যে তিন কারণে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ‘চূড়ান্ত পতন’ দেখা গেল

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারের পর ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলার দলের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে ‘চূড়ান্ত পতন’ বলেছেন প্রেস কনফারেন্সে।

ইংল্যান্ড বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি জয় পেয়েছে, এছাড়া নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে গেছে।

সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছে ইংল্যান্ড আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরে।

পাঁচ ম্যাচে চারটিতেই হেরে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলার বলেন, কোনও পরিকল্পনাই কাজে আসেনি ইংল্যান্ড দলের।

জনি বেয়ারস্টো, ডাউইড মালানের মতো ওপেনার, জো রুট, হ্যারি ব্রুকের মতো ব্যাটার, জস বাটলারের মতো নেতা এবং গতিময় এক ফাস্ট বোলিং লাইন আপ আছে ইংল্যান্ডের, সাথে যোগ হয়েছেন স্পিনার আদিল রাশিদ।

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলের এমন পরিস্থিতি ক্রিকেট সমর্থকদের অবাক ও বিস্মিত করেছে।

‘নিজেদের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছে’

ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলটা নিজেদের ওপর অর্জিত বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে করছেন ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার মাইক অ্যাথারটন।

ইংল্যান্ড ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন, ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও শিরোপা জিতেছে।

রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা এই দলটি এভাবে হেরে যাওয়াতে ইংল্যান্ড দলের মধ্যে একটা নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন অ্যাথারটন।

স্কাই স্পোর্টস ক্রিকেটে নিজের বিশ্লেষণে অ্যাথারটন বলেন, “আমার মনে হয়েছে ইংল্যান্ড ভেঙ্গে পড়েছে ইতোমধ্যে। এই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এসেছিল এবং এই দলটার ক্রিকেটাররা চ্যাম্পিয়ন মানসিকতার”।

তার মতে, যে মানদন্ড নিজেদের জন্য ইংল্যান্ড ঠিক করেছিল প্রায় ছয় সাত বছর ধরে সেটা ভেঙ্গে পড়েছে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার, আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের পরে ইংল্যান্ড নিজেদের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।

অ্যাথারটন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি দেখার পর বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে আত্মবিশ্বাস একেবারেই তলানীতে আছে’।

ব্যাঙ্গালোরে ইংল্যান্ড ১৫৬ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, এটা এই মাঠের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ওয়ানডে টোটাল।

মাঠ ছাড়ার সময় আদিল রাশিদ, জস বাটলারদের চেহারায় অসহায়ত্ব ছিল স্পষ্ট।

হারশা ভোগলে এই সপ্তাহেই এক্স-এ(পূর্বে টুইটার নামে পরিচিত) নিজের ভেরিফাইড একাউন্টে লিখেছিলেন, “মনে হচ্ছে ইংল্যান্ডের জন্য এই ২০টা দিন অনেক লম্বা হতে যাচ্ছে”।

‘ইংল্যান্ডে অনেক পরিবর্তন প্রয়োজন’

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামা ইংল্যান্ডের একাদশের সবার বয়স ছিল ৩০ এর বেশি, ওয়ানডে ক্রিকেটে এমন ঘটনা এর আগে মাত্র দুইবার ঘটেছে, ২০২২ সালে দুই বারই নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল ত্রিশোর্ধ্ব ক্রিকেটারদের একাদশ নিয়ে মাঠে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

মাইক অ্যাথারটন মনে করেন ইংল্যান্ডের সবাই না হলেও একটা বড় অংশেরই ৫০ ওভারের ক্রিকেটে আর দেয়ার কিছু নেই।

যেমন হ্যারি ব্রুক, গাস অ্যাটকিনসনের মতো ক্রিকেটাররা আগামীতে থাকবেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে।

তিনি মনে করেন, “এই দলটার আসলে সময় শেষ হয়ে আসছে, সবাই না হলেও একটা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটের দিকে মনোযোগ দিতে হবে”।

এখন টি-টোয়েন্টির চল আছে সাথে যোগ হয়েছে ১০০ বলের খেলা দ্য হান্ড্রেড- এতে করে ৫০ ওভারের ক্রিকেটের প্রতি ইংল্যান্ডের মনোযাগটা একটু হলেও কমে গেছে বলে মত মাইক অ্যাথারটনের।

টসে ভুল করা দুটি ম্যাচে

ইংল্যান্ড অন্তত দুটি ম্যাচে টসে ভুল করেছে বলে মত দিয়েছেন মাইক অ্যাথারটন।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের পরে সম্প্রচারকদের দেয়া সাক্ষাৎকারে জস বাটলারও এই কথা বলেন।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে দিল্লিতে টসে জিতে বোলিং নিয়েছিল ইংল্যান্ড।

আফগানিস্তান ২৮৪ রান করার পর ইংল্যান্ড ২১৫ রানে অলআউট হয়ে যায়।

ইংল্যান্ডের যে ব্যাটিং লাইন আপ তাতে রান তাড়া করার চেয়ে টার্গেট দেয়া ভালো বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বিশেষ করে মুম্বাই বা দিল্লির মতো মাঠে, যেখানে সহজে রান তোলা যায় কিন্তু প্রতিপক্ষ যদি রানের পাহাড় তোলে সেটা একটা চাপই বটে।

যেমন মুম্বাইয়ে টসে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাট করতে পাঠায় ইংল্যান্ড।

এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৯৯ রান তোলে, জবাবে ইংল্যান্ড ১৭০ রানে অলআউট হয়ে যায় ২২ ওভার ব্যাট করে।

পাকিস্তান কি পারবে ঘুরে দাঁড়াতে?

পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপের লিগ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে।

ভারত, আফগানিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে পাকিস্তান কোণঠাসা।

ওদিকে নেদারল্যান্ডসের সাথে হারলেও, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

তবে মাঠে নামার আগে পাকিস্তান একটা জায়গায় ভরসা পাবে, ১৯৯৯ সালের পর ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।

বাবর আজমের দল শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই মাঠে নামছে না, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড গতকাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই স্কোয়াডটি বাবর আজম ও নির্বাচক ইনজামাম উল হক ‘স্বাধীনভাবে’ বেছে নিয়েছেন।

পাকিস্তান যদি সেমিফাইনালে উঠতে চায় বাকি সবগুলো ম্যাচেই জয় প্রয়োজন।

পাকিস্তানের ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে টেক্কা দেয়ার মতো ক্রিকেট খেলতে হবে বলছেন, পাকিস্তানের ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ক্রিকেটার রামিজ রাজা।

নিজের ভেরিফাইড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্লেষণে তিনি বলছেন, “এখানে গতির মিশ্রণটা জরুরি। পাকিস্তানের বোলাররা শুধু জোরে বল করতে চায়। এখানে বৈচিত্র্য জরুরি। স্পিনারদের বড় ভূমিকা পালন করতে হবে”। দুই দলেই আজ কিছু পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়মিত অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ফিরছেন লিখেছে জনপ্রিয় ক্রিকেট পোর্টাল ইএসপিএন ক্রিকইনফো।

এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা বাড়তি স্পিনার নিয়ে নামতে পারে।

ম্যাচটি হবে চেন্নাইয়ের এম চিদামবাড়াম ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, এই মাঠে ঐতিহাসিকভাবেই স্পিন ধরে উইকেটে।

পাকিস্তানের হাসান আলি জ্বরের কারণে আজকে ম্যাচে মাঠে নামতে পারবেন না।

ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের শাদাব খান বলেন, “আমরা দলগতভাবেই ভালো পারফর্ম করছি না। আমরা এর আগে এতো বাজে ক্রিকেট খেলিনি, তবে এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে আমরা আগেও ঘুরে দাঁড়িয়েছি”।


Spread the love

Leave a Reply