ব্রিটেনে রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতারের ঘটনায় মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর বিক্ষোভকারীদের যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাকে “গভীরভাবে উদ্বেগজনক” বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তচিন্তার পক্ষে আন্দোলনকারীরা।
স্কটল্যান্ডের পুলিশ সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দু’জনকে গ্রেফতার করে। অক্সফোর্ডেও একজনকে গ্রেফতার করা হয়, কিন্তু তারপর আবার তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এসব গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছিল রানির মৃত্যুর পরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং রাজা তৃতীয় চার্লসকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা ঘোষণার সময়।
তবে লন্ডনে যখন রানিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত রাখা অবস্থায় দেখার জন্য মানুষ লাইন দিতে শুরু করেছে, তখন মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, জনগণের “প্রতিবাদ করার অধিকার আছে।”
গত রবিবার এডিনবরার সেন্ট জাইলস ক্যাথেড্রালে যখন রাজাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আসীন বলে ঘোষণা করা হচ্ছিল, তখন সেখানে ২২ বছর বয়সী এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে শান্তি ভঙ্গ করার অভিযোগ আনা হয়।
পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং এডিনবরার শেরিফ কোর্টে পরের কোন এক তারিখে তাকে হাজিরা দিতে হবে।
ঐ একই দিনে অক্সফোর্ডে সাইমন হিল নামে ৪৫ বছরের এক ব্যক্তিকেও জন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। অক্সফোর্ডে যখন রাজার সিংহাসনে আরোহণের ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল, তখন তিনি এই বলে চিৎকার করেছিলেন যে, “তাকে কে নির্বাচিত করেছে।”
টেমস ভ্যালি পুলিশ বলেছে, পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল এবং তিনি পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে ‘স্বেচ্ছায়’ সহযোগিতা করেছেন।
সোমবার আরেক ঘটনায় এডিনবরার রয়্যাল মাইলে ২২ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয় শান্তি ভঙ্গের অভিযোগে। ঐ রাস্তা দিয়ে যখন রানির কফিন নিয়ে রাজকীয় শোক মিছিল যাচ্ছিল, তখন রানির দ্বিতীয় ছেলে প্রিন্স এন্ড্রুকে তিনি হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
‘ইনডেক্স ফর সেন্সরশিপ’ বলে একটি সংস্থার প্রধান নির্বাহী রুথ স্মিথ বলেন, “এসব গ্রেফতারের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক।” তিনি বলেন, “এদেশের মানুষ মতপ্রকাশের যে স্বাধীনতা ভোগ করে, এসব অনুষ্ঠানকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে যেন তা ক্ষুণ্ণ করা না হয়, সেটার বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”
‘বিগ ব্রাদার ওয়াচ’ নামে আরেকটি অধিকার সংস্থার প্রধান সিলকি কারলো বলেন, “মানুষ যাতে শোক প্রকাশ করতে পারে, শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে, তাতে সহায়তা করা যেমন পুলিশের কর্তব্য, তেমনি মানুষের প্রতিবাদ করার অধিকার রক্ষাও পুলিশের দায়িত্ব।”
মানবাধিকার সংগঠন ‘লিবার্টি’র পলিসি এবং ক্যাম্পেইন অফিসার জোডি বেক বলেন, “পুলিশ তাদের ব্যাপক ক্ষমতা ব্যবহার করে যেরকম কঠোর এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা বেশ উদ্বেগজনক।”
তিনি বলেন, “প্রতিবাদের বিষয়টি রাষ্ট্রের তরফ থেকে দেয়া কোন উপহার নয়, এটা মানুষের মৌলিক অধিকার।”
গতকাল সোমবারও রাজা তৃতীয় চার্লসের ওয়েস্টমিনস্টার হলে আসার আগে এক ব্যক্তি “নট মাই কিং”, অর্থাৎ “আমার রাজা নন” বলে একটা প্ল্যাকার্ড হাতে পার্লামেন্টের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
এ ঘটনা সম্পর্কে মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, এক ব্যক্তিকে ওয়েস্টমিনস্টার হলের বাইরে থেকে সরে যেতে বলা হয়েছিল, তাকে গ্রেফতার করা হয়নি, বা তাকে পার্লামেন্টের আশে-পাশের এলাকাও ত্যাগ করতে বলা হয়নি। পুলিশ বলছে, পার্লামেন্ট ভবনে গাড়ি চলাচল এবং গেট দিয়ে যাতায়াতে যাতে কোন অসুবিধা না হয়, সেজন্যে এটা করা হয়েছিল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে, যেটিতে দেখা যায় এক ব্যক্তি একটি সাদা কাগজ ধরে রেখেছেন, যেটিতে তিনি “নট মাই কিং’ শ্লোগান লিখবেন বলে জানাচ্ছেন, আর এক পুলিশ অফিসার এই ব্যক্তির বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইছেন।
এই অফিসারকে অন্য এক পুলিশ বাহিনী থেকে মেট্রোপলিটন পুলিশকে সহায়তার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। তাকে বলতে শোনা যায়, এরকম কিছু লেখা হলে “তা মানুষকে ক্ষুব্ধ করতে পারে।”
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট কমিশনার স্টুয়ার্ট কান্ডি এক বিবৃতিতে বলেন, “জনগণের অবশ্যই প্রতিবাদ করার অধিকার আছে এবং এখন যে অসাধারণ পুলিশ অপারেশন চলছে, তাতে জড়িত সব পুলিশ অফিসারকে আমরা বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছি।”
লন্ডনে আগামী এক সপ্তাহে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঢল নামবে তা সামলাতে পুলিশ এবং বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি প্রায় দেড় হাজার সামরিক সদস্যও কাজ করবে।
মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন কমিশনার স্যার মার্ক রোওলি বলেন, তার পুলিশ বাহিনী এখন এক “বিশাল চ্যালেঞ্জের” মুখে।
“আমরা এই অনুষ্ঠানকে নিরাপদ রাখতে কাজ করছি, এজন্যে আমাদের হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন করতে হচ্ছে। কারণ লাখ লাখ মানুষ তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চান, আর এটির জন্য সেই পর্যায়ের নিরাপত্তা বিধানের প্রয়োজন হবে।”
যেসব ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে ব্যাপারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র কোন মন্তব্য করতে চান নি। তবে তিনি বলেছেন, “ব্যাপক অর্থে বলতে গেলে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য এটি জাতীয় শোক প্রকাশের সময়। কিন্তু প্রতিবাদ করার যে মৌলিক অধিকার, তা এখনো আমাদের গণতন্ত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবেই আছে।”