সিলেটের করিমউল্লাহ মার্কেটের মালিক কর্তৃক যুক্তরাজ্য প্রবাসীর দোকান দখলের অভিযোগ

Spread the love

ডেস্ক রিপোর্টঃ ২জন মন্ত্রী, ১জন এমপি, কাউন্সিলার, সিলেট আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতাদের সুপারিশ অগ্রাজ্য করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সিলেট নগরীর করিমউল্লাহ মার্কেটে স্থায়ী বন্দোবস্তকৃত ১টি দোকানকোঠা, মার্কেট-মালিক কর্তৃক জোরপুর্বক দখলের অভিযোগ তুলেছেন ব্রিটেন প্রবাসী আমিরুল ইসলাম নজমুল। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রশাসনকে অবহিত করতে ৬ জানুয়ারী শুক্রবার লন্ডনবাংলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ভুক্তভোগী নজমুল।
এমনকি সংবাদ সম্মেলন না করতে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের চাপ ছিলো বলে জানিয়েছেন এই ভুক্তভোগী।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের গোপশহর গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম নজমুল সংবাদ সম্মেলনে বলেন গত দুই বছর বাংলাদেশের এমপি, মন্ত্রী ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে দখলমুক্ত করতে না পেরে অবশেষে নিরুপায় হয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০০১ সালে যখন করিমউল্লাহ মার্কেটের নির্মাণ কাজ শুরু হয় তখন আমি মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ১০৪ স্কয়ার ফিটের একটি দোকানকোঠা ক্রয়ে মার্কেট-মালিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হই এবং ২০০৩ সালে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে মূল চুক্তিপত্র সম্পাদন করে আমাকে আমার দোকান বুঝিয়ে দেয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণকালিন তিন বছরে আমি দোকানকোঠার মুল্য বাবদ কিস্তিতে ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করি । বর্তমানে এই দোকানকোঠার বাজারমুল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা।
২০২০ সালের ৬ অক্টোবর মাসে দোকান কোটা দখলে নেয় মার্কেটের মালিক পক্ষ। এর পর থেকে বিচার সালিশের কথা বলে বার বার সময় ক্ষ্যাপন করার জন্য করিমউল্লাহ মার্কেটের মালিক ছানাউল্লাহ ফাহিম, আতাউল্লাহ সাকের ও তাদের বন্ধু সিলেট সিটি কাউন্সিলার আজাদুর রহমান আজাদকে দায়ী করেন প্রবাসী নজমুল।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী আমিরুল ইসলাম নজমুল পাঠিত সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হল।
দোকানকোঠা স্থায়ী বন্দোবস্ত পাওয়ার পর আমি ভাড়া দিয়ে আসছিলাম । ২০২০ সালে এসে আমি টের পাই আমার ভাড়াটিয়া দোকানটি দখলের উদ্দেশ্যে মার্কেটের ম্যানেজারের যোগসাজসে একটি জাল দলিল করে নিয়েছেন । তাই ৩০ সেপ্টেম্বর (২০২০) ওই ভাড়াটিয়াকে বের করে দিয়ে ১লা অক্টোবর (২০২০) থেকে নতুন ভাড়াটিয়া দেই । আমি তখন বাংলাদেশে ছিলাম । নতুন ভাড়াটিয়া তুলার ৫দিনের মাথায় ৫ অক্টোবর খবর পাই আমার দেয়া ভাড়াটিয়াকে বের করে দিয়ে মার্কেটের একাংশের মালিক ছানাউল্লাহ ফাহিম দোকানকোঠা তালা মেরে দিয়েছেন। আমি ৬ অক্টোবর দুপুরে মার্কেটের অফিসে গিয়ে ছানাউল্লাহ ফাহিমের সাথে দেখা করে দোকান তালা দেয়ার কারণ জানতে চাই। তখন তিনি বলেন, “আপনি ডিফোল্ডার। আপনি নিয়মিত জমিদারীর চাঁদা পরিশোধ করেন নাই। তখন আমি নিয়মিত জমিদারির চাঁদা পরিশোধের রিসিট প্রদর্শন করি। তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনি বেশি কথা বলেন। এখান থেকে চলে যান, নতুবা দোকান ভেঙ্গে ফেলবো, প্রবাসীরা দেশে আসেন কুকীর্তি করার জন্য। তখন সেখানে তাঁর আরো কিছু সহযোগী ছিলেন । সকলেই আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন । আমি প্রাণভয়ে সেখান থেকে চলে আসি। ওইদিন সন্ধ্যায় আমার লন্ডনের ফ্লাইট ছিলো তাই আমি লন্ডন ফিরে আসি।

এখানে আসার পর আমি প্রথমে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যাই এবং দোকানকোঠা দখলমুক্ত করতে সহযোগিতা চেয়ে মান্যবর হাইকমিশনার সাঈদা মোনা তাসনিমের কাছে লিখিত আবেদন দাখিল করি । হাইকমিশনার আমার অভিযোগ পেয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, প্রবাসী সেল, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করেন । বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর দেওয়ান মাহমুদুল হক আমার অভিযোগটি তদারকি করেন । কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি।
৭ মাস পর ২০২১ সালের ২১ মে আমি বাংলাদেশে যাই। সিলেট যাওয়ার তিনদিন পর ২৪ মে করিমউল্লাহ মার্কেটের একাংশের মালিক ছানাউল্লাহ ফাহিমের সঙ্গে বৈঠকে বসি। তখন আমার সঙ্গে এডভোকেট ও সাংবাদিক তাজউদ্দিন, মহানগর যুবগলীগের সাবেক সভাপতি রাহাত তরফদারসহ ক’জন ছিলেন । উক্ত বৈঠকে আলোচনার পর ছানাউল্লাহ ফাহিম বলেন মার্কেটের অর্ধেকের মালিক তাঁর চাচাতো ভাই আতাউল্লাহ সাকের আজকের বৈঠকে আসতে পারেননি। তিনি ছাড়া সমাধান হবে না। তাই এক সপ্তাহ পরে আরো একটি বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করেন । কিন্তু নির্ধারিত তারিখে তারা বৈঠকে না বসে বারবার সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। অনেক চেষ্টার পর একমাস পর বৈঠকে বসতে সমর্থ হই । ওই বৈঠকে গিয়ে দেখি আতাউল্লাহ সাকের সিলেট সিটি কাউন্সিলার আজাদুর রহমান আজাদকে নিয়ে এসেছেন। বৈঠকে কিছুক্ষণ আলোচনার পর আজাদুর রহমান আজাদ বললেন, তিনি আগামী তিন দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে দেবেন । এরপর তিনি ফোন ধরা বন্ধ করে দেন। কখনো ফোন ধরলেও বলতেন ওমুককে পাওয়া যাচ্ছে না, তমুক পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি এভাবেই সময় ক্ষেপন করতে থাকেন।
আমি তখন সিলেট চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্টসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ওপ্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগিতা চাই। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর কাছেও যাই। তাঁর কাছে সহযোগিতা চাই। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এরপর আমি নিরুপায় হয়ে লন্ডন ফিরে আসি।
এরপর ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আবার দেশে যাই। অনেক চেষ্টার পর যুবলীগ নেতা রাহাত তরফদারের সহযোগিতায় আজাদুর রহমান আজাদের সাথে দেখা করি। তিনি আগের মতোই সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বারবার সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। এরপর আবার চলে আসি।
গত ২ অক্টোবর (২০২২) আমি আবার দেশে যাই। যাওয়ার এক মাস পর যুবলীগ নেতা সাকিবের সহযোগিতায় আজাদুর রহমান আজাদের সঙ্গে দেখা করার আশ্বাস পাই । আমাকে রাত ১১টায় আজাদুর রহমান আজাদের টিলাগড়ের বাসায় যাওয়ার জন্য বলা হয়। রাত ১১টায় সেখানে গেলেও তাঁর সাথে দেখা করার জন্য তিন ঘণ্টা সময় টিলাগড়ে অপেক্ষা করতে হয়। অবশেষে রাত ২টায় তাঁর সঙ্গে আমার দেখা করার সুযোগ হয় । সেখানে আজাদুর রহমান আজাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দুই জন নেতা ছিলেন। আমার সঙ্গে আমার এলাকার দুই জন লোক ছিলেন। তাদেরকে রুমের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তখন আজাদুর রহমান আজদ আমাকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন, “মার্কেট কর্তৃপক্ষ আপনাকে দোকানের মালিকানা দেবে না। আপনি চাইলে আমি তাদের কাছ থেকে কিছু টাকা আদায় করে দিতে পারি। তখন আমি বলি আমার টাকার প্রয়োজন নেই। আমি আমার দোকানকোঠা চাই। তখন উপস্থিত যুবলীগের নেতারাও আমাকে আজাদুর রহমান আজাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার জন্য চাপ দেন। তারা বলেন, আপনি মেনে নিলে কিছু টাকা পেতেন। না মানলে তাও হারাবেন।
আমি রাজি না হলে আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, আপনি কাউকে বাদ রাখেননি। সকলের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়েছেন। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর কাছেও গিয়েছেন । এখন শুধু প্রধানমন্ত্রী বাকি আছেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউই এই সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। আমি সেখান থেকে ফিরে আসি।
এরপর আমাকে সিলেট-ছাড়া করতে মার্কেটের মালিকপক্ষ আমার পেছনে সিলেট শহরের একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসীচক্রকে লেলিয়ে দেন । এই সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় মার্কেট কর্তৃপক্ষ আরো প্রবাসীদের দোকানকোটা দখল করে রাখার অভিযোগ রয়েছে । তাদের দাপটে ভাড়াটিয়া ও ব্যবসায়ীরা সবসময় তটস্থ থাকেন । আমাকে অপরিচিত লোক দ্বারা টেলিফোনে হুমকি ধামকি দেয়া হয়। এছাড়া আমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারি কোন ব্যক্তি তদন্তে গেলে তাদেরকে ছোটবড় খাম ধরিয়ে বিদায় দেয়ারও তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
দোকানকোঠা নিয়ে চলমান সংকট নিরসনে আমি গত দুই বছরে তিনবার বাংলাদেশে গিয়েছি । তিন বারে বিমান টিকিট, যাতায়াত, থাকা-খাওয়া ও করোনার সময় কোয়ারিনটিন করা বাবদ প্রায় ২১ লাখ টাকা খরচ করেছি ।
তাছাড়া, ২০২১ সালের মে মাস থেকে অদ্যাবদি আমি আমার দোকানের কোনো ভাড়া পাচ্ছি না। ভাড়া বাবদ মাসে ২০ হাজার টাকা করে ২০ মাসে ৪ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। দেশে যাতায়াত ও দোকানের ভাড়াবাবদ সর্বসাকুল্যে ইতোমধ্যে আমার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ।

জাতির বিবেক সাংবাদিক ভায়েরা,
আমি আজ অসহায় হয়ে আপনাদের দরবারে হাজির হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, মিডিয়া জনগণের কথা বলে। মিডিয়া সত্যের কণ্ঠস্বর, সত্য উদঘাটন করে। আমি প্রবাসী হিসাবে দেশে একটি দোকানকোঠা ক্রয় করে যে ধরনের বিপদে পড়েছি, আমার ভরসা, আপনাদের নিজ নিজ মিডিয়ায় আমার সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য তুলে ধরলে সরকারের উপর মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ হবে এবং আমার সুবিচার ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ উন্মুক্ত হবে।

সবশেষে, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার আকুল আবেদন, আপনি নিজে প্রবাসে ছিলেন। প্রবাসীদের দুঃখ কষ্ট আপনি ভালো উপলব্ধি করতে পারেন। আপনার সরকার প্রবাসীবান্ধব। আপনি যদি আমাকে সাহায্য না করেন তাহলে আমার আর যাওয়ার কোনো জায়গা থাকবে না । কাউন্সিলার আজাদুর রহমান আজাদ ইতোমধ্যে বলে দিয়েছেন, আপনার সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কোনো উপায় নেই। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে দেশে কেউ বড় নয়। আমি খুবই আশাবাদী, তিনি আমার বিষয়টিতে দৃষ্টি দেবেন। আমার ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতিসহ কষ্টার্জিত অর্থে কেনা দোকানকোঠার মালিকানা ফিরিয়ে দিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

পরিশেষে, এতক্ষণ আমার কথাগুলো ধর্য্যসহকারে শোনার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছে। আপনারা ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফিজ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মফিক চৌধুরী ও মোহাম্মদ আব্দুল কাদির।


Spread the love

Leave a Reply