সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি: এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ

Spread the love

87460_leadবাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে আপিল বিভাগের চারজন বিচারপতি উপস্থিত হলে তাদের কাছে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে উঠা ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন প্রেসিডেন্ট।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ি প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জেষ্ঠ্যতম বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হল।
ছুটিভোগরত মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয় গত ১৩ই অক্টোবর বিদেশ গমনের প্রাক্কালে একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট হস্তান্তর করেন। উক্ত লিখিত বিবৃতিটি সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টিগোচর হইয়াছে। উক্ত লিখিত বিবৃতি বিভ্রান্তিমূলক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য নি¤œরূপ:

গত ৩০শে সেপ্টেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতি মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয় ব্যতীত আপিল বিভাগের অন্য ৫জন বিচারপতি মহোদয়গণবে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। মাননীয় বিচারপতি মো. ইমান আলী মহোদয় দেশের বাহিরে থাকায় উক্ত আমন্ত্রণে তিনি উপস্থিত থাকিতে পারেন নাই। অপর চারজন, অর্থাৎ মাননীয় বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, মাননীয় বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং মাননীয় বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার মহোদয়গণ মহামান্য রাষ্ট্রপতির সহিত সাক্ষাৎ করেন। দীর্ঘ আলোচনার এক পর্যায়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয়ের বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক  তথ্যাদি হস্তান্তর করেন।
তন্মধ্যে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্থলনসহ আরো সুনির্দিষ্ট গুরুত্বর অভিযোগ রহিয়াছে। ইতোমধ্যে মাননীয় বিচারপতি মো. ইমান আলী মহোদয় ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর ১লা অক্টোবর আপিল বিভাগের উল্লিখিত ৫ জন বিচারপতি মহোদয় এক বৈঠকে মিলিত হইয়া উক্ত ১১টি অভিযোগ (সংযুক্তিসহ) বিশদভাবে পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্ত উপনীত হন যে, ঐ সকল গুরুত্বর অভিযোগসমূহ মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয়কে অবহিত করা হবে। তিনি যদি ঐ সকল অভিযোগের ব্যাপারে কোন সন্তোষজনক জবাব বা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তাহা হইলে তাহার সঙ্গে বিচারালয়ে বসে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হইবে না। এই সিদ্ধান্তের পর ঐ দিনই বেলা সাড়ে ১১টায় মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয়ের অনুমতি লইয়া উল্লিখিত ৫ জন বিচারপতি মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের ১৯, হেয়ার রোড, রমনা, ঢাকা বাসাভবনে তাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া অভিযোগ সমূহ লইয়া বিশদভাবে আলোচনা করেন। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পরেও তাহার নিকট হইতে কোন প্রকার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর না পাইয়া আপিল বিভাগের উল্লেখিত মাননীয় ৫ জন বিচারপতি তাহাকে সুস্পষ্টভাবে জানাইয়া দেন যে ‘এমতাবস্তায়‘ উক্ত অভিযোগ সমূহের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাহার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসিয়া তাহাদের পক্ষে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব ইইবে না। এ পর্যায়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সুষ্পষ্টভাবে বলেন যে, সেক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করিবেন।
তবে এ ব্যাপারে পরের দিন অর্থাৎ ২রা অক্টোবর তিনি তাহার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাইবেন। অত:পর ২রা অক্টোবর তিনি উল্লেখিত মাননীয় বিচারপতিগণকে কোন কিছু অবহিত না করিয়াই মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট ১ (এক) মাসের ছুটির দরখাস্ত প্রদান করিলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন। তৎপ্রেক্ষিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ি প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জেষ্ঠ্যতম বিচারপতি, মাননীয় বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সেই পদের ও বিচার বিভাগের মর্যাদা সুমুন্নত রাখার স্বার্থে ইতোপূর্বে সুপ্রিম কোর্টের তরফ হইতে কোন প্রকার বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করা হয় নাই। কিন্তু উদ্ভুত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দির্শেক্রমে উপরি উক্ত বিবৃতি প্রদান করা হইল।


Spread the love

Leave a Reply