বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও কিছু কথা
এডভোকেট ওবায়দুল কবীর খোকন
আমি আইনজীবি হিসেবে ভাইবা পরিক্ষা দেওয়ার সময় বিচারপতি নজরুল ইসলাম স্যারের সাথে প্রথম পরিচয় হয় । ভাইবা রুমে প্রবেশ করতেই স্যারের ভদ্রতা আমাকে উৎসাহিত করে । ভাইবা রুমে প্রবেশ করার আগে দুনিয়াতে যত দোয়া দুরুদ জানা ছিল সব পড়তে পড়তে মুখস্থ করে ফেলেছি তারপরও ভয় মন থেকে একটুও সরে যায়নি ।
জীবনে প্রথম মাননীয় বিচারপতিদের সামনে ভাইবা পরিক্ষা দেওয়ার জন্য মুখামুখি হব, আইনী জটিলতা নিয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করব, বিভিন্ন মামলার বিষয়াদি নিয়ে শৃষ্ট জটিলতা তাৎক্ষণিক সমাধান করতে হবে এই সব চিন্তা করতে করতেই আমার ডাক পড়ল রুমে যাওয়ার । রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে আল্লাহর অশেষ রহমতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী স্যারের কথা শুনে জানে প্রাণ ফিরে আসল । স্যারে করা এবং অন্যান্য বিচারপতিদের অনেকেগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যখন রুম থেকে বের হয়ে আসলাম মনে হয়েছিল ভাগ্য মনেহয় সুপ্রসন্ন হবে । আল্লাহর রহমতে হয়েছেও তাই । যাইহোক এবার আলোচনা আসা যাক । বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বিচারপতি হিসেবে যতদিন দায়িত্বে ছিলেন ততদিন আমার জানামতে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন ।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী অবসর গ্রহন করার পর গত ৭ই জানুয়ারী ২০১৬ থেকে সিনিয়র এডভকেট হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু করেন। জানুয়ারী মাসে ১০ টি মামলায় অ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী সঙ্গে আপিল বেভাগে আপিয়ার করেন।
যার মধ্যে M/s Ismail Brother Properties limited vs Arifa Akhter & Others (CPLA No. 1516 of 2013) মামলায় অ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম এক মক্কেল এর পক্ষে সেইম সাইড এ বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে আপিল বিভাগে অ্যাপিয়ার করেন। উল্লেখ্য, উক্ত মামলায় আটর্নী জেনারেল রাষ্ট্রের পক্ষে নয়, পারসনাল ব্রিফ হিসেবে উক্ত মামলা পরিচালনা করেন। আর বাকি ৯ টি মামলায় ভিন্ন মক্কেল এর হয়ে আটর্নী জেনারেল বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে মামলা লড়েন (Abdul Barek vs Dr Md Nuruddin CPLA No. 1231/1230 of 2014; CPLA No. 1737 of 2012; Civil Appeal No. 88-93 of 2015; CPLA 2339 of 2014)
গত দুই মাসে এই ১০ মামলা লড়ার সময় কখনই অ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম ‘নিতি-নৈতিকতার’ প্রশ্ন তোলেন নি? এবং গতকাল প্রেস ব্রিফিং এর সময় তিনি এই তথ্য বেমালুম চেপে যান কে তিনি গোটা দশেক মামলায় বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে লড়েন।
ইদানিং সরকার দলীয় কিংবা সরকারের সাপোর্টার জাতীয় কতিপয় আমাদের সিনিয়র আইনজীবিগণদের ভাবসাব এমন যেন তার পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট আইনবিদ । দুনিয়ার মাঝে তারা সব জান আর বাকী কেউ কিছুই জানেনা । বিচার বিভাগ ও মাননীয় বিচারপতি এবং সম্মানীত সিনিয়র আইনজীবিদের হেয় করার জন্য কতিপয় চাটুকার আইনজীবি আইনের অপব্যাখ্যা করে দেশের সম্মানীত পেশাদারীদের অসম্মন করে চলেছেন । তারা অহরহ আইনের অপব্যাখ্যা করে দেশের সাধারন মানুষদের বিভ্রান্ত করে চলেছেন । আশা করছি রাষ্ট্রের লাভজনক পদে থেকে সম পেশাদারী আইনজীবিদের সাথে সম্মান সূচক কথা বার্তা বলবেন । বাংলাদেশের একমাত্র চাটুকার এর্টনী জেনারেল মাহবুবে আলম তিনি নিজেকে অনেক জ্ঞানপাপী মনে করেন । নিজেকে জ্ঞানপাপী মনে না করে ভালকরে আইনের বই পড়াশোনা করুন ভাল আইন জানতে পারবেন । ভবিষ্যতে আইন না যেনে কোন মন্তব্য করলে এর দাতভাঙ্গা জবাব সাধারন আইনজীবিদের কাজ থেকে পাবেন ।
নিচে সবার জানার জন্য বাংলাদেশ সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগের ১ম পরিচ্ছেদে কি লেখা আছে পড়ার জন্য দেওয়া হল :
বিচারকগণের অক্ষমতা
৩[৯৯। (১)(২) দফায় ব্যবস্থিত বিধান ব্যতিরেকে, কোন ব্যক্তি অতিরিক্ত বিচারকরূপে দায়িত্ব পালন ব্যতীত বিচারক পদে দায়িত্ব পালন করিয়া থাকিলে উক্ত পদ হইতে অবসর গ্রহণের কিংবা অপসারিত হইবার পর তিনি কোন আদালত বা কর্তৃপক্ষের নিকট ওকালতি বা কার্য করিতে পারিবেন না অথবা বিচার বিভাগীয় বা ৪[আধা-বিচার বিভাগীয় পদ অথবা প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টার পদ] ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে বহাল হইবেন না।
(২) কোন ব্যক্তি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক পদে বহাল থাকিবে উক্ত পদ হইতে অবসর গ্রহনের বা অপসারিত হইবার পর তিনি আপীল বিভাগে ওকালতি বা কার্য করিতে পারিবেন।]