রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করছে ইউক্রেন, পিছু হটছে রুশ সৈন্যরা

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ইউক্রেনের শক্তিশালী আক্রমণের মুখে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান শহরগুলো থেকে পিছু হটছে রাশিয়ান বাহিনী।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার সৈন্যরা কুপিয়ানস্কে প্রবেশ করেছে, রুশ বাহিনীর জন্য পূর্বাঞ্চলে যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ কেন্দ্র।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে যে তাদের সৈন্যরা “পুনঃসংগঠিত হতে” ইজিউম থেকে পিছু হটেছে।

দোনেৎস্কে “প্রচেষ্টা জোরদার” করার জন্য তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর বালাকলিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মন্ত্রণালয়।

এপ্রিল মাসে কিয়েভের আশেপাশের এলাকা থেকে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহার করার পর থেকে ইউক্রেনের এই অগ্রগতি এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ।

শনিবার রাতের ভিডিও ভাষণে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন যে, ইউক্রেন এই মাসের শুরুতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পর থেকে রাশিয়ার কাছ থেকে দুই হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা মুক্ত করা হয়েছে।

তার দাবি অনুযায়ী মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এর অর্ধেক পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মি. জেলেনস্কি এর দ্বিগুণ এলাকা মুক্ত করার কথা জানিয়েছেন।

ইজিউম থেকে রাশিয়ার প্রত্যাহারের বিষয়টি স্বীকার করে নেয়া বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এটি মস্কোর জন্য একটি প্রধান সামরিক কেন্দ্র ছিল।

রাশিয়ার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইজিয়ুম-বালাকলিয়া থেকে দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের ভূখণ্ডে সৈন্যদের স্থানান্তর ও সংগঠিত করতে তিন দিনের অভিযান চালানো হয়েছিল।”

“রুশ সৈন্যদের ক্ষতি রোধ করার জন্য, শত্রুকে জোরালো গোলাবর্ষণে পরাজিত করা হয়েছে।”

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসের তথ্য মতে এর কিছুক্ষণ পরেই, খারকিভ অঞ্চলের রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত অংশগুলির প্রধান প্রশাসক সেখানকার বাসিন্দাদের “জীবন বাঁচাতে” রাশিয়ায় সরে যাওয়ার সুপারিশ করেছিলেন।

এর প্রতিবেশী রাশিয়ার বেলগোরোদ অঞ্চলের গভর্নর বলেছেন, সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য সেখানে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন খাবার এবং চিকিৎসা সহায়তা পাবে।

ইউক্রেনের এই অগ্রগতির অর্থ এটাই হবে যে তাদের সেনাবাহিনী রাশিয়া অধিকৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম। যা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কিয়েভ তার পশ্চিমা মিত্রদের সামরিক সহায়তার জন্য অনুরোধ করে আসছে।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী প্রমাণ করছে যে তাদের বাহিনী রুশ সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে এবং আরও পশ্চিমা অস্ত্র সহায়তা পেলে তা দিয়ে দ্রুত যুদ্ধ শেষ করা সম্ভব।

এর আগে, যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে ইউক্রেন পূর্বাঞ্চলে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত এলাকার ভেতরে ৫০ কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, “রুশ বাহিনী সম্ভবত হতচকিত হয়ে গেছে।”

“ওই অংশটি হালকাভাবে দখল করে রাখা হয়েছিল এবং ইউক্রেনীয় ইউনিটগুলি বেশ কয়েকটি শহর দখল করেছে বা ঘিরে রেখেছে।”

এই সপ্তাহের শুরুতে ইউক্রেন পূর্বাঞ্চলে তার পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। তবে তখন দক্ষিণের শহর খেরসনে একটি প্রত্যাশিত অগ্রগতির দিকেই আন্তর্জাতিক মনোযোগ নিবদ্ধ ছিল।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে রাশিয়া খেরসন শহর রক্ষার জন্য তার সবচেয়ে অভিজ্ঞ কিছু সৈন্যদের সেদিকে পাঠিয়েছে।

তবে পূর্বাঞ্চলে কিছু ভূখণ্ড দখলের পাশাপাশি ইউক্রেন দক্ষিণেও লাভবান হচ্ছে, একজন কর্মকর্তা বলেছেন।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের মুখপাত্র নাতালিয়া গুমেনিউক বলেছেন, তারা দক্ষিণে “দুই থেকে কয়েক ডজন কিলোমিটারের মধ্যে” অগ্রসর হয়েছে।

তবে দক্ষিণ ফ্রন্টে যুদ্ধরত রুশ বাহিনী আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে চলে গেছে বলে জানা গেছে, এবং আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের সৈন্যরা ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে।

স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা যাচ্ছে, রাশিয়ার রকেট হামলায় শনিবার খারকিভে একজন নিহত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একটি ছবি পোষ্ট করেছেন যাতে দেখা যাচ্ছে ইউক্রেনের সেনারা কুপিয়ানস্ক সিটি হলের সামনে দেশের পতাকা ধরে রেখেছে, তাদের পায়ের কাছে রয়েছে রাশিয়ার পতাকা।

শুক্রবার প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছিলেন যে, তার বাহিনী “ধীরে ধীরে নতুন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে” এবং “ইউক্রেনের জনগণকে তার পতাকা ও সুরক্ষা ফিরিয়ে দিচ্ছে”।

তিনি আরও বলেন যে, পুলিশের জাতীয় ইউনিটগুলি মুক্ত এলাকায় ফিরে আসছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের তাদের কাছে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধের তথ্য দিতে আহ্বান জানিয়েছে।

ইউক্রেনের জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ দলের একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পরপর তার এই বক্তব্য এলো।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তারা মস্কোর বাহিনীর দ্বারা “যুদ্ধবন্দীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের নিষ্ঠুরতার” তথ্য নথিভুক্ত করেছে”।

প্রতিবেদনে ইউক্রেনের সৈন্যদের বিরুদ্ধেও “যুদ্ধবন্দীদের নির্যাতন ও অসদাচরণ” করার অভিযোগ তোলা হয়েছে।


Spread the love

Leave a Reply