৩০ জুলাই’র মধ্যে রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সকল অবৈধ স্থাপনা সরাতে রাগীবকে নোটিশ
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃরাগীব আলীকে তারাপুর চা বাগান থেকে রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সকল অবৈধ স্থাপনা সরাতে হবে আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে। রাগীব আলীর কাছে প্রেরিত নোটিশে এ সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সিলেটের জেলা প্রশাসন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে বলেন, তারাপুরের অবৈধ দখল ছাড়তে নোটিশ ছাড়াও পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। নোটিশ ও গণবিজ্ঞপ্তিতে সাড়া না দিলে জেলা প্রশাসন সরাসরি উচ্ছেদে নামবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, বুধবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর নোটিশ পাঠানো হয়। এর আগে ১৯ জানুয়ারি এক রায়ে ছয় মাসের মধ্যে তারাপুর চা বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ৬ মাসের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ।
১৭ জুলাই এ নির্দেশনার ৬ মাস শেষ হয়েছে। এ সময়সীমার মধ্যে তারাপুর চা বাগান ধ্বংস করে গড়ে ওঠা কোনো স্থাপনাই সরিয়ে নেয়া হয়নি। এ অবস্থায় ২০ জুলাই শিল্পপতি রাগীব আলীর মালিকানাধীন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দেন জেলা প্রশাসক। নোটিশে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে তারাপুর চা বাগান থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
তারাপুর চা বাগান দখল করে কথিত দানবীর রাগীব আলীর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ ৩৩৭টি স্থাপনা গড়ে ওঠেছে। ১৫ মে এ বাগানের ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গার মধ্যে স্থাপনা ছাড়া ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দখলকৃত চা বাগানের আংশিক জায়গা তাকে বুঝিয়ে দেয়া হলেও তাকে কোনো কাগজপত্র দেয়া হয়নি। অবশ্য দখলকারীদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির দুটি মামলা সচল হওয়ার পর তদন্তে তাদের অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে।
এক দশকেরও বেশি আগে দায়ের করা দুটি মামলার অভিযোগপত্রে রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে জালিয়াতি করে হাতিয়ে নেয়া চা বাগানটি এখনও পরোক্ষে রাগীব আলীর দখলেই রয়েছে।
১৯১৫ সালের ২ জুলাই তারাপুর চা বাগানের তৎকালীন মালিক বৈকুণ্ঠচন্দ্র গুপ্ত শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউ দেবতার নামে বাগানটি উৎসর্গ করেন। তখন থেকেই ৪২২.৯৬ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা তারাপুর বাগানটি পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। বৈকুণ্ঠচন্দ্র গুপ্তের পর তার ছেলে রাজেন্দ্র গুপ্ত এ দোবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত হন। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাগানটি ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাজেন্দ্র গুপ্ত ও তার তিন ছেলে শহীদ হন। তার তিন মেয়ে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে পাক সেনারা। পরবর্তীকালে পঙ্কজ কুমার গুপ্ত ভারত চলে গেলে ১৯৯০ সালে বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী। আদালতের রায়ে এ দখলকে প্রতারণামূলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।