বিদায় ইইউ ,বরিস অধ্যায়ের শুরু

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ জল্পনাকল্পনার পালা শেষ।শুক্রবার সমাপ্ত হচ্ছে ব্রেক্সিট।যাত্রা শুরু হবে বরিস যুগের । পক্ষে-বিপক্ষের বিতর্কও আর মুখ্য নয়। দীর্ঘ ৪৭ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিদায় নিচ্ছে যুক্তরাজ্য। আগামীকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টায় (ইউরোপের কেন্দ্রীয় সময় ১২টা) ঘটছে ঐতিহাসিক এই বিচ্ছেদ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই জোটের সূচনা হয়েছিল। ধীরে ধীরে তা বিশ্বের বৃহত্তম আঞ্চলিক জোট হিসেবে আবির্ভূত হয়। ইউরোপের জোটভুক্ত ২৮টি দেশের বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প, অভিবাসনসহ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অনেক কিছুই ইইউর একক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিচালিত হয়। যুক্তরাজ্যের বিদায় ইইউ জোটের ইতিহাসে প্রথম কোনো ভাঙনের ঘটনা।

গত বুধবার ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যরা (এমইপি) যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিচ্ছেদের শর্তগুলো (ব্রেক্সিট চুক্তি) আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করেন। এটি ছিল যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিচ্ছেদ আয়োজনের সর্বশেষ আনুষ্ঠানিকতা। আবেগঘন বক্তব্যে যুক্তরাজ্যকে জোট থেকে বিদায় জানান ইইউ নেতারা।

ঘটা করে এই বিচ্ছেদ উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে যুক্তরাজ্য। আগামীকাল রাতে ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্ট চত্বরে হাজারো মানুষের সমাবেশ ঘটবে। আলোকসজ্জায় সাজবে সরকারি ভবনগুলো, উড়বে দেশের পতাকা। রাত ১১টার পরপরই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।

৬২১ বনাম ৪৯ ভোটের ব্যবধানে ইইউ পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি পাস হয়। ভোটের ফলাফল প্রকাশ শেষে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট সদস্যরা হাতে হাত ধরে, গান গেয়ে যুক্তরাজ্যকে বিদায় জানান।

ভোটের ফলাফল ঘোষণা করে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের (ইইউ) ডেভিড সসোলি ব্রিটিশদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের যা কিছু বিভক্ত করে, তার চেয়ে ঐক্যবদ্ধ করার উপাদান বেশি। আপনারা ইইউ ত্যাগ করছেন। কিন্তু সব সময়ই ইউরোপের অংশ হিসেবে থাকছেন। আপনাদের বিদায় বলা খুব কঠিন।’

ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট আরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, বিচ্ছেদপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া নতুন অংশীদারির পথে প্রথম পদক্ষেপ। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় আপনাদের ভালোবাসব এবং আপনাদের থেকে দূরে সরব না।’

ইইউ পার্লামেন্টের ব্রেক্সিটবিষয়ক মুখপাত্র গাই ভারহফস্টাড বলেন, যে দেশটি ইউরোপের স্বাধীনতার জন্য দুই দফা রক্ত দিয়েছে, তাদের বিদায় দেখা দুঃখজনক।

ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন দল থেকে নির্বাচিত সদস্য রয়েছেন ৭৩ জন। বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে এসব সদস্য পদ হারাচ্ছেন। আগামীকাল ইইউর সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের আর কোনো অংশগ্রহণ থাকছে না। তবে ব্রেক্সিট চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিদ্যমান পারস্পরিক সম্পর্কগুলো বজায় থাকবে। এই সময়ের মধ্যে বাণিজ্য ও অন্যান্য বিষয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণে কাজ করবে উভয় পক্ষ।

বুধবার ইইউ পার্লামেন্টে শেষবারের মতো দেওয়া বক্তব্যে ব্রিটিশ সদস্যদের অনেকেই আশা প্রকাশ করেছেন যে যুক্তরাজ্য কোনো একদিন আবার ইইউ জোটে ফিরে আসবে। গ্রিন পার্টির এমইপি মোলি স্কট সজল চোখে বলেন, ‘হয়তো এখনই আবার ইইউতে ফিরে আসার জন্য প্রচার শুরু করা যাবে না। তবে ইইউতে ফিরে আসার স্বপ্ন জিইয়ে রাখতে হবে।’

কিন্তু যুক্তরাজ্যের কট্টর ডানপন্থী নেতা নাইজেল ফারাজ শেষ দিনেও ইইউকে তুলোধোনো করতে ছাড়েননি। তিনি বলেন, ব্রেক্সিটের মধ্য দিয়ে ইইউর ভাঙনের সূচনা হলো। ব্রেক্সিট পার্টির নেতা ফারাজ বলেন, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য ও রাজনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার জন্য ইইউর মতো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই। ইইউকে অগণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে ফারাজ বলেন, জনগণের কাছে ইইউ নেতাদের কোনো জবাবদিহি নেই। অথচ জাতিরাষ্ট্রের প্রায় সবকিছুই তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। ব্রিটিশ পতাকা উড়িয়ে ব্রেক্সিট পার্টির সদস্যরা ইইউ পার্লামেন্টকে বিদায় জানান। ইইউ পার্লামেন্টে কোনো জাতিরাষ্ট্রের পতাকা উড়ানো নিষিদ্ধ। তাই ফারাজ পতাকা উড়ানো শুরু করলে তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই পতাকা সঙ্গে নিয়ে পার্লামেন্ট ছাড়ার অনুরোধ করেন পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড সসোলি।

এদিকে বুধবার যুক্তরাজ্যের প্রদেশ স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্ট ইইউর পতাকা না সরানোর পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে ক্ষমতাসীন স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পাটি (এসএনপি) ব্রেক্সিটের ঘোরবিরোধী। এদিন স্কটিশ পার্লামেন্ট চলতি বছরের মধ্যে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজনে একটি প্রস্তাবও পাস করে।


Spread the love

Leave a Reply