পাইতাম। শহরে তো আর সেটা না। শহরে তো পানিটা পর্যন্ত আমারে কিনা খাইতে হয়।” বলেন রুপা আক্তার।

এতো কষ্টের পরও শহরে থাকার মূল উদ্দেশ্য হিসেবে তারা সম্মান রক্ষার কথা বলেছেন।

নিম্ন আয়ের এই মানুষেরা জানান, তাদের গ্রামে, নারীদের বাইরে কাজ করা কিংবা কারও ময়লা পরিষ্কারের কাজ করাকে অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়।

কিন্তু শহরের বিষয়টি ভিন্ন। এখানে টিকে থাকতে সবাইকে সব কাজই করতে হয়।

তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে যাওয়ার সময় এই মানুষদের একটি বড় অংশ গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।

সে সময়ে শহরাঞ্চলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও বেড়ে যায়।

শহুরে দরিদ্রতার চিত্র

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপ থেকে জানা যায় কোভিড পরবর্তী সময়ে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়।

অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০১৯ সালের হিসেবে দেশে দারিদ্র্যের হার বলা হয়েছিল ২০.৫ শতাংশ।

পরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এর গবেষণায় দেখা যায় – করোনাভাইরাস মহামারির অর্থনৈতিক প্রতিঘাতে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে।

২০২১ সালের ‘দারিদ্র্য ও জীবিকার ওপর করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা যায়।

একই বছর সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছিল, ‘করোনার কারণে আয় কমে যাওয়ায় সার্বিকভাবে দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’

সংকটের সমাধান কীভাবে হতে পারে

শহুরে দরিদ্রতা শুধু বাংলাদেশ নয় বরং আজ যেসব দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল ধরা হয় তাদের অনেককেই এই বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।

পার্থক্য হল ওই দেশগুলো এই সমস্যার সুরাহা করে আজকের অবস্থানে এসেছে।

কিন্তু বাংলাদেশে এই মানুষগুলোর ন্যূনতম জীবনমান নিশ্চিত করতে, তাদের আয় কাঠামো বিবেচনা আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা সেবার মতো কোন সুবিধাই গড়ে তোলা হয়নি।

আবাসন

অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, শহরের এই নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য তাদের আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নিরাপদ ও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন আবাসন নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি।

মি. মোয়াজ্জেম বলেন, “শহরের বিত্তবানরা মনে করেন এই নিম্নবিত্ত মানুষগুলোকে তাড়িয়ে দিলেই শহর পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু এই ধারণাটা ভুল। কারণ এই নিম্নবিত্ত মানুষেরা শহরের বিত্তবানদের নানা সহায়ক সেবা দিয়ে থাকে। তাই বিত্তবানদের প্রয়োজনেই এই নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য আবাসন গড়ে তুলতে হবে।”

বস্তিতে বসবাসকারী এই জনগোষ্ঠী তাদের থাকার জন্য যে ভাড়া দিয়ে থাকেন সেটা যদি বর্গফুটে হিসেব করা হয়, তাহলে দেখা যায় শহরের বিত্তবানদের চেয়ে শহুরে দরিদ্র মানুষেরা বেশি ভাড়া দিয়ে থাকেন।

এক্ষেত্রে শহরের কাজে আসা এই মানুষগুলোর জন্য সরকারি বিনিয়োগে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন বাড়ি করে দেয়া পরামর্শ দেন তিনি। যাতে নিম্ন আয়ের মানুষ অল্প ভাড়ায় সেখানে থাকতে পারে।

বরাদ্দ জমিতে বহুতল ভবন গড়ে তুললে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দেয়া সহজ হবে বলে তিনি মনে করেন।

কারণ তারা এখন ছোট একটা ঘরের জন্য যে ভাড়া দিচ্ছেন তারা সম পরিমাণ ভাড়া দিয়ে বহুতল ভবনে দুটি ঘর, রান্নাঘর, টয়লেটসহ বাসায় থাকতে পারবে। পানি, গ্যাসের ভালো সেবাও উন্নত থাকবে।

দখল ঠেকানো

সরকার প্রায় দুই দশক আগে ঢাকার ভাসানটেকে ১৫০ বিঘা সরকারি খাসজমির ২০ হাজার বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল।

কিন্তু প্রকল্পটি আংশিক গড়ে উঠলেও সেখানে বস্তিবাসীর কোনও ঠাঁই মেলেনি।

বস্তিবাসীর পরিবর্তে সেখানে বিত্তশালীদেের বসবাস করতে দেখা গিয়েছে।

এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার, প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, ওয়ার্ড কমিশনারদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ার বাইরে গিয়ে বলিষ্ঠ অবস্থান নেয়া দরকার বলে মনে করছেন মি. মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, “ধনিক গোষ্ঠী, বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় বা রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা নিম্নবিত্তের থাকার এই জায়গাগুলোকে তাদের ভবিষ্যৎ ব্যবসার উপাদান হিসেবে দেখে। যেহেতু শহরে জমির দাম অনেক বেশি, তাই তারা এই জায়গাগুলো দ্রুত দখল করতে চায়। সরকারের এখানে শক্ত অবস্থানে যাওয়া দরকার।”

প্রভাবশালীদের এই দখলদারিত্ব বন্ধ করতে পারা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে তিনি মনে করেন।

এ কারণে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য তাদের থাকা জায়গাটি আইনগতভাবে নিরাপদ করা এবং নগর পরিকল্পনার ভেতরে তাদের বাসস্থান ও সুরক্ষা সেবাগুলো নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি যেন কোন বিত্তশালী সেখানে থাকার সুযোগ না পায়।

“পরিকল্পনাগুলো এমনভাবে হওয়া উচিত যেন সেগুলো বেদখল না হয়। গরিব মানুষদের যেন সরিয়ে দেয়া না হয়। যারা ওই এলাকায় থাকে যারা যেন অগ্রাধিকার পান।” তিনি বলেন।

ন্যূনতম মজুরি

শহুরে দরিদ্রতা দূর করার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করা। এমনটাই দাবি অর্থনীতিবিদদের।

শহরের নিম্ন আয়ের মানুষেরা যে আয় কাঠামোর মধ্যে আছেন তার সাথে শহরে থাকা-খাওয়ার ব্যয় কোন অবস্থাতে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

উচ্চমূল্যের শহরে এই আয় কাঠামো অত্যন্ত বৈষম্যমূলক, আয়ের সাথে ব্যয় সঙ্গতিহীন বলে জানিয়েছেন মি. মোয়াজ্জেম।

সেজন্য সরকারের ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কমিশনের সকল খাতের জন্য ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কমিশনে মাত্র ৪২টি খাত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যেখানে বিশেষভাবে উপেক্ষিত শহরে সেবা-দানকারী পেশাগুলো।

সেসব পেশাকে ধাপে ধাপে মজুরি কাঠামোর আওতায় আনলে নিম্নবিত্ত মানুষগুলোর নূন্যতম আয়ের নিশ্চয়তা হবে।

এতে করে তারা খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, সন্তানদের পড়াশোনা, চিকিৎসা, ভবিষ্যৎ সঞ্চয় ইত্যাদি নিশ্চিত করতে পারবে। ফলে সার্বিক জীবন মানের উন্নয়ন ঘটবে।

এলাকাভিত্তিক সরকারি প্রতিষ্ঠান

শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের চিকিৎসা এবং সন্তানদের শিক্ষার জন্য এলাকাভিত্তিক সরকারি প্রতিষ্ঠান থাকা প্রয়োজনীয়তাকেও বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় শহরগুলোয় নিম্নবিত্তরা যেখানে থাকেন। সেখান থেকে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সরকারি হাসপাতালগুলোর দূরত্ব অনেক বেশি।

এ কারণে তারা শিশুদের বেসরকারি স্কুলে পড়াতে বাধ্য হন। ফলে তাদের কোন সঞ্চয় থাকে না।

এক্ষেত্রে সরকারি পরিষেবা যদি শহুরে দরিদ্র এলাকাগুলোর হাতের নাগালে থাকে তাহলে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করা যায়। তাহলে এতে জীবনযাত্রায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে বলে জানান মি. মোয়াজ্জেম।

এক্ষেত্রে তিনি সরকারকে প্রথমে নীতিগতভাবে এবং পরে রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রথমত শহরের সব শ্রেণীর নাগরিকের সুযোগ পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং প্রত্যেকের সুবিধাগুলো তার আয়ের বাস্তবতায় নিশ্চিত করা দরকার, এই নীতিগত অবস্থানে আসা জরুরি।

এরপর এই এলাকাগুলোকে কার্যকর প্রকল্পের আনার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে যেতে হবে। প্রয়োজনে এনজিও’র সহায়তা নেয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন

কোন একটি এলাকার মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের জন্য নিরাপদ পানি ও নিরাপদ স্যানিটেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু অধিকাংশ বস্তিগুলোর কোন সরকারি অনুমোদন নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলোকে বলা হয় অবৈধ বসতি এলাকা।

এ কারণে বস্তিতে বসবাসকারী মানুষেরা শহরের মূল গ্যাসের লাইন, পানির লাইন থেকে অবৈধ সংযোগ নিতে বাধ্য হন।

বস্তি এলাকাগুলোকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা হলে যেন সরকারের সব ধরণের পরিষেবা যেমন গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন – সবই নিশ্চিত করা যাবে বলে জানিয়েছেন মি. মোয়াজ্জেম।

মূলত বাসস্থানের বিষয়টি আইনি ভিত্তিতে নিশ্চিত করা গেলে অন্যান্য সেবা স্বাভাবিকভাবে সেখানে আসতে শুরু করবে বলে তিনি মনে করেন।

এই কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হলে শহুরে দরিদ্রতা কমবে, জীবন মানের উন্নয়ন হবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।


Spread the love

Leave a Reply