সাদিক খানের বিরুদ্ধে চরমপন্থী মদদের অভিযোগ
কে এম মফিজুর রহমান :
লন্ডনে লেবার পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী সাদিক খানের বিরুদ্ধে চরমপন্থীদের মদদ দেয়ার অভিযোগ আনলেন কনজারভেটিভ পার্টির মেয়র প্রার্থী জ্যাক গোল্ডস্মিথ। এই মুহূর্তের জরিপে নির্বাচনী দৌড়ে এগিয়ে থাকা সাদিক খানের বিরুদ্ধে জ্যাকের অভিযোগ, খান চরমপন্থীদের সুযোগ করে দিচ্ছেন, তাদের অক্সিজেন সরবরাহ করছেন এবং আড়াল করে রাখছেন। সাদিক খানের বিচারিক দৃষ্টিভঙ্গিকে ‘আতঙ্কজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেন গোল্ডস্মিথ।
এর আগে গত শনিবার সাদিক খানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগের তীর ছোড়েন হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে এবং লন্ডনের বর্তমান কনজারভেটিভ পার্টির মেয়র বরিস জনসন।
বুধবার লন্ডন ইভনিং ষ্ট্যান্ডার্ডকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে গোল্ডস্মিথ বলেন, এটা পরিস্কার করতে চাই যে আমি মি. খানকে কখনোই একজন চরমপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইনা। কিন্তু এতে সন্দেহ নেই যে তিনি চরমপন্থীদের প্লাটফর্ম ও অক্সিজেন দিচ্ছেন এবং তাদের আড়াল করে রাখছেন।
আমি মনে করি তারা আগুন নিয়ে খেলছে। খান তাদের পক্ষে কথা বলেন, যারা ইহুদিদের সাগরে নিক্ষেপ করতে চায়। এধরনের ইহুদিবিদ্বেস কখনোই সমর্থণযোগ্য নয়। এটা কোনো ভালো কথা হতে পারেনা। সে আপনি ইসরায়েলের ইহুদি হন অথবা, ব্রিটেন কিংবা ফ্রান্সের ইহুদিই হন।
এমপি হবার আগে সাদিক খানের পেশা নিয়েও মন্তব্য করেন জ্যাক। তিনি বলেন, খান মনে করেন লি রিগবি’র হত্যা একটি নাটক। এমপি হবার আগে তিনি মানুষকে শুধু এই শিক্ষাই দিতেন যে কিভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। উল্লেখ্য, বর্তমানে লেবার পার্টি থেকে টুটিংয়ের এমপি নির্বাচিত হবার আগে মানবাধিকার আইনজীবী ছিলেন সাদিক খান।প্রতিদ্বন্দীকে উদ্দেশ্য করে গোল্ডস্মিথ আরও বলেন, তিনি নিজেকে ব্রিটেনে মুসলিমদের আড়ালে লুকিয়ে রাখেন। আর কেউ যখন তার অতীত নিয়ে কথা বলে তাদের ইসলামোফোবি আখ্যা দেয়া হয়।
এ সপ্তাহেই গোল্ডস্মিথের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণায় বর্ণবাদমূলক বক্তৃতা দেয়ার অভিযোগ করেছিলেন পাকিস্তানি বংশদ্ভূত সাদিক। এক টুইটার পোষ্টে কনজারভেটিভ প্রার্থীর উদ্দেশ্যে তিনি লিখেন: জ্যাক গোল্ডস্মিথ, আমার দিকে আঙুল তুলে চিৎকার করে বলতে হবে না যে আমি একজন মুসলিম। আমার লিফলেটে এ কথা আমিই পরিষ্কার করে উল্লেখ করেছি। এরপরই সরাসরি সাদিক খানকে আক্রমন করে মন্তব্য করলেন জ্যাক।
এসময় মুসলমানদের প্রসংশা করে গোল্ডস্মিথ বলেন, প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে সত্যিকারের মুসলমানদের সস্ত্রাসকে আশ্রয়-প্রস্রয় দেয়না। তারা উগ্র ভাষাও ব্যবহার করেনা। কিন্তু এমন একজন ব্যক্তি বিশ্বের সবচেয় মর্যদাপূর্ণ শহরের মেয়র হতে চান, যিনি সুলেমান গনির মতো লোকের সাথে নয়বার প্লাটফর্ম শেয়ার করেছেন। আপনি এটাকে কাকতালীয় ঘটনা বলতে পারেন না।
এর আগে গত শনিবার কনজারভেটিভ স্প্রিং ফোরামে থেরেসা মে সাদিক খানের অতীত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এছাড়া্ও সাদিক বিতর্কিত ও ভয়ঙ্কর লোকদের সাথে ওঠাবসা করেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এসময় বাবর আহমেদের নাম উল্লেখ করে থেরেসা বলেন, দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এবং সন্ত্রাসে মদদ দানকারী তার বন্ধু। তিনি আরও বলেন, আমি আতঙ্ক বোধ করি যখন দেখি তিনি (খান) এমন একদল লোকের সাথে প্লাটফর্ম শেয়ার করছেন যারা একজন চরমপন্থী ইমাম দ্বারা প্রভাবিত, যিনি শুধু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে পৃথিবীটাকে আগুনের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন।
দলীয় ওই ফোরামে গোল্ডস্মিথ বলেন, লন্ডনে লেবার পার্টির এমন কোনো মেয়র দরকার নেই যার দলীয় নেতারা মনে করেন সন্ত্রাসীদের গুলি করা অন্যায় এবং বাজে পরিকল্পনা। এমন কোনো মেয়রকে সমস্ত পুলিশের দ্বায়িত্ব দেয়া যাবেনা, এমপি হবার আগে জনগনকে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা শেখানো ছিল যার পেশা। আসছে ৫ মে লন্ডনের পরবর্তী মেয়র এবং লন্ডনের এসেম্বলী মেম্বার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।