ব্রেক্সিট পুনর্বিবেচনা করতে ব্রিটিশদের প্রতি ইইউ এমপিদের আহ্বান

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃব্রেক্সিট বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে ব্রিটিশ নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেকটি দেশের পার্লামেন্ট সদস্যরা। এক চিঠিতে তারা জানান, ব্রিটিশদের সিদ্ধান্তকে তারা সম্মান করেন, তবে একই সঙ্গে আফসোসও করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
আগামী ২৯ মার্চ যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। আর ইইউ ত্যাগের শর্ত হিসেবে মে তৈরি করেছেন ইইউ ত্যাগের শর্তাবলী, যা ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন চুক্তি নামে পরিচিত। দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাসের আলোচনার পর গত বছরের নভেম্বরে ইইউর সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী মে। বিরোধী লেবার পার্টির পার্টির পাশাপাশি সরকার দলীয় কনজারভেটিভদের একাংশও এই চুক্তির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

ব্রিটিশদের কাছে এই চিঠি লেখার বিষয়টি প্রস্তাব দেয় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অস্ট্রিয়ান সদস্যরা। ১২৯ জন সদস্য এতে স্বাক্ষর করেন। তারা জানান, ব্রিটেনের পরিস্থিতি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। তারা বলেন, ‘আমরা আপনাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। কিন্তু জনমত জরিপে ব্রেক্সিট পুনর্বিবেচনায় এত মানুষের মতকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। এটা স্পষ্ট যে তিন বছর আগে যেই ব্রেক্সিটের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো। এখন সেটা সেই জায়গায় নেই।’

পার্লামেন্ট সদস্যরা বলেন, ‘ব্রিটেনের যেকোনও সিদ্ধান্তকেই আমরা স্বাগত জানাবো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংস্কারে অবশ্যই আমরা আপনাদের সাথে থাকবো। আমরা সবসময়ই মানুষের কথা চিন্তা করি।

ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করা নিয়ে বার বারই হোঁচট খেয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ব্রেক্সিট চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্বিমতকে কেন্দ্র করে পদত্যাগ করেছেন দুই দুইজন ব্রেক্সিটবিষয়ক মন্ত্রী। অন্য মন্ত্রণালয়েরও কয়েকজন সরে দাঁড়িয়েছেন। পদত্যাগ করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনও। তুমুল বিরোধিতার মধ্যে থেরেসার ব্রেক্সিট চুক্তিটি পার্লামেন্টে অনুমোদন পাওয়া না পাওয়াজনিত অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। তবে অনুমোদন না পেলে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করা হতে পারে। একে নো ডিল ব্রেক্সিট নামে ডাকা হচ্ছে। তবে এ প্রশ্নেও রয়েছে বিরোধিতা। নো ডিল ব্রেক্সিট পরবর্তী পরিস্থিতিতে থেরেসা মে যেন বিপাকে পড়েন তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ব্রেক্সিট বিরোধীরা। শুধু বিরোধীরাই নয়, নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতারাও এরইমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তারা নো ডিল ব্রেক্সিট প্রশ্নে থেরেসার পাশে নেই।

যুক্তরাজ্যে অভন্তরীণ এই রাজনৈতিক সংকটে উদ্বিগ্ন হয়েই মূলত চিঠিটি লেখেন ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যরা। চিঠিতে সাইপ্রাসের সব সদস্যরাই স্বাক্ষর করেছেন। তারা বলেন, ‘বিগত ৪০ বছরে ব্রিটিশ জনগণ ও রাজনীতিবিদদের ইউরোপের প্রতি যে অবদান আমরা সেজন্য কৃতজ্ঞ। আমরা আমাদের ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ সহকর্মীদের অভাব অনুভব করবো। তারা বলেন, ‘আমরা পরবর্তী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে আবারও আপনাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই।

ব্রিটিশ লিবারেল ডেমোক্রেট এমইপি ক্যাথরিন বেয়ার্ডার বলেন, ‘এই চিঠিটি হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। এত দেশের এত মানুষ চায় যে আমরা তাদের সঙ্গে থাকি। তারা আমাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করে। একই সঙ্গে একসাথে কাজও করতে চান।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাজ্য। গত বছর নভেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রস্তাবিত চুক্তি অনুমোদন করেছেন সংগঠনটির নেতারা। ২৬ পৃষ্ঠার ঘোষণাপত্রসহ ৬০০ পৃষ্ঠার ওই চুক্তিটি বাস্তবায়িত হতে গেলে অবশ্যই তাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনুমোদন পেতে হবে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার তারিখ নির্ধারণ করেছে।


Spread the love

Leave a Reply