বৃটেনে ৩৪০০০ বিদেশি শিক্ষার্থীর জীবন বিপন্ন:শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বৃটিশ সরকারের সিদ্ধান্তে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ধ্বংস হওয়ার পথে। ২০১৪ সালে সরকার অভিযোগ করে যে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অর্থাৎ বাইরের দেশ থেকে সেখানে পড়তে যাওয়া প্রায় ৩৪০০০ শিক্ষার্থী বাধ্যতামূলক ইংরেজি ভাষা পরীক্ষায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন । ভিসা নবায়নের জন্য এ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। তাতে প্রতারণার অভিযোগে ওইসব শিক্ষার্থীকে তাদের পড়াশোনা ত্যাগ করতে বাধ্য করানো হয়েছে। অনেককে এজন্য যার যার দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের অনেকে। তার মধ্যে ফারজানা ববি অন্যতম। আছেন ভারতের তেজাস সোনি, পাকিস্তানের নাভিদ খান। জীবনে বড় ধাক্কা খেয়ে এসব শিক্ষার্থীর অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। কেউ কেউ আত্মহত্যা করতে গিয়ে ফিরে এসেছেন। পরিবারের কাছে অনেকে হয়ে পড়েছেন অনাকাঙ্ক্ষিত। ফলে কোথাও তাদের ঠাঁই নেই। লন্ডনে যাওয়া, থাকা-খাওয়া, প্রতিষ্ঠানের খরচ সহ তাদের ও পরিবারের হাজার হাজার পাউন্ড অর্থ খরচ হয়েছে।

কিন্তু তাদেরকে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে পড়াশোনা শেষ না করেই। এ অবস্থায় আগামী শুক্রবার বৃটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা বৃটেনের ন্যাশনাল অডিট অফিসের (এনএও)। ওদিকে কেন এত শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন এমন হয়ে গেল সে প্রশ্নে ক্রমশ চাপ বাড়ছে বৃটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কি ঘটেছিল তা নিয়ে প্রথমবার তদন্তের জন্য আগামী মাসের শুরুতে এমপিদের সর্বদলীয় একটি বৈঠক বসার কথা রয়েছে। অন্যদিকে সরকার ভুল করে এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করেছে এবং তাতে তাদের মধ্যে যে বিপর্যয়কর পরিণতি সৃষ্টি হয়েছে তা তুলে ধরতে মঙ্গলবার হাউস অব কমন্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা শিক্ষার্থীদের। বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ এমপিদের কাছে ব্যক্তিগভাবে বলেছেন, তিনি ওইসব শিক্ষার্থীর অবস্থার সঙ্গে সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, তাদেরকে ভুল করে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এনএও’র রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ হতে পারে।

এ খবর দিয়ে লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা গার্ডিয়ান দীর্ঘ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, সরকারের ওই অভিযোগের পর বৃটেন থেকে কমপক্ষে ১০০০ শিক্ষার্থীকে বের করে দেয়া হয়েছে। কয়েক শত শিক্ষার্থী দীর্ঘ বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই বলেছেন, ভুল করে তাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কমপক্ষে ৩০০ এমন ঘটনা আদালতে মুলতবি আছে। এতে বাংলাদেশের ফারজানা ববির প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, টিউশন ফি ও বৃটেনে বসবাসের খরচ মিলিয়ে ববির পরিবারকে হারাতে হয়েছে ৫০ হাজার পাউন্ড। কিন্তু বৃটিশ সরকারের অভিযোগ তিনি ইংরেজি ভাষার পরীক্ষায় প্রতারণা করেছেন। এ অভিযোগে তিনি লন্ডনে অবস্থান করতে পারেন নি। তাকে কলেজে যোগ দেয়া বাধ্যতামূলকভাবে বন্ধ করে দেয় সরকার। এতে তার ডিগ্রি অর্জন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

এর ফলে যে অর্থ নষ্ট হয়েছে তাতে ববি ও তার পিতামাতার মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। তিনি শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করতে পারেন নি। এজন্য তাকে কম বেতনের কাজ করতে হচ্ছে বাধ্যতামূলক। বৃটিশ সরকারের অভিযোগের কারণে তার চাকরির যোগ্যতাকে আরো খর্ব করেছে। তার পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে ফারজানা ববি বিদেশে গিয়েছিলেন পড়াশোনা করতে। তা ছিল জীবনকে উন্নত হিসেবে গড়ে তোলার বাসনা। কিন্তু তার পরিবর্তে তার জীবনে নেমে এসেছে করুণ পরিণতি।

গার্ডিয়ান লিখেছে, ফারজানা ববির বয়স ২৯ বছর। তিনি খুব পরিষ্কার এবং শুদ্ধ ইংরেজি বলেন। তিনি ১৯ বছর বয়সে ব্যবসায় পড়াশোনা করতে লন্ডনের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন। তার আগে তার ইংরেজির দক্ষতা ছিল খুব ভালো। একটি মার্কিন সংস্থা পরিচালিত মিশনারি স্কুলে তার পড়াশোনা সম্পন্ন করেছেন। ফলে ইংরেজি ভাষার পরীক্ষায় তাকে কারো সহায়তা নেয়ার দরকার হওয়ার কথা নয়।

বিবিসির একটি রিপোর্টের পর ইংরেজি ভাষায় প্রতারণার বিষয়টি সামনে চলে আসে। ইংলিশ ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন (টোয়েইচি) পরীক্ষায় দুটি কেন্দ্রে এমন প্রতারণা হয় বলে ওই রিপোর্টে বলা হয়। ওই পরীক্ষা নেয়ার দায়িত্ব ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এডুকেশনাল টেস্টিং সার্ভিসেসের। বৃটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের প্রতি নির্দেশ দেয় ৫৮৪৫৮ জনের পরীক্ষা আবার পর্যালোচনা করতে, যাদের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে। এমন নির্দেশের পর ওই প্রতিষ্ঠান এটা চূড়ান্ত করে যে, ৩৪০০০ শিক্ষার্থী চিটিং করেছেন। ২২৬০০ শিক্ষার্থীর ফলকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে জানানো হয়। আর চিটিং বা প্রতারণা করেন নি ২০০০ শিক্ষার্থী। তাই ৩৪০০০ শিক্ষার্থীর সবার ভিসা বাতিল করা হয় অথবা মেয়াদ খর্ব করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ২২ হাজার ৬ শতাধিক শিক্ষার্থীর অনেকে। এ অবস্থায় শত শত শিক্ষার্থী এমপিদের সহায়তা চেয়েছেন। এ নিয়ে যারা প্রচারণায় নেমেছেন তারা বলছেন, যারা পরীক্ষা দিয়েছেন তাদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৯৭ ভাগ শিক্ষার্থী কি করে এমন প্রতারণা করতে পারেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে যারা তাৎক্ষণিকভাবে বৃটেন ছেড়েছেন তাদের পক্ষে বিদেশে বসে এই লড়াই চালিয়ে নেয়া খুবই কঠিন, যদিও তাদেরকে বলা হয়েছে বৃটেনের বাইরে বসেও তারা আপিল করার অধিকার পাবেন। এমন অবস্থার শিকার শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তাদের কাছে এমন অনুভূতিকে আত্মহত্যার মতো মনে হয়েছিল। তারা জীবনে আর অগ্রগতি করতে পারছেন না।
ফারজানা ববি ২০১২ সালে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ভিসা নবায়নের ক্ষেত্রে তাকে ইংরেজি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা প্রমাণ করতে হতো। তিনি বেশ ভালো গ্রেড নিয়ে পাস করেন। ভিসার জন্য আবেদনপত্র জমা দেন। পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন। তারপর ২০১৪ সালের নভেম্বরের এক রোববার সকাল ৭টার সময় তার বাসায় হাজির অভিবাসন বিষয়ক ৬ জন কর্মকর্তা। তার ফ্লাটমেটদের কাছে জানতে চান, ফারজানা ববি সেখানে থাকেন কিনা।

ববি বলেন, এ কথা শুনে আমার মনো হলো- আমি যেন একজন ক্রিমিনাল। তার ভিসা নবায়নের আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রত্যাখ্যান করেছে আগেভাগে তা তিনি জানতেন না। মুহূর্তের মধ্যে তিনি উচ্চ ফি দিয়ে পড়াশোনা করা একজন ছাত্রী থেকে যেন অবৈধ অভিবাসী হয়ে যান।
ওই কর্মকর্তারা তাকে ইংরেজি পরীক্ষা নিয়ে বিস্তারিত প্রশ্ন করতে থাকেন। ববি বলেন, পরীক্ষা নিয়ে তারা প্রচুর প্রশ্ন করলেন আমাকে। যেখানে পরীক্ষা দিয়েছি সেই ভবনটি দেখতে কেমন, পরীক্ষা কেমন ছিল, পরীক্ষা দিতে আমি সিঁড়ি বেয়ে উপরে গিয়েছি নাকি নিচতলায় পরীক্ষা দিয়েছি- এসব জানতে চাইলেন তারা।

ফারজানা ববিকে ইমিগ্রেশন সেন্টারে নিয়ে রাখা হয় কয়েক ঘণ্টা। এরপর ধরিয়ে দেয়া হয় একটি কাগজ। তাতে বলা হয়, বৃটেনে প্রতারণার জন্য তাকে বৃটেন ছাড়তে হবে। তবে শুরুতে এ বিষয়ে এতখানি বুঝতে পারেন নি ববি। তিনি বলেন, আমি মনে করেছিলাম আমাকে সম্ভবত ছাড় দেয়া হচ্ছে। বৃটেন একটি উন্নত দেশ। তারা আইন দিয়ে চলে। কিন্তু দ্রুত এটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, তার মতো আরো কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে একইভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানানোটা খুব সহজ ছিল না।

পড়াশোনা করতে না পেরে এবং কাজ থেকে তাকে বিরত রাখায় খুব হতাশ হয়ে পড়েন ফারজানা ববি। তবে তিনি বৃটেনে থাকার পক্ষে ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যাতে তার ডিগ্রি সম্পন্ন করে গ্রাজুয়েশন করতে পারেন। ৬ মাস বাকি ছিল তার সেই পড়াশোনায়। কিন্তু সেই সময়টাও পান না। ববি বলেন, এমন সময় আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আমাকে দিশাহারা করে তুললো। এক পর্যায়ে আমি আত্মহত্যা করবো ভেবেছিলাম। মনে হলো আমার সহায়তা নেয়া প্রয়োজন। তাকে তার ফ্লাটমেটরা চলে যেতে বললেন। ফলে কয়েক মাস আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন ববি। বিভিন্ন বন্ধুর বাসায় সোফার ওপর তাকে ঘুমাতে হয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি মধ্য লন্ডনে একটি পার্কের বেঞ্চে ঘুমাতে বাধ্য হয়েছেন। আইনি লড়াই করবেন সেই সামর্থ্য ছিল না তার। নিজে নিজেই চেষ্টা করেছেন বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনায় আবেদন করতে। এ পথে অগ্রসর হওয়ার আগেই তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।

ববি বলেন, আমি মানসিক, শারীরিক, আবেগ ও আর্থিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। মনে হয়েছিল আর বাঁচতে পারবো না। তাই হয়তো আমি আত্মহত্যা করবো। মনে হয়েছিল আমি ব্লাকহোলের মধ্যে অবস্থান করছি। এখান থেকে আমাকে মুক্তি পেতে হবে। ভীষণ ভীতু হয়ে পড়েছিলাম। মনে হতো, তারা আমাকে ধরে বন্দিশিবিরে পাঠাবে। এ অবস্থায় একজন ইংলিশ বন্ধু আমাকে ঢাকায় ফেরার একটি টিকিট কিনে দেন। ব্যর্থতা এবং ক্ষোভ আমার ভিতর যেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলো। একটি ভিডিও ক্লিপের ওপর ভিত্তি করে তারা এত হাজার ছেলেমেয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো, এতে খুব রাগ হয়েছে। একটি ভিডিও ক্লিপই এটা প্রমাণ করতে পারে না যে, আমরা সবাই প্রতারণা করেছি।

ফারজানা ববির পিছনে যে বিপুল পরিমাণের অর্থ খরচ হয়েছে তার জন্য ক্ষুব্ধ তার পিতামাতা। তাই ববি বিশ্বাস করেন, বৃটিশ সরকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবে। তারা সেটা করলে আমি আমার মা-বাবার কাছে ক্ষমা চাইতে পারবো। তারা জানতে পারবেন আমি কোনো অন্যায় করি নি। আমার হাতে প্রমাণ থাকবে। তাদেরকে দেখানোর মতো কিছু নেই আমার কাছে আর। আমি আমার আশা হারিয়ে ফেলেছি।

বৃটেনে ১১ মাস জেলে কাটিয়েছেন ভারতের তেজাস সোনি (৩৬)। তার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আছে। কিন্তু তিনি তা স্বীকার করেন না। এ অভিযোগের বিরুদ্ধে বৃটিশ আদালতে কোনো আপিল করার অধিকার নেই। ইংরেজিতে তার ভালো দক্ষতা। তিনি আশা করেছিলেন বৃটেনে উচ্চতর পড়াশোনা শেষে ভারতে চাকরি করতে পারবেন। তাই তাকে বিদেশ যেতে উৎসাহিত করেছিলেন তার পিতা। সোনি বলেন, বাবা চেয়েছিলেন আমি মাস্টার ডিগ্রি সম্পন্ন করি, যাতে জীবনে আমার অবস্থান হয় উন্নততর। এজন্য আইনগত ও টিউশন ফি বাবদ খরচ হয়েছে ৩৫০০০ পাউন্ড। বৃটেন যাওয়ার আগে ইংরেজিতে তার ছিল ভালো দক্ষতা। ২০১১ সালে ভিসা নবায়নের জন্য তাকে টোয়েইচ পরীক্ষা দিতে হয়। তিনি মনে করেন, এতে চিটিং করা খুব কঠিন। কারণ সেখানে পরীক্ষাকক্ষে ছিল সিসিটিভি। এ ছাড়া ২০ থেকে ২৫ জন মানুষ উত্তরগুলো কম্পিউটারে রেকর্ড করছিলেন।

২০১৪ সালে তাকে একটি চিঠি ধরিয়ে দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, তিনি অভিবাসন সংক্রান্ত অপরাধ করেছেন এবং তার ভিসার মেয়াদ কমিয়ে আনা হয়েছে। তাতে তার বিরুদ্ধে ইংরেজি পরীক্ষায় চিটিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। তাতে বলা হয, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে অবস্থানের আর কোনো অধিকার নেই আপনার। বিলম্ব না করে আপনার চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া উচিত। এ অবস্থায় তখনকার প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তেরেসা মে’র কাছে এ বিষয়ে চিঠি লেখেন সোনি। তাতে তিনি বলেন, বৃটেনে পড়াশোনা করতে গিয়ে তিনি পড়াশোনার পিছনে এবং ভিসার পিছনে প্রচুর অর্থ খরচ করেছেন। কিন্তু তার সেই পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই তার ভিসার মেয়াদ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সোনি এ সময় তাদের কাছে জানতে চান- আমার এখন কি করা উচিত? এই দেশে আমি কি একজন অবৈধ অভিবাসীতে পরিণত হবো? আমি কি মুখ বন্ধ করে থাকবো এবং আমার দেশে ফিরে যাবো? আমি কি টেমসের (নদী) পাড়ে যাবো এবং তার ভিতর নিজেকে ডুবিয়ে দেবো?

সোনির নাম যতক্ষণ ওই তালিকা থেকে বাদ না যায় ততক্ষণ তাকে ইংল্যান্ডে থাকার পরামর্শ দেয় তার পরিবার। কিন্তু ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাকে গ্রেপ্তার করে। হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যায় বন্দিশিবিরে। সেখানে রাখা হয় ১১ মাস। এ সময়ে তিনি ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েন। ওই বন্দিশালার মেডিকেল টিম তাকে বিষণ্নতা বিরোধী ওষুধ দেয়। ওইসব স্টাফরা খুব সহানুভূতিশীল ছিলেন বলে তার বর্ণনা। তবে তারা সহায়তা করায় সক্ষম ছিলেন না। এমন কি কতদিন থাকতে হবে বন্দি তাও তারা বলতে পারতেন না। ওদিকে তার বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেয়ায় ভেঙে যায় তার বিয়ে। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী মনে করেছিল আমি একজন লুজার। এক পর্যায়ে ভারতে ফিরে আসেন তিনি। কিন্তু ভারতের আহমেদাবাদে বসে এ লড়াই চালিয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ভারতে বসে বৃটেনের অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাটা খুবই কঠিন। আমি এখনও আশা করি, বৃটেন আমার পড়াশোনার বাকি অংশটা সম্পন্ন করার অনুমতি দেবে।

ওইসব শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তানের নাভিদ খান (৩৩)। তিনি বৃটিশ সরকারের ওই সিদ্ধান্তে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু বেঁচে যান। নিজেকে আবিষ্কার করেন একটি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা তাকে পরামর্শ দেন পাকিস্তানে ফিরে আসতে। তারা মনে করেন, দেশে ফিরলে তিনি হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কিন্তু তাকে প্রত্যাখ্যান করে তার পরিবার। কারণ, এ পরিবারটি বৃটিশ বিচার ব্যবস্থার ওপর এতটাই আস্থা রাখে যে, তারা মনে করে বৃটিশ সরকার অন্যায়ভাবে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনতে পারে না। বৃটেনে থেকে ফিরে এসে পরিবারে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন নাভিদ। কোনো কাজ পাচ্ছেন না। পাকিস্তানে তিনি বিপন্ন অবস্থায় আছেন। দু’বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে দু’ঘণ্টার দূরত্বে গৃহহীন মানুষদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন তিনি।


Spread the love

Leave a Reply