ডিজিটাল যুগে প্রথম দেখায় প্রেম যেভাবে ঘটে

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃআমরা মূহুর্তের দেখায় মানুষকে বিচার করি- এবং আমাদের এই প্রথম দেখায় কারও সম্পর্কে যে ধারণা আমরা করি, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই সঙ্গে এটি আবার বিভ্রান্তিকরও বটে। কাজেই প্রথম দেখায় প্রেম বলে যে ব্যাপারটা, সেটা আসলেই কি সত্যিকারের প্রেম? আপনি যদি আপনার জীবনসঙ্গীর খোঁজে থাকেন, তাহলে যে বিষয়গুলো আপনার মনে রাখা উচিৎ:

প্রথম দেখার মূহুর্তে কোন কিছু সম্পর্কে আমাদের মনে যে ছাপ তৈরি হয়, সেটির বিজ্ঞান বেশ জটিল। আমাদের মন যখন কোন কিছু সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্ত নেয়, সেখানে এমন অনেক বিষয় আছে যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

এমন এক স্নায়বিক প্রক্রিয়া এক্ষেত্রে জড়িত, যা আমরা একেবারেই বুঝি না। অনেক ভুল ‘স্টিরিওটাইপ’ বা ‘গৎবাঁধা ধারণা’ এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। কোন কিছু সম্পর্কে আমাদের মনে ‘ফার্স্ট ইমপ্রেশন’ বা ‘প্রথম ছাপ’ কিভাবে তৈরি হয়, সেটা যদি আমরা বুঝতে পারি, তাহলে হয়তো আমরা আরও ভালোভাবে আমাদের পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে পারি।

কেউ আকর্ষণীয় কিনা, সেই সিদ্ধান্ত আমরা কিন্তু নেই চোখের পলকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমাদের এই বিচারটা নির্ভুল। আমরা যখন মূহুর্তের বিচারেই কিছু লোককে বাতিল করে দিচ্ছি, তাদের মধ্যেই হয়তো আমাদের উপযুক্ত কোন জীবনসঙ্গী থাকতে পারে।

নারী-পুরুষের কিসের ভিত্তিতে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়?
কাউকে যখন আমরা পছন্দ করি, সেখানে আমাদের পরিবেশ, ব্যক্তিত্ব এবং আবেগ- অনেক কিছুই কিন্তু এক সঙ্গে কাজ করে। কাজেই কারও ব্যাপারে আমাদের মধ্যে যখন প্রথম কোন ‘রোমান্টিক ফার্স্ট ইমপ্রেশন’ বা প্রেমবোধ জাগ্রত হয়, তখন আসলে কী ঘটে? আর আজকের ডিজিটাল যুগে নানারকমের যে ‘ডেটিং অ্যাপ’ বেরিয়েছে, সেটা কিভাবে মানুষের সঙ্গী বাছাইয়ের ব্যাপারটিকে প্রভাবিত করছে?

প্রথম ছাপ
কারও মুখ দেখে তার সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করতে আমাদের সময় লাগে এক সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ।

কারও সম্পর্কে আমাদের মনে এই প্রথম ছাপ কেবল মানুষটি কতটা আকর্ষণীয় সে সম্পর্কে নয়, তার চরিত্রের নানা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও কিছু অনুমান এর মধ্যে থাকে।

যেমন ধরা যাক, কেবল মাত্র কোন রাজনীতিকের চেহারা দেখেই যখন মানুষ তার যোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে, তার মধ্যে নির্বাচনে এই রাজনীতিকের সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটা, সেটাও থাকে। যদিও সেই রাজনীতিক আসলে কে, কী, তার কোন কিছুই মানুষের জানা নেই।

এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যেই কারও সম্পর্কে এরকম একটা ধারণা তৈরি করে ফেলা, আমরা বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু তা করছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে লোকটি সম্পর্কে আমাদের এই ধারণা সঠিক।

প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলেক্সান্ডার টডোরভ একটি বই লিখেছেন, যার শিরোণাম “ফেস ভ্যালু: দ্য ইরেসিস্টেবেল ইনফ্লুয়েন্স অব ফার্স্ট ইমপ্রেশন।” তাঁর মতে “প্রথম মূহুর্তে তৈরি হওয়া ধারণা ভুল হতে পারে।”

“একজন মানুষ সম্পর্কে অল্প দেখাতেই ধারণা তৈরি করার এই চেষ্টা আসলে হাস্যকর। কেবলমাত্র অপরিচিতদের সম্পর্কেই আমরা ফার্স্ট ইমপ্রেশন তৈরি করি। কাজেই এধারণা আসলেই একেবারে ভাসা ভাসা।”

কিন্তু আমাদের ধারণা ভুল বা সঠিক যাই হোক, আমরা খুব দ্রুতই এই সিদ্ধান্ত নেই এবং তা আমাদের মনে গেঁথে থাকে। ধরা যাক, এ সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ নয়, আরও অনেক লম্বা সময় ধরে আমরা কাউকে দেখলাম। কিন্তু তার পরও কিন্তু লোকটি কতটা আকর্ষণীয় সে সম্পর্কে প্রথম মূহুর্তে যে ধারণা আমাদের মনে তৈরি হয়েছিল, তা বদলানোর সম্ভাবনা কিন্তু কম।

এই যে কারও সম্পর্কে এক মূহুর্তের এই ছবি- তাতে লোকটির নানা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেক ধরণের অনুমান থাকে। কারও মুখ দেখে মানুষ মূহুর্তেই তিনটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়—১. মানুষটি কতটা আকর্ষণীয় ২. কতটা বিশ্বাসযোগ্য ৩. কতটা কর্তৃত্বপরায়ণ।

শারীরিক সৌন্দর্য পরস্পরকে পছন্দ করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ
মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস যদি আমরা দেখি, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মিলনের সঙ্গী খোঁজার সময় কেউ আকর্ষণীয় কিনা, সেই বিচার মানুষের পূর্বসুরীরাও করতো। বিশ্বাসযোগ্যতার বিচারের দরকার হয় তার সঙ্গে সামাজিক মেলা-মেশা সম্ভব কীনা, তা জানতে। আর কর্তৃত্বপরায়ন কীনা, সেই বিচার দরকার হয় সংঘাত এড়াতে।

অধ্যাপক টডোরভ বলছেন, কর্তৃত্বপরায়ণের মতো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মূলত পুরুষালী ভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফার্স্ট ইমপ্রেশন তৈরির বেলায় পুরুষ আর নারীকে সমানভাবে বিচার করা হয় না। কোন নারীর মধ্যে যখন পুরুষালী ভাব দেখা যায়, তখন সেটিকে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। অন্যদিকে পুরুষদের বেলায় পুরুষালী ভাবকে দেখা হবে ইতিবাচক দৃষ্টিতে। এটা যে শুরু পুরুষরা করবে তা নয়, নারীরাও একজন পুরুষালী ভঙ্গীর নারীর ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।

কারও চেহারা দেখে যে ধারণা তৈরি হয়, সেটি একেবারেই অগভীর বা ভাসা ভাসা, একেবারেই সাধারণ। এই ধারণা ভুলও হতে পারে।

একটা ডেটিং অ্যাপের কথা ধরা যাক। সেখানে যখন আমরা কারও ছবি দেখছি, তখন আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে ছবিটি কিভাবে তোলা হয়েছে সে বিষয়টিও।

যখন কারও চেহারা নিয়ে গবেষণা করা হয়, তখন কিন্তু একজনের মুখের বহু ধরণের ছবি ব্যবহার করা হয়। তারপর সেগুলোকে মিলিয়ে একটি গড়পড়তা ছবি তৈরি করা হয়, যেটি হয়তো দেখতে অনেকটা পাসপোর্টে ব্যবহৃত ছবির মতো। কিন্তু ডেটিং অ্যাপে কারও প্রোফাইলে গিয়ে এমন ছবি আপনি মোটেই দেখতে পাবেন না।

মানুষের ছবির কম্পোজিশন কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ধরা যাক, নীচু অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা পোর্ট্রেট দেখে মনে হবে লোকটি খুব কর্তৃত্বপরায়ণ। পুরুষদের বেলায় এমন ছবি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করবে, তবে নারীর বেলায় ধারণাটি হবে নেতিবাচক। আবার উঁচু অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা ছবির বেলায় আবার এর ঠিক উল্টো ব্যাপার ঘটবে।

যাই হোক, ডেটিং অ্যাপে নিজের প্রোফাইলে আমরা যে ছবি দেই, সেগুলো খুব সতর্কভাবে বাছাই করা যাতে করে আমাদের খুব ভালো দেখা যায়। শুধু আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের জন্য নয়, এই ছবির মাধ্যমে আমরা নিজেদের ব্যক্তিত্ব, সামাজিক অবস্থান এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যও তুলে ধরার চেষ্টা করি। যেমন অনেকে তাদের সমাজসেবামূলক কাজের ছবি ব্যবহার করেন।

কেমন সঙ্গী পছন্দ, খোলাখুলি সেই আলাপ অনেক বেশ কার্যকরী
তবে আপনি যতই সযত্নেই আপনার প্রোফাইলের ছবির গ্যালারি সাজান, এসব কিছুই ভেস্তে যেতে পারে শুধুমাত্র আপনার প্রোফাইলের আগে পরে কাদেরটা দেখা যাচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে। এটাকে বলে ‘সিকোয়েন্স ইফেক্ট।’

ডেটিং অ্যাপসে এই বিষয়টাকে বর্ণনা করা হয় ‘লাভ এট সেকেন্ড সাইট’ বা ‘দ্বিতীয় দেখায় প্রেম’ বলে।

ডেটিং অ্যাপে যখন সম্ভাব্য জীবনসঙ্গী হিসেবে আকর্ষণীয় প্রোফাইলগুলোর রেটিং করতে বলা হয়, তখন দেখা যায় আগের প্রোফাইলটিকে যদি আপনি আকর্ষণীয় বলে রেটিং দিয়ে থাকেন, এমন সম্ভাবনা প্রবল যে পরেরটি প্রোফাইলটিতেও আপনি তাই করবেন।

কাজেই কোন আকর্ষণীয় প্রোফাইলের পরেরটি যদি আকর্ষণীয় নাও হয়, সেটি আপনার কাছ থেকে ভালো রেটিং পেয়ে যেতে পারে। একইভাবে কেউ আকর্ষণীয় হওয়ার পরও আগের প্রোফাইল অনাকর্ষণীয় হওয়ায় ভালো রেটিং নাও পেতে পারে।

‘ফার্স্ট ইমপ্রেশন’ ব্যাপারটা ঘটে খুবই তাড়াতাড়ি, কিন্তু একটি খুবই অগভীর। আর যদি আরও ভালো তথ্য পেলে এটি পরিবর্তিতও হয়। যেমন আপনার সঙ্গী যখন কথা বলা শুরু করেন।

“দুজন মানুষ পরস্পরকে পছন্দ করবে কিনা তা জানার একটাই উপায়, তা হলো তাদেরকে কথা বলতে হবে। কথা না বলে পরস্পর সম্পর্কে মানুষ ভালো ধারণা পায় না,” বলছেন অধ্যাপক টডোরভ।

প্রথম কথোপকথন
অনলাইনে আমরা আমাদের সম্ভাব্য প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলি, তা নিয়ে এক গবেষণা চালানো হয়।

প্রথম ডেট এর পর দ্বিতীয়বার দুজনের মধ্যে আবার দেখা হবে কিনা তা জানার জন্য দুজনের কথাবার্তার নানা কৌশল গবেষকরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করেন- প্রথম যেভাবে তাদের আলাপ শুরু হয় তা থেকে প্রথম তাদের যেদিন সামনাসামনি দেখা হয় সে পর্যন্ত।

“প্রথম তারা যে কথা বলে আলাপ শুরু করে, তার ভিত্তিতে আমরা কোন পার্থক্য খুঁজে পাইনি। বেশিরভাগ লোক তাদের আলাপ শুরু করে ‘হাই’ বলে নির্দোষ ভঙ্গিতে। তারা শুরুতে যাই বলুক, তাতে তাদের সম্পর্কের চুড়ান্ত পরিণতি আলাদা কিছু হয়নি,” বলছেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির লিজেল শারাবি।

কোন অ্যাঙ্গেলে কার ছবি তোলা হচ্ছে, সেটাও কাউকে পছন্দের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে
“মানুষের সাড়া দেয়ার হার বেশ কম। কাজেই যখন আপনার মেসেজের কোন উত্তর আসে না, তখন আপনি আর কোন ব্যক্তিগত মেসেজ পাঠাতে চাইবেন না।”

“ডেটিং এ সচরাচর যেটা দেখা যায়, পুরুষরাই মেয়েদের প্রস্তাব দেয় এবং অনলাইন ডেটিং এর ক্ষেত্রেও আমরা এই একই ব্যাপারটাই দেখেছি। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে কথাবার্তার ক্ষেত্রে যে কৌশল নারী-পুরুষ নেয়, সেখানে আমরা খুব বেশি পার্থক্য দেখিনি। এখানে নারী আর পুরুষের মধ্যে অমিলের চেয়ে মিলই বেশি।”

সব মিলিয়ে গবেষকরা ১৮ ধরণের ডেটিং কৌশল দেখতে পেয়েছেন। যারা আলাপের প্রথম লাইনের পরই কার কেমন সঙ্গী পছন্দ সেই আলোচনায় গেছেন, দেখা গেছে তাদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে বেশি। নিজের সম্পদ বা সামাজিক মর্যাদা নিয়ে আলাপের চাইতে এটি অনেক বেশি কার্যকরী। সবচেয়ে কম কার্যকরী কথোপকথন ছিল অন্য মানুষের সঙ্গে ডেট করার অভিজ্ঞতা।

“অনেক সময় অনলাইন ডেটিং এর মাধ্যমে আপনি একজন সম্পর্কে নিজের মাথায় একটা ধারণা তৈরি করেন, যা পরে আপনার প্রত্যাশা পূরণ নাও করতে পারে। যখন আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য থাকে না, তখন আমরা লোকজন সম্পর্কে একটা কাল্পনিক ধারণা দাঁড় করাই”, বলছেন লিজেল শারাবি।

প্রথম সাক্ষাৎ
সঙ্গী হিসেবে একজন মানুষ কতটা আকর্ষণীয়, সেটা আমরা মূল্যায়ন করলাম। তারপর দুজনের মধ্যে যথেষ্ট কথাবার্তা হলো। এরপর দুজনের মধ্যে প্রথম সামনাসামনি দেখা-সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত হলো। তারপর কী? এরপর কিন্তু আমাদেরকে আরও জটিল কিছু বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।

সঙ্গী বাছাই এর জন্য এখন অনেকেই ডেটিং অ্যাপের ওপর নির্ভর করে
অনলাইন ডেটিং-এর একটা অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একে অন্যের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কি পারবে না সেটা বোঝার জন্য তারা যথেষ্ট দীর্ঘ সময় পায়।

ডেটিং অ্যাপে আমরা কার সঙ্গে ডেট করতে চাইবো তা মূলত নির্ভর করে দুটি বিষয়ের ওপর। প্রথমত আমরা ডেটিং অ্যাপে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি তাদের কাকে আমরা সঙ্গী হিসেবে কামনা করছি।

দ্বিতীয়ত নিজের সম্পর্কে আমাদের নিজের ধারণাটা কী। আমরা সাধারণত তাদের সঙ্গেই ডেট করতে চাই যাদেরকে আমরা শারীরিক সৌন্দর্য, জনপ্রিয়তা এবং আত্মমূল্যের বিচারে নিজের সমকক্ষ মনে করি।

নারী এবং পুরুষ, উভয়েই এই কৌশল নেয়। যারা নিজের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করেন, তারা হয়তো তাদের মতোই কাউকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে চাইবেন। কারণ তারা মনে করেন এক্ষেত্রে তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি।

কোন পরিবেশে কারও সাথে প্রথম দেখা হচ্ছে সেটাও সঙ্গী বাছাইয়ের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে
ডেটিং এর জন্য মানুষ কেমন সঙ্গী খুঁজছে, যখন সেটা বর্ণনা করতে বলা হয়, তখন দেখা যায় লোকজন আসলে বেশিরভাগ সময় তা ভুলভাবে বর্ণনা করে। যেমন, পুরুষরা বলে তারা বুদ্ধিমতী নারীর প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। কিন্তু বাস্তবে যখন তারা কোন বুদ্ধিদীপ্ত নারীর মুখোমুখি হয়, তারা কিন্তু অতটা আকর্ষণ বোধ করে না। হয়তো নিজেদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পুরুষদের নিরাপত্তাহীনতা এর একটা কারণ।

ডেটিং এর ক্ষেত্রে মানুষের আচরণ বোঝার একটা ভালো উপায় ‘স্পীড ডেটিং।’ কারণ বাস্তব জীবনে আমরা যেভাবে সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর দেখা পাই, স্পীড ডেটিং এর পরিবেশ অনেকটা সেরকমই। লস এঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার কারেন উ বলেন, “হয়তো কোন পানশালায় হঠাৎ কারও সঙ্গে আপনার দেখা হলো। নতুন কারও সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আপনি সাধারণত এক ঘন্টা সময়তো আর পান না।”

স্পীড ডেটিং এর বেলায় যখন কেউ একজনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বেশ খুশি বোধ করতে থাকেন, তখন তিনি কিন্তু পরের জনকে তিনি সম্ভাব্য সঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করবেন এমন সম্ভাবনা কমে যায়। এটাকে বলা হয় ‘কন্ট্রাস্ট ইফেক্ট।’ অর্থাৎ আমাদের মানসিকভাবে যে অবস্থায় আছি, তার উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখাতে থাকি।

এই ‘কন্ট্রাস্ট ইফেক্ট’ পুরুষদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। তবে এটা সবসময় আগের জনের প্রতি আগ্রহ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। স্পীড ডেটিং এর ঐ সন্ধ্যার শুরুতে একটা ইতিবাচক মুডে থাকলে তার প্রতিক্রিয়াও হবে একইরকম। অর্থাৎ একজনের সার্বিক মানসিক অবস্থারও একটা প্রভাব পড়ে কারও প্রতি আমরা আগ্রহী হবো কি হবো না তার ওপর।

আমরা সম্ভাব্য ডেটিং সঙ্গীর কোন ধরণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর গুরুত্ব দেব, সেটা নির্ভর করে আমরা কোন সংস্কৃতির মানুষ তার ওপর।

কারেন উ বলেন, “পশ্চিমা দেশগুলোতে মানুষ ‘নার্সিসিস্ট’ বা আত্মপ্রেমী মানুষের দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়। কারণ তারা বহির্মুখী এবং আত্মবিশ্বাসী সঙ্গী খোঁজে।”

দুজন নারী-পুরুষ যখন পরস্পরকে সমানভাবে পছন্দ করে, সেটাকে অলৌকিক ঘটনা বলে মনে হয়।
কারেন উ বলেন, এর বিপরীতে এশিয়ান-আমেরিকান সংস্কৃতিতে সহৃদয়তা বেশি গুরুত্ব পায়।

তবে শারীরিকভাবে কে কতটা আকর্ষণীয়, শেষ বিচারে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেটিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

দুজন নারী-পুরুষ, তারা দুজনেই পরস্পরের প্রতি সমানভাবে আকৃষ্ট, তারা যে পরস্পরকে খুঁজে পাচ্ছে, এটা একটা অলৌকিক ঘটনা বলে মনে হতে পারে।

কারণ এত রকমের জিনিস এই দুজনের পরস্পরকে পছন্দ করার পেছনে কাজ করেছে। প্রথম সাক্ষাতের আগে তাদের মধ্যে যে কথা হয়েছে, তাদের সেই সময়ের মুড, তাদের সাংস্কৃতিক পটভূমি, যে অ্যাঙ্গেলে তারা পরস্পরের দিকে তাকিয়েছে, নিজের সম্পর্কে তাদের ধারণা—এই সব কিছু এখানে ভূমিকা রেখেছে।


Spread the love

Leave a Reply