পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মস্কোবাসীর দৈনন্দিন জীবনের ওপর কী ধরণের প্রভাব ফেলছে?

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ মস্কোতে বসন্ত শুরু হয়েছে। গাছে কুঁড়ি ফুটছে প্রতিদিন ঝলমলে রোদ উঠছে। এরকম আবহাওয়ায় মস্কোবাসির যে উচ্ছ্বাস আনন্দ থাকার কথা সেটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মস্কোর সর্বত্র বইছে এক নীরবতার সুর।

মানুষের মধ্যে উদ্বেগ। শপিং সেন্টারে লোক সমাগম আগের চাইতে অনেক কম ।

গত কয়েক দিন রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা বিশ্বের আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) অথবা ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে মস্কোতে তেমন একটা প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। জীবন গতি স্বাভাবিকই চলছিলো । মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ তেমন লক্ষ্য করা যায়নি ।

কিন্তু বিশ্বের ব্যাংক লেনদেনের ব্যবস্থা ‘সুইফট’ থেকে একের পর এক রুশ ব্যাংককে বহিষ্কার করা শুরু হলে মস্কোবাসীর মধ্যে বিশেষ উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে।

কেবল অর্থনৈতিকভাবেই রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। সামাজিক, সাংস্কৃতিক নানাভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

রাশিয়া পৃথিবী থেকে যেন বিচ্ছিন্ন
এতো এতো নিষেধাজ্ঞা, যেন সারা পৃথিবী এক সাথে হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়াকে পৃথিবী থেকে যেন বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। একঘরে করে ফেলা হয়েছে।

স্যাংশন ব্যাপারটা আগে আমাদের বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে বহুল প্রচলিত ছিল। তবে সেটা স্যাংশন নামে ছিল না, ছিল – “একঘরে” বা “সমাজ বন্ধ” নামে। গ্রামের সমাজের মাতব্বরেরা বা মোড়লরা কাউকে কাউকে একঘরে করে রাখতো, নয়তো সমাজ বন্ধ করে রাখতো।

তার ফলে সে আর অন্যের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যেতে পারতো না। তার ব্যবসা বাণিজ্য ঠিক মতো চালাতে পারতো না। কেউ তার কাছ থেকে মালামাল ক্রয় করলে বা তাকে কেউ কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত করলে সেও সমাজ বন্ধের আওতায় পড়ে যেত।
আমাদের গ্রাম থেকে সেই ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে। ইউরোপ, আমেরিকার প্রভাবিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ জন ওই ব্যবস্থাকে অমানবিক বলেই চিহ্নিত করে এখন । কিন্তু প্রায় সেই একই ব্যবস্থা আমরা এখন দেখতে পাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে।

নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়া জর্জরিত
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পরে রাশিয়া এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে একঘরে, বা সমাজ বন্ধ। নানা রকম স্যাংশনে রাশিয়া জর্জরিত। এখন দেখার বিষয়, এই স্যাংশনে রাশিয়ার জীবনে কী প্রভাব পড়ছে বা পড়তে পারে এবং এই স্যাংশন তারা কিভাবে মোকাবিলা করবে।
শুরুতে বলে নেয়া ভাল, এই স্যাংশন রাশিয়ার জন্য নতুন কিছু নয়, তবে এবারকার স্যাংশন পূর্বের যেকোনো স্যাংশনের চাইতে ভিন্ন রকম।

এবারে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান অনেক কিছুই এবার স্যাংশনের আওতাভুক্ত। বলা যায় পুরো রাশিয়াকে পৃথিবী থেকে একঘরে করে ফেলা হয়েছে।
স্যাংশনের প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে রাশিয়ান জীবনে। হয়তো এর প্রভাব আরো সুদূর প্রসারিত হবে ।

গত সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞা আরোপের শুরুর দিকে মস্কোর সাধারণ মানুষ মনে করেছিল তাদের গচ্ছিত অর্থ ব্যাংক থেকে নাই হয়ে যাবে এবং একটি গুজব রটেছিল যে ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক করে সেই অর্থ ইউক্রেনীয়দের সাহায্যের জন্য পাঠানো হবে। তাই সকলের মধ্যে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক পরে যায়।
স্যাংশনের প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে রাশিয়ান জীবনে। হয়তো এর প্রভাব আরো সুদূর প্রসারিত হবে ।

গত সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞা আরোপের শুরুর দিকে মস্কোর সাধারণ মানুষ মনে করেছিল তাদের গচ্ছিত অর্থ ব্যাংক থেকে নাই হয়ে যাবে এবং একটি গুজব রটেছিল যে ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক করে সেই অর্থ ইউক্রেনীয়দের সাহায্যের জন্য পাঠানো হবে। তাই সকলের মধ্যে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক পরে যায়।

ভিসা আর মাস্টারকার্ড বন্ধ
অনেকে মনে করছে রুবল ইনকাম করার আর কোন মানে নাই। তবে রুবলের দরপতন ঠেকাতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নিয়েছে। ক্রেমলিন সব রাশিয়ানদের বিদেশে বৈদেশিক মুদ্রা স্থানান্তর নিষিদ্ধ করেছে এবং রপ্তানিকারকদের তাদের বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের ৪০% রুবলে বিনিময় করার নির্দেশ দিয়েছে।

এখানকার বহুল ব্যবহৃত ব্যাংক এসবিআরকেও স্যাংশন দেয়াতে সাধারণ মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েছিলো। তবে এখন মস্কোবাসী সেই আতঙ্ক কাটিয়ে উঠছে।

কিন্তু এর মধ্যে ভিসা আর মাস্টার কার্ড রাশিয়াতে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। রাশিয়াতে ভিসা বা মাস্টারকার্ড আর কার্যকর নেই। এখানে প্রায় সবাই কার্ডের মাধ্যমে ট্রানজেকশন করে।

তাই অনলাইনে কেনাকাটা, মানি ট্রান্সফার এমন কী বাজারের কেনাকাটাতে মস্কোবাসীর আরেক ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে।

এখানকার নিজস্ব ব্যাংকিং সিস্টেম “মির”-এর একাউন্ট করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তবে মির কার্ড কেবল রাশিয়াতেই কার্যকর।

অনেকে মনে করেছিল বাজারে খাদ্য দ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে এবং খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি দেখা দিবে। তাই অনেকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বেশি করে কিনে রাখতে দেখা গেছে। কিন্তু বাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম তেমন একটা বাড়েনি।

রাশিয়ার বেশ কয়েকটি বড় সুপারমার্কেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুগ্ধ এবং বেকারি পণ্য, চিনি এবং শাকসবজির দাম ৫% এর বেশি বাড়ানো যাবে না। তাই সুপারমার্কেটের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে তেমন কোন হেরফের হয়নি ।

কিন্তু আমি আশংকা করছি যেসব সবজি, মসলা চাল ডাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো সেগুলোর আমদানি হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে আমাদের বেশি দাম দিতে হবে।

অতীতের নিষেধাজ্ঞার পরে, দেশটি প্রধানত খাদ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন গড়ে তুলেছিল। তবে রাশিয়া এখনও প্রযুক্তি, ওষুধ এবং অন্যান্য আমদানির উপর নির্ভর করে।
আমদানি সরবরাহে ব্যাঘাত হলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কয়েক ডজন বা শত শত উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। আমদানিকৃত অনেক উপাদানই রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অনলাইন মার্কেট সার্চ করে দেখেছি ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম বেশ খানিকটা বাড়তি যেমন ফোন, কম্পিউটার, ক্যামেরা ইত্যাদি।

এই সপ্তায় একটি বিশেষ খবর হলো,এখানকার আন্তর্জাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাচ্ছে। যেমন ফ্যাশন ব্র্যান্ড এইচএন্ডএম, ইকিয়া ফার্নিচার, এ্যাপল, ফোর্ড, এ্যাডিডাস, ডিজনি, শেল-সহ অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।

কেএফসি আর ম্যাকডোনাল্ডস নিয়ে দুশ্চিন্তা
তাদের মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে নেবার আগে মূল্য হ্রাস বা সেল দেবার ফলে ক্রেতারা ছুটছে সেসব দোকানে। তবে ঘোষণার একদিনের মধ্যেই সমস্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে শপিংসেন্টার গুলো খানিকটা অন্ধকার হয়ে গেছে।

শোনা যাচ্ছে কেএফসি, ম্যাকডোনাল্ডস ও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যদি তা সত্য হয় তবে এটি এখানকার বিদেশি অথবা নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য খুব সমস্যা হয়ে যাবে।

কেননা ব্যস্ত শহরে ব্যস্ত মানুষের জন্য এই কেএফসি আর ম্যাকডোনাল্ডস অপরিহার্য। এখানকার রুশ তরুণ প্রজন্মের কাছেও বেশ জনপ্রিয়।

এছাড়া শেল, মার্সিডিজ-বেঞ্জ এর মত বিখ্যাত কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাচ্ছে যারা বছরের পর বছর ধরে রাশিয়াকে তেল, গ্যাস এবং গাড়ি উৎপাদনে সাহায্য করে আসছিল।

এগুলো হয়ত রাশিয়ার ভবিষ্যৎ অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে কিন্তু ছোট এবং তাৎক্ষনিক অনেক অসুবিধার মধ্যে একটি হলো, APPLE PAY এবং GOOGLE PAY রাশিয়াতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে – যেগুলি আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার তালিকায় একটি ব্যাঙ্ক দ্বারা পরিচালিত৷

রুশবাসী ভ্রমণপ্রিয় জাতি। গ্রীষ্মকাল ঘিরে সারা বছর তারা কাজ করে আর সামারের তিনমাস ছুটিতে পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে তারা ঘুরে বেড়ায়। সামনে সামার উপলক্ষে যে ভ্রমণের প্ল্যান এরা করেছিলো সেটা বাতিল করতে হচ্ছে।

রাশিয়ান বিমানগুলিকে আকাশপথ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরে AEROFLOT, রাশিয়ার জাতীয় বিমান সংস্থা, সকল আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বাতিল করেছে।

অনেকে অগ্রিম টিকেট করে রেখেছিলো। গত দুবছরে কোভিড মহামারিও রুশবাসীকে সামারে ঘরে বসিয়ে রাখতে পারেনি। এখন এই নিষেধাজ্ঞায় রুশবাসী নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কিভাবে করবে সেটা দেখার বিষয়।

অনেকে ভাবছেন, রাশিয়ান এয়ারলাইন্সের কর্মীদের আয় কোত্থেকে আসবে? যেহেতু তাদের কর্মস্থল অকেজো হয়ে পড়েছে।

প্রবীণ আর নবীনদের মাঝে পার্থক্য
বোঝাই যাচ্ছে এক নতুন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে রাশিয়া।

তবে এত এত নিষেধাজ্ঞার পরে মস্কোবাসীর বা রাশিয়ানদের যতটা উদ্বিগ্ন হবার কথা ছিল ততটা উদ্বেগ প্রবীণদের মাঝে আমি লক্ষ্য করছি না। সুপারমার্কেটে এক বয়স্ক ভদ্রলোকের সাথে কথা হচ্ছিল।

তিনি বলছিলেন, ‘এসব আমাদের জানা। আমেরিকানদের আক্রোশ আমাদের প্রতি নতুন কিছু নয়।’

তবে আমার কাছে মনে হয়েছে এখানে প্রবীণ এবং নবীন প্রজন্মের মধ্যে চিন্তায় তুমুল পার্থক্য আছে। প্রাচীনপন্থীরা অন্য বিশ্বে কী হচ্ছে সে বিষয় নিয়ে এদের তেমন মাথা ব্যথা নাই।

সাংস্কৃতিক আর ক্রীড়া জগতে নিষেধাজ্ঞা
এখানকার অধিকাংশ মানুষ ইংরেজি ভাষা জানে না যার ফলে বহির্বিশ্বে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে জানার সুযোগ তাদের কম। কিন্তু এখানকার যারা ইংরেজি জানে বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম, তারা অনেকেই শুরু থেকেই এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।

তারা মনে করে এই স্যাংশনের কারণে তারা যে কেবল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে কেবল সেটা নয়, বরং সামাজিক কারণও আছে। অন্য পৃথিবীর মানুষের কাছে এটি তাদের সামাজিক লজ্জা হিসেবে তারা বিবেচনা করছে।

আমার জানা এক রুশ কন্যা মাশা। একজন থিয়েটার আর্টিস্ট এবং আন্তর্জাতিক নাট্যাঙ্গণে সে যুক্ত। সে হতাশার সুরে বলছিল- “আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সে আর থিয়েটার করতে পারবে না। একজন রুশ হিসেবে এখন সে বিদেশি বন্ধুদের সাথে কথা বলতে লজ্জা বোধ করছে ইউক্রেনে আক্রমণের কারণে”।

আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও তাদের নিজস্ব বিধিনিষেধ আরোপ করেছে রাশিয়ার ওপর। ডিজনি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স এবং প্যারামাউন্ট রাশিয়ার চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি বন্ধ করে দিয়েছে ইতিমধ্যে।

নিষেধাজ্ঞা নিয়ে লজ্জা
এমনকি কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবং ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতা উভয়ই এই বসন্তে পারফর্ম করা থেকে রাশিয়ান প্রতিনিধিদের প্রত্যাখ্যান করেছে। অনেক রাশিয়ান এই বিষয়টি তাদের জন্য খুবই লজ্জার এবং অপমান হিসেবেই ভাবছে।

রুশ ক্রীড়াবিদদের সকল আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবং প্রতিযোগিতা বাতিল করা হয়েছে, শিল্পী এবং দলগুলির সফর, সাংস্কৃতিক এবং বৈজ্ঞানিক যোগাযোগের প্রোগ্রামগুলি বাতিল করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মিথস্ক্রিয়ার জায়গায় গড়ে ওঠা হাজার হাজার ক্যারিয়ার আজকে ভেঙে পড়ার আশংকা তারা করছে, তারা মনে করে অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মিথস্ক্রিয়ার যে জায়গা তৈরি হয়েছিল, সেটি পুনরুদ্ধারের আর কোনো সুযোগ থাকবে না।

আসলে এখানকার যারা আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করেন, ব্যবসা, খেলাধুলা, শিক্ষকতা, থিয়েটার, নাচ, চিত্রকলা, সিনেমার সাথে যারা যুক্ত তারা এই স্যাংশনে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই শঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন।

আবার এমন অনেকই বলছে যে, তারা স্যাংশন নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় বরং তারা উদ্বিগ্ন ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে।

এখানে মস্কোতে বাংলাদেশি এডওয়ার্ড দীপ নামে একজন ব্রিটিশ লুসিয়াস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি বলছিলেন – ‘তাদের স্কুল নিয়ে তারা শঙ্কিত কারণ তাদের প্রশ্নপত্র কিভাবে আসবে তা তারা এখনো নিশ্চিত নয় এবং ছাত্রদের অভিভাবকরা মস্কোতে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ‘।

উদ্বেগ আর আশাবাদ
আমার এক রাশিয়ান বন্ধু ভিক্টর এর সাথে কথা হচ্ছিল সে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিরক্ত। তাকে খুব বেসামাল মনে হচ্ছিল। এবং সে বলছিল ‘সে একটি ঔষধ খায় যেটা তাকে দীর্ঘদিন খেতে হবে সেই ঔষধ আসে জার্মান থেকে, ভবিষ্যতে সে কিভাবে এটি পাবে জানে না।।’ ভিক্টর আরো বলছিল, ‘এখানে অনেক ঔষধই তৈরি হয় না, যে কারণে তাদের আমদানি করতে হয়।

আমার ডর্মেটরিতে এক আলজেরিয়ার বন্ধু আছে। সে এখানে একটি ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তার পড়াশুনার খরচ চালায়। সে চাকরি হারানোর ভয়ে শঙ্কিত এবং সে বলছিল ‘চাকরিটি হারালে সে আর পড়াশোনা করতে পারবে না’।

এরকম নানা উদ্বেগ আমি লক্ষ্য করছি অনেকের মাঝে, আবার এর বিপরীতেও কথা বলছে অনেকে ।

এখানের প্রাচীনপন্থীদের ধারণা ইউরোপ আমেরিকা তাদের পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই এই স্যাংশন দিয়েছে এবং এতে তারা বিচলিত নয় এবং তারা মনে করে এতে রুশ জাতি এই কারণে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হবে এবং নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াবার পথ খুঁজে পাবে।

অনেকে মনে করে, রাশিয়ার উপর পশ্চিমাদের এই নিষেধাজ্ঞার চাপ ব্যাপারটি বেআইনি, এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।

এখানে অনেকেই মনে করে ভ্লাদিমির পুতিনের অধীনে দুই দশক ধরে, রাশিয়ানরা পুঁজিবাদ এবং বিশ্বায়নের আশীর্বাদে জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, সস্তা ফ্লাইট, সাশ্রয়ী মূল্যের বন্ধকী, আমদানি করা গ্যাজেট এবং সস্তা গাড়ি, প্রায় সবাই গাড়ির মালিক হয়েছে।

আধুনিক জীবনের সেই সুবিধাগুলি হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যাবে বলেই রুশবাসীর অনেকে আতংকিত। ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণের প্রতিশোধ হিসাবে পশ্চিমাদের দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলি রাশিয়ার আর্থিক ব্যবস্থার ভিত্তিকে বিপর্যস্ত করে দেবে বলে তারা মনে করছে।

অনেকে হতাশ হয়ে মনে করছে রাশিয়ানদের ক্রমবর্ধমান, বিশ্বব্যাপী সংযুক্ত অর্থনীতি আবারো থেমে গিয়ে বিশ্ব থেকে ক্রমবর্ধমানভাবে আনপ্লাগড বা বিচ্যুত ।

আবার অনেকে এই হতাশা থেকে শক্তি খুঁজে পায়, তারা মনে করছে এই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক জগৎ তৈরি করতে সাহায্য করবে। যা রাশিয়ান অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করবে।

এখন দেখার বিষয়, এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ানরা কেমন করে সামাল দেয়।


Spread the love

Leave a Reply