রক্ত জমাট বাঁধার সঙ্গে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের কোনো সম্পর্ক নেই

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ অক্সফোর্ডের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের কারণে রক্ত জমাট বাধে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এরপরেও ইউরোপের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র জানিয়েছে, যতদিন না ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সির (ইএমএ) তদন্ত শেষ হচ্ছে ততদিন তারা এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্থগিত রাখবে। নতুন করে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেন এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। এর আগে নরওয়ে ও ডেনমার্কে ভ্যাকসিন গ্রহণের পর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। গত এক সপ্তাহে ইউরোপের ১১টি দেশ অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্থগিত করেছে। তবে ইএমএ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ বিশ্বের একাধিক সংস্থা এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেহে রক্ত জমাট বাঁধার জন্য অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন দায়ি এর পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ নেই।

সাউথ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিশেষজ্ঞ আদ্রিয়ান ইস্টারম্যান বলেন, যেসব রাষ্ট্র সাময়িকভাবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্থগিত রেখেছে তারা অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ দেখাচ্ছেন। ৫০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার পর মাত্র ৩০ জনের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা দেখা গেছে। এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়।
তাছাড়া, এই ভ্যাকসিনের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো রক্ত জমাট বাধবে এ দাবির পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও নেই। সংবাদ সম্মেলন করে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা পুনরায় তাদের ভ্যাকসিনের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অ্যান টেইলর বলেন, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্বাভাবিক পর্যালোচনার থেকেও বেশি তদন্ত চালিয়েছি।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলার সময়েও এ ধরণের অভিযোগের কারণে কিছুদিন ট্রায়াল বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে আবারো পর্যালোচনা করে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, এ ধরণের অসুস্থতার সঙ্গে ভ্যাকসিনের কোনো যোগাযোগ নেই। এরইমধ্যে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই ভ্যাকসিন অনুমোদন করেছে, বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রাজিলের মতো দেশ। এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ হচ্ছে বিশ্বের কয়েক ডজন দেশে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও আহ্বান জানিয়ে বলেছে যাতে অক্সফোর্ড আবিষ্কৃত করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্থগিত না করা হয়। সংস্থাটি নিশ্চিত করেছে এ ভ্যাকসিনের সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার সম্পর্ক থাকার প্রমাণ তারা পায়নি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আলাদাভাবে বৈঠকে বসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ)। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত তারা নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বৃটেনের ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এরইমধ্যে অক্সফোর্ডের কোভিড ভ্যাকসিন নিয়েছেন। সে তুলনায় রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা অতি সামান্য। তাই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারপরেও সোমবার জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির ভ্যাকসিন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী তারা তাৎক্ষণিকভাবে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্থগিত করতে যাচ্ছে। তবে এ সিদ্ধান্ত মোটেও ‘রাজনৈতিক’ নয়। এর পরেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ নতুন সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ভ্যাকসিন কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে ইতালি মেডিসিন এজেন্সি অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের কয়েকটি ব্যাচের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছে। স্পেন জানিয়েছে, ভ্যাকসিন কার্যক্রম অন্তত দু সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখবে। এর আগে নেদারল্যান্ডও ২৯ মার্চ পর্যন্ত এ ভ্যাকসিন দেয়া স্থগিত করেছে। সব মিলিয়ে ১১টি ইউরোপীয় রাষ্ট্র পূর্বসতর্কতার অংশ হিসেবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্থগিত রেখেছে। থাইল্যান্ড স্থগিত করলেও আবারো এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।


Spread the love

Leave a Reply