২৭ বছর পর ঐতিহাসিক রায় : হিলসবোরো ট্রাজেডি “বেআইনী হত্যাকান্ড”

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্ক:

অবশেষে দীর্ঘ ২৭ বছর পর ন্যায় বিচার পেলেন নিহত ৯৬ লিভারপুল সমর্থক ও তাদের পরিবার। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম বড় ট্রাজেডি হিলসবোরো ট্রাজেডির ২৬ বছর পর কর্তৃপক্ষের ভুলের কথা জানালো যুক্তরাজ্য সরকার। মঙ্গলবার এক ঐতিহাসিক রায়ে ১৯৮৯ সালের মর্মান্তিক ওই ঘটনাকে “বেআইনী হত্যাকান্ড” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের একটি আদালত।

আদালতের রায়ে বলা হয়, সেদিন স্টেডিয়ামে ৯৬ জন মৃত্যু আসলে নিছক দুর্ঘটনা নয়। এর দায় আসলে কর্তৃপক্ষের। পুলিশের অব্যবস্থাপনাই এ হত্যাকান্ডের প্লট তৈরি করে।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে ওয়ারিংটনের আদালতে এমনটাই জানানো হয়। আদালত জানায়, ম্যাচ কমান্ডার সুপ্ট ডেভিড ডাকেনফিল্ড তার দায়িত্বে অবহেলা করেছিলেন এবং ভক্তদের কথা সঠিকভাবে চিন্তা করেনি।

বহু বছরের বিতর্কের নিষ্পত্তি হওয়া রায়ে সন্তোস প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, রায়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষনা এসেছে, সেদিন সমর্থকরা ছিলেন একেবারেই নির্দোশ।

 26-9

কি হয়েছিল হিলসবোরোতে?

১৯৮৯ সালের ১৫ এপ্রিলের ইংল্যান্ডের হিলসবোরো স্টেডিয়ামে এফএ কাপের সেমিফাইনাল ম্যাচ চলাকালীন ওই ঘটনায় ৯৬ জন নিহত হওয়া ছাড়াও আহত হয় ৭৬৬ জন। সেদিন লিভারপুল ও নটিংহ্যাম ফরেস্টের ম্যাচের নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে হিলসবোরো স্টেডিয়ামকো বেছে নেয়ায় এতগুলো মানুষকে বলি দিতে হয়েছিল।

অন্যসব বড় ম্যাচের মতোই দু’দলের বিপুল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে স্টেডিয়ামের গ্যালারী ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই লিভারপুল সমর্থকরা দল বেঁধে এগোতে শুরু করেন তাদের জন্য নির্ধারিত লেপলিংস লেন স্ট্যান্ডের দিকে। কিন্তু, এই স্ট্যান্ডে প্রবেশের একটি মাত্র পথ থাকায় ক্রমেই ভিড় বাড়তে থাকে। ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিশ।

এদিকে প্রিয় দলের ম্যাচ দেখতে প্রচুর মানুষ তখনও বাইরে দাঁড়িয়ে। ভিড় আর সামাল দিতে না পেরে ম্যাচের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা তার এক সহকর্মীকে নির্দেশ দিলেন আর একটি প্রবেশ পথ খুলে দিতে। অন্য সময় গুলোতে বন্ধই থাকতো এটা।

তবে সমস্যা হলো, এই পথ দিয়ে স্টেডিয়ামের যে অংশে যাওয়া যেত, গ্যালারির ঐ অংশগুলো পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল আগেই। কিন্তু, ঐ পথ দিয়ে যারা ভিতরে ঢুকছেন তাদের তো আর সেটা জানার কথা নয়!

পেছনের মানুষের চাপে ভিড়ের সামনের অংশ দ্রুূতই এগিয়ে গেলো আরো সামনে। আর মানুষের এই স্রোত পেছন থেকে ধাক্কা দিতে থাকলো লিভারপুলের সমর্থকে ভর্তি গ্যালারির ঐ অংশকে। ফলাফলটা হলো ভয়াবহ। নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকায় পেছনের চাপে চিড়ে-চ্যাপ্টা হতে থাকলো সামনের মানুষগুলো। একপর্যায়ে অবস্থাটা এমন দাঁড়াল যে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছু মানুষ উঠে যেতে চাইলেন উপরের গ্যালারিতে। কিন্তু, সেটাও যে মানুষে পরিপূর্ণ!

fব্যর্থ হয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনীর সাথে সেটিয়ে যেতে হলো তাদের। কিন্তু, পেছনে মানুষের ক্রমবর্ধমান চাপ থামার কোন লক্ষণ নেই। মানুষের এই প্রবল স্রোত সইতে না পেরে একপর্যায়ে ভেঙ্গেই গেল সামনের নিরাপত্তা বেষ্টনী। ম্যাচের তখন চলছে সাত মিনিট। পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ার মতোই একের পর এক রেডস সমর্থক পড়তে শুরু করলেন নিচে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হলো অনেকের।

অন্যদের জন্য অপেক্ষা করছিল আরো যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু। নিজ দলের সমর্থকদের পদদলিত হয়ে মারা গেলেন তারা। যারা বেঁচে গেলেন তাদেরও দীর্ঘদিন ভুগতে হলো অসহ্য যন্ত্রণায়। কয়েকদিন পরে জানা গেল, মোট ৯৬ জন লিভারপুল সমর্থককে প্রাণ হারাতে হয়েছে সেদিন। আর আহতের সংখ্যাটা ছিল ৭৬৬।

ক্রীড়াজগতের ইতিহাসে অন্যতম বেদনাদায়ক দিনটির ঘটনাগুলো ছিল এমনই। যেটি পরবর্তীকালে পরিচিতি পায় ‘হিলসবোরো ট্রাজেডি’ নামে। তবে এ ঘটনাকে মেনে নিতে পারেননি সারাবিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। হতাহতদের পরিবারগুলো দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ে অবতীর্ন হয়েছেন বিচারের আশায়। অবশেষে সেই ঘটনার ২৭ বছর পর দেয়া হলো রায়। স্বীকার করে নেয়া হলো কর্তৃপক্ষের ভূল।


Spread the love

Leave a Reply