সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে যেসব ধারণা পরিবর্তন করা জরুরি

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ থেকে আংশিকভাবে দেখা গিয়েছে ২০১৯ সালের শেষ সূর্যগ্রহণ। এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার বেশ কিছু এলাকা থেকে এই সূর্যগ্রহণ দেখা গেলেও ইউরোপ বা আমেরিকায় রাত থাকায় দেখা যায়নি সূর্যগ্রহণ।

সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গাতেই নানারকম ‘ধারণা’ চালু রয়েছে।

ঢাকা বিশ্যবিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক নওরীন আহসান বলছেন, এসব ধারণার প্রায় সবগুলোই সম্পূর্ণ ভুল এবং এসবের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে এরকম কয়েকটি ‘ভুল ধারণা’ তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে:

১. রান্না করা, খাবার খাওয়া

এরকম একটি কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে যে, সূর্যগ্রহণের সময় কোনো ধরণের খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

অনেক জায়গায় এরকমও ধারণা রয়েছে যে সূর্যগ্রহণের সময় রান্না করা হলে সেটিও অমঙ্গলজনক।

কিন্তু এরকম ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বিজ্ঞানীরা কখনোই পাননি।

থাইল্যান্ডে সূর্যগ্রহণ
থাইল্যান্ডে সূর্যগ্রহণ

২. গর্ভবতী নারীদের বাইরে বের হওয়া

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী নারীরা ঘরের বাইরে বের হলে গর্ভের সন্তানের শরীরে বিশেষ ধরণের জন্মদাগ থাকতে পারে। এমনকি সন্তানের হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র থাকা বা বিকলঙ্গতা নিয়েও সন্তান জন্ম নিতে পারে।

তাই, ‘সংস্কার’ আছে, সূর্যগ্রহণের সময়ে গর্ভবতী নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না।

এই ধারণাও বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে অনেক আগেই।

পাকিস্তানে সূর্যগ্রহণের সময় দেখা যায় এরকম দৃশ্য
পাকিস্তানে সূর্যগ্রহণের সময় দেখা যায় এরকম দৃশ্য

৩. ভ্রমণ না করা

সূর্যগ্রহণ চলাকালীন ভ্রমণ করলে তা অমঙ্গলজনক – এমন একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে অনেক মানুষের মধ্যেই।

আরেকটি ধারণা রয়েছে যে, সূর্যগ্রহণের সময় ভ্রমণ করলে গ্রহণের সময় সূর্য থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর রশ্মি গায়ে লেগে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক নওরীন আহসান বলেন গ্রহণের সময় সূর্য থেকে আলাদা কোনো ক্ষতিকর রশ্মি নিঃসরণ হয় না, কাজেই আলাদাভাবে কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

৪. গ্রহণের পর গোসল করা

সূর্যগ্রহণের ফলে তথাকথিত যেসব ক্ষতিকর রশ্মি শরীরের সংষ্পর্শে আসে, সেসব রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করতে গ্রহণের শেষে গোসল করার উপদেশ দেয়া হয়ে থাকে কিছু ক্ষেত্রে।

এই ধারণাটিও সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক নওরীন আহসান।

“সাধারণ অবস্থায় সূর্যের রশ্মি গায়ে লাগলে যতটা ক্ষতি হোতো, সূর্যগ্রহণের সময় তার চেয়ে বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। কাজেই সূর্যগ্রহণের সময় যে আলাদাভাবে অতিরিক্ত ক্ষতি হবে, এই ধারণার কোনো ভিত্তি নেই।”

ভারতে বিভিন্ন এলাকায় শিশুদের সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য নানারকম আয়োজন করা হয়
ভারতে বিভিন্ন এলাকায় শিশুদের সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য নানারকম আয়োজন করা হয়

৫. বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে সূর্যগ্রহণ দেখা

সূর্যগ্রহণ দেখার ক্ষেত্রে চোখের সুরক্ষার জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার উপদেশ দেয়া হয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা নাসা খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখা থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দিয়েছে।

সামান্য সময়ের জন্যও খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখলে চোখের ক্ষতি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা।

তবে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক নওরীন আহসানের মতে, শুধু সূর্যগ্রহণের দিনই যে সূর্যের দিকে খালি চোখে তাকানো উচিত নয় – এমনটা নয়।

“সূর্যগ্রহণের দিন মানুষ সূর্যের দিকে খালি চোখে তাকায়, কারণ সেদিন সূর্যের প্রখরতা অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক কম থাকে। তাই মানুষের অনেকক্ষণ যাবৎ তাকিয়ে থাকার সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকে – যেটি ক্ষতির কারণ হতে পারে।”

“যে কোনো সাধারণ দিনে মানুষ সূর্যের দিকে কিছুক্ষণ তাকালেও চোখের ক্ষতি হবে। পার্থক্যটা হলো, সাধারণ দিনে মানুষ তাকায় না, সূর্যগ্রহণের সময় মানুষ তাকায়, তাই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়”, বলেন অধ্যাপক নওরীন আহসান।


Spread the love

Leave a Reply