ভারতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ২৬১, প্রাথমিক তদন্তে যা জানা যাচ্ছে

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ ভারতের ওড়িশা রাজ্যে ‌তিনটি ট্রেনের পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে অন্তত ২৬১ জন নিহত হয়েছেন। আরও প্রায় ৯০০ জনকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

উদ্ধারকাজ চলাকালীন এক পর্যায়ে ওড়িশা ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর জেনারেল সুধাংশু সারাঙ্গি বলেছিলেন, নিহতের সংখ্যা ২৮৮ জন। পরবর্তীতে এই সংখ্যা সংশোধন করা হয়।

উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে নিহতের সংখ্যা ২৬১।

ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া, পিটিআই’ও বিষয়টি নিশ্চিত করে জানাচ্ছে যে মৃতের সংখ্যা ২৬১ জন।

ইন্ডিয়ান রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা পিটিআই’কে বলেছেন, “উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। এখন আমরা সংযোগ পুন:প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করবো।”

তবে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান মুখপাত্র কে. এস. আনন্দের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে যে এখন পর্যন্ত ২৬১ জন মারা গেছে।

একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার পর পাশের লাইন দিয়ে যেতে থাকা আরেকটি ট্রেন সেটিকে ধাক্কা দেয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইন্ডিয়ান রেলওয়ে বলছে করোমানডেল এক্সপ্রেস আর হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়েছে।

ওড়িশা রাজ্যের মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা দুর্ঘটনার পরপর জানিয়েছিলেন দুর্ঘটনাস্থল বালাসোরে অন্তত ২০০টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ১০০জন অতিরিক্ত ডাক্তার সেখানে সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে।

দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন বলছিলেন, “দুর্ঘটনার পর আমি ১০ থেকে ১৫ জনের নিচে চাপা পড়ি। আমি ঐ মানুষের স্তুপে সবার নিচে ছিলাম।”

“আমার হাতে আর ঘাড়ে আঘাত লাগে। আমি যখন ট্রেনের বগি থেকে বের হই, তখন দেখি কেউ হাত হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে, কারো আবার মুখ সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গিয়েছে”, ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই’কে বলছিলেন ঐ ভুক্তভোগী।

এই ঘটনার পর ওড়িশা রাজ্যে একদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, শালিমার-চেন্নাই করোমানডেল এক্সপ্রেসের একাধিক বগি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটার সময় লাইনচ্যুত হয়ে যায়। কয়েকটি বগি পাশের লাইনের ওপর পড়ে।

সে সময় ইয়াশভান্তপুর থেকে হাওড়ার দিকে যাওয়া হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ঐ লাইনে পড়ে থাকা বগিগুলোতে আঘাত করে।

ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি মালবাহী ট্রেনেরও এই দুর্ঘটনায় ভূমিকা ছিল।

ট্রেনের বগির নিচে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে

প্রাথমিক তদন্তে যা জানা যাচ্ছে

এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন রেলওয়ে সেফটি বিভাগের কমিশনার। এই সংস্থাটি বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে।

এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও সিগন্যালের সমস্যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি জানিয়েছেন, এই রুটে ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ‘কবচ’ ব্যবহার করা হতো না।

রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানান, “কবচ সিস্টেমটি এই রুটে নেই। বর্তমানে দিল্লি-হাওরা এবং দিল্লি-বোম্বে রুটে কবচ স্থাপন করা হচ্ছে।”

ভারতের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ ঠেকাতে ‘কবচ’ সিস্টেমটি স্থাপন করা হচ্ছে।

যখন কোনো ট্রেন ভুলবশত সিগন্যাল পার করে ফেলে, তখন কবচ ঐ ট্রেনের চালককে সতর্ক করে।

এই কবচ সিস্টেম ট্রেনের চালককে সতর্ক করতে পারে, ট্রেনের ব্রেকের নিয়ন্ত্রন নিতে পারে এবং নির্দিষ্ট দূরত্বে আরেকটি ট্রেনের উপস্থিতি টের পেলে সয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন থামাতেও পারে।

ভারতের রেলওয়ে নেটওয়ার্কের ২ হাজার কিলোমিটার পথে এই কবচ সিস্টেম স্থাপন করার কাজ চলছে।

ফেব্রুয়ারিতে উত্তর প্রদেশে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর রেলওয়ে বোর্ডের সিনিয়র কর্মকর্তারা দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করেন, যার মাধ্যমে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রেলগাড়ি নিরাপদভাবে চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়গুলো নিয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কাজ করে তারা।

ভারতের সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজে যোগ দেয়
ভারতের সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজে যোগ দেয়

দুর্ঘটনার কারণ যা জানা যাচ্ছে

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে চেন্নাইগামী করোমানডেল এক্সপ্রেসের চারটি বগি ও ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের রেললাইনে পড়ে, যেই লাইন দিয়ে ইয়েশভান্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস যাচ্ছিল।

দ্বিতীয় ট্রেনটির পেছন দিকের দুটি বগি তখন লাইনচ্যুত হয়।

রেলওয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন যে করোমানডেল এক্সপ্রেসের ১২টি বগি বাহানগর বাজার স্টেশন পার করার সময় লাইনচ্যুত হয় এবং পাশের লাইনের ওপর পড়ে। সেসময় ঐ লাইন দিয়ে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার সময় সেগুলোর সাথে ধাক্কা খায় এবং ট্রেনটির তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়।

পত্রিকাটির খবর অনুযায়ী, বাহানগর বাজার স্টেশনে চারটি রেললাইন আছে যার একটিতে দুর্ঘটনার সময় একটি মালবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল।

যাত্রীবাহী ট্রেন দুটি ভিন্ন ভিন্ন লাইনে একে অপরকে বিপরীত দিক দিয়ে পার করার কথা ছিল।

কিন্তু একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে পড়ে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা হাওড়া এক্সপ্রেসের সাথে সেটির সংঘর্ষ হয়।

হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা বলছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে করোমানডেল এক্সপ্রেসের ১৫টি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনের ওপরে পড়ে এবং পরে হাওড়া এক্সপ্রেসের সাথে সংঘর্ষ হলে সেই ট্রেনের দুটি বগি লাইনের বাইরে চলে যায়।

অন্য একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু পত্রিকা খবর প্রকাশ করেছে যে প্রথমে ইয়েশভান্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়।

করোমানপেল এক্সপ্রেস পশ্চিমবঙ্গ থেকে তামিলনাড়ু যাতায়াতের মাধ্যম। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ট্রেনটি শালিমার স্টেশন অতিক্রম করে।

দ্য হিন্দু পত্রিকা বলছে, মূলত তামিলনাড়ুতে কাজের জন্য ও উন্নত চিকিৎসার জন্য যারা গিয়ে থাকেন, তারা এই ট্রেনটি ব্যবহার করে থাকেন।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানা যাচ্ছে

ঘটনাস্থল সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের পাঠানো খবর ও ছবি দিয়ে সেখানকার সবশেষ পরিস্থিতির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।

ঘটনাস্থলে ট্রেনের চারটি বগি উল্টে থাকতে দেখা যায়। কয়েকটি বগি একটি আরেকটির উপরে উঠে আছে। কিছু বগি বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

মালবাহী ট্রেনের ওপরে একটি ট্রেনের ইঞ্জিন উঠে থাকতে দেখা যায়।

রেললাইন সহ আশেপাশের জায়গাগুলোতে ট্রেনে থাকা মানুষের জিনিসপত্র ছড়িয়ে রয়েছে।

লাইনের পাশে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরা মৃতদেহ সারিতে রাখা ছিল। কিছুক্ষণ পরপর এই মৃতদেহগুলো গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

ট্রেনের বগির ভেতরে মানুষের স্যান্ডেল, কাপড় এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

উদ্ধারকাজ চলাকালীন কয়েকজনকে পড়ে থাকা কাপড় ও দড়ির সাহায্যে টেনে বের করা হয়। দুর্ঘটনায় অনেকেরই হাত বা পা কাটা পড়েছে বলে বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া কারো কারো জীবন বাঁচানোর জন্য হাত, পা কেটেও বের করতে হয়েছে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা মানুষ বলছেন যে বগির ভেতর থেকে এখন আর কোনো আওয়াজ আসছে না। ধারণা করা হচ্ছে যে বগির নিচে আর কেউ চাপা পড়ে নেই। তবে উদ্ধারকাজ এখনো চলছে।

উদ্ধারকাজ চালাতে ও আহতদের চিকিৎসায় ভারতের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অনেকের হাত, পা কেটে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করতে হয়েছে

হাসপাতালের বাইরে শত মানুষের ভিড়

ওড়িশার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা জানিয়েছেন ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত মানুষকে গোপালপুরে একটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

এর বাইরে কিছু মানুষকে বালাসোর মেডিকেল কলেজেও নেয়া হয়েছে।

হাসপাতালের বাইরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বালাসোর হাসপাতালের পোস্টমর্টেম বিভাগের বাইরে শত শত মানুষ ভিড় করেছে।

বালাসোরে শুক্রবার রাতেই ৫০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদীপ জেনা। মানুষ নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে এসে রক্ত দান করে যাচ্ছে।

ভারতে গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা এটি
ভারতে গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা এটি

ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শুক্রবার দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগীদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের আশ্বাস দেন।

দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা শীঘ্রই বোঝা যাবে।”

এই দুর্ঘটনার দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এই মুহুর্তে আমাদের চিন্তা মানুষের জীবন বাঁচানো ও উদ্ধারকাজ শেষ করা।”

উদ্ধারকাজ

প্রাথমিক অবস্থায় দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা হতাহতদের উদ্ধারকাজে সহায়তা করছিলেন। আহত যাত্রীদের হাসপাতালে নিতে সাহায্য করছিল স্থানীয় বাস কোম্পানিগুলো।

ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮১ সালে। সেসময় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বিহার রাজ্যে সাইক্লোনের সময় লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে যায়।

ঐ দুর্ঘটনায় অন্তত ৮০০ মানুষ মারা গিয়েছিল।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

“দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ অব্যাহত আছে। ভুক্তভোগীদের সম্ভাব্য সব ধরণের সহায়তা দেয়া হবে”, টুইটে লেখেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এ দুর্ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করেছেন।

রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ রূপি করে দেয়া হবে।

এছাড়াও গুরুতর আহতদের জন্য দুই লাখ রুপি ও অপেক্ষাকৃত কম আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।

এই দুর্ঘটনার পর শুক্রবার রাতে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাই কমিশন একটি প্রেস রিলিজ প্রকাশ করে।

সেখানে উল্লেখ করা হয় যে সাধারণত বাংলাদেশিরা চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যাওয়া আসা করতে করমোনডেল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ব্যবহার করে থাকেন।

বাংলাদেশি কোনো নাগরিক দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনে ছিল কিনা, সে বিষয়ে খোঁজ রাখতে কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন রেল কর্তৃপক্ষ ও ওড়িষ্যার রাজ্য সরকারের সাথে যোগাযোগ রাখছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এ বিষয়ে তথ্যের জন্য একটি হটলাইন নম্বরও চালু করেছে উপ-হাইকমিশন।


Spread the love

Leave a Reply