ফ্রান্সে যেভাবে বৈধ হবেন …
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ ২৮ নভেম্বর ২০১২ তারিখে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জনাব ম্যানুয়েল ভালস একটি বিজ্ঞপ্তি (Circulaire) প্রকাশের মাধ্যমে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৈধতা দেয়ার ঘোষনা দেন। পরবর্তীতে এই পর্যন্ত অনেকেই এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বৈধ হয়েছেন। যারা হন নি তারা সুযোগ হেলায় হারাবেন না, যেহেতু সুযোগ বারবার আসে না। কারণ বর্তমান সোশ্যালিষ্ট সরকার যদি পরবর্তীতে ক্ষমতায় না আসতে পারে (বিভিন্ন জরিপ অনুসারে আসার সম্ভাবনা নেই), তাহলে এই বিজ্ঞপ্তি অকার্য্যকর ঘোষনা করার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। এই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে বৈধ হওয়ার প্রধান দুটি শর্ত নিম্নরুপঃ
১) স্কুলগামী বাচ্চাদের পিতামাতাঃ
যে পরিবার স্হায়ীভাবে ফ্রান্সে কমপক্ষে ৫ (পাঁচ) বছর যাবৎ বসবাস করছেন এবং আবেদন জমা দেয়ার তারিখে উক্ত পরিবারের অন্তত একজন সন্তান কমপক্ষে ৩ (তিন) বছর যাবৎ শিশু-বিদ্যালয় (Ecole maternelle) সহ যেকোন স্কুলে এখনো লেখাপড়া করছে, সেক্ষেত্রে পিতামাতার যেকোন একজন অথবা দুজনই অন্যান্য শর্ত পুরণ সাপেক্ষে একটি অস্হায়ী বসবাসের কার্ড (Titre de séjour) পাওয়ার অধিকার রাখেন, যাতে Vie privée et familiale অর্থাৎ “ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবন” কথাটি উল্লেখ থাকবে।
২) চাকুরীর মাধ্যমেঃ
– ফ্রান্সে কমপক্ষে ৭ (সাত) বছর যাবৎ প্রকৃত অর্থে উপস্হিত আছেন এবং গত ৩ (তিন) বছরে ধারাবাহিক অথবা অধারাবাহিক ভাবে ১২ (বার) মাস কাজ করেছেন, তাদের কোন চাকুরীর কন্ট্রাক্ট অথবা চাকুরীর প্রতিশ্রুতী (Promesse d’embauche) দেয়ার দরকার নেই। আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে একবার নবায়নযোগ্য ৪ (চার) মাস মেয়াদী একটি রিসিপিসি দেয়া হবে চাকুরী খোঁজার জন্যে যাতে কাজের অনুমতি থাকবে এবং যার উপর Salarié অথবা “চাকুরীজীবি” কথাটি উল্লেখ থাকবে এবং এই সময় অর্থাৎ ৪ x ২ = ৮ মাসের মধ্যে কাজ পেয়ে গেলে কার্ড দেয়া হবে, তবে ১ বছরের বেশি মেয়াদের নয়। সাবধান! অনেকেই রিসিপিসি পাওয়ার খুশীতে লাফাতে থাকেন এবং চাকুরী অথবা কার্ড এর জন্য চেষ্টা করেন না এবং এরা ৮ মাস পর আবার অবৈধ হয়ে যান। আমার জানামতে এরকম ১ জন বাংলাদেশী ভাই ‘প্যাকেজিং সিস্টেম’ এর আওতায় এখন বাংলাদেশে অবস্হান করছেন।
– ফ্রান্সে কমপক্ষে ৫ (পাঁচ) বছর যাবৎ প্রকৃত অর্থে উপস্হিত আছেন এবং (১) গত ২৪ মাসে ধারাবাহিক বা অধারাবাহিক ভাবে ৮ (আট) মাস কাজ করেছেন, অথবা (২) গত ৫ বছরে ধারাবাহিক বা অধারাবাহিক ভাবে ৩০ (ত্রিশ) মাস কাজ করেছেন। এক্ষেত্রে আপনাকে একটি চাকুরীর কন্ট্রাক্ট অথবা চাকুরীর প্রতিশ্রুতী (Promesse d’embauche*) জমা দিতে হবে এবং আরো কিছু শর্ত পুরণ করতে হবে। ১২ (বার) মাসের সমান অথবা অধিককাল স্হায়ী চাকুরীর কন্ট্রাক্ট যারা জমা দিবেন তাদের অস্হায়ী বসবাসের কার্ড (Titre de séjour) এ Salarié অথবা চাকুরীজীবি কথাটি উল্লেখ থাকবে এবং ১২ (বার) মাসের কম মেয়াদের কন্ট্রাক্ট এর ক্ষেত্রে Travailleur Temporaire অথবা অস্থায়ী কর্মী কথাটি উল্লেখ থাকবে।
– ফ্রান্সে কমপক্ষে ৩ (তিন) বছর যাবৎ স্হায়ীভাবে বসবাস করছেন এবং ২৪ (চব্বিশ) মাস চাকুরী করছেন, যার মধ্যে গত ১২ মাসে ধারাবাহিক বা অধারাবাহিক ভাবে ৮ (আট) মাস। এক্ষেত্রেও আপনাকে একটি চাকুরীর কন্ট্রাক্ট অথবা চাকুরীর প্রতিশ্রুতী (Promesse d’embauche*) জমা দিতে হবে এবং আরো কিছু শর্ত পুরণ করতে হবে। ১২ (বার) মাসের সমান অথবা অধিককাল স্হায়ী চাকুরীর কন্ট্রাক্ট যারা জমা দিবেন তাদের অস্হায়ী বসবাসের কার্ড (Titre de séjour) এ Salarié অথবা “চাকুরীজীবি” কথাটি উল্লেখ থাকবে এবং ১২ (বার) মাসের কম মেয়াদের কন্ট্রাক্ট এর ক্ষেত্রে Travailleur Temporaire অথবা “অস্থায়ী কর্মী” কথাটি উল্লেখ থাকবে ।
* বিজ্ঞপ্তিটি জারী হওয়ার সময় CERFA ফর্ম নং ১৩৬৫৩*০৩ চাওয়া হলেও বর্তমানে ফর্ম নং ১৫১৮৬*০১ জমা দিতে বলা হচ্ছে।
চাকুরীর সময় এবং বেতন SMIC এর সমপরিমান হতে হবে এবং এজন্য আবেদনকারী একাধিক চাকুরীর কন্ট্রাক্টও জমা দিতে পারেন। অন্যান্য শর্তাবলীর মধ্যে গুরুত্বপুর্ণ হচ্ছে, ফরাসী ভাষা মোটামুটি জানা অর্থাৎ প্রিফেকচারের অফিসার এর নিকট আপনার আগমনের কারণ মৌখিকভাবে বলতে পারা, যে প্রিফেকচারে কাগজ জমা দিবেন ওই ডিপার্টমেন্ট এর বাসিন্দা হতে হবে ইত্যাদি।
চাকুরীদাতা পরিবর্তনও গ্রহণযোগ্য, তবে শর্ত হচ্ছে নতুন চাকুরীদাতাকে চাকুরীর অনুমতির জন্য আবেদন করতে হবে এবং প্রথম চাকুরীর বেতনের শর্তাবলী পালন করতে হবে।
উপরোক্ত শর্তাবলী পুরোপুরি পূরণ না করে কাগজ জমা দিয়ে অনেকে বৈধ হয়েছেন, আবার একই কাগজ জমা দিয়ে অনেকে দেশ ছাড়ার নোটিশ বা ‘সর্তী’ পেয়েছেন। সবই ভাগ্য! ফাইলে কোন কাগজের অভাবে, যেমনঃ চাকুরীর কন্ট্রাক্ট অথবা ট্যাক্সের কাগজ (Avis d’impôt), অনেকে নির্ধারিত সময় চাকুরী করার পরও প্রত্যাখ্যান পত্রের সাথে দেশ ছাড়ার নোটিশ পেয়েছেন। সাবধান! দেশ ছাড়ার নোটিশ মানে মামুজানের হাতে ধরা পড়লে ‘প্যাকেজিং সিস্টেম’, এবং এই সিস্টেমে কিছু বাংলাদেশী ভাই অনিচ্ছাসত্ত্বেও এখন দেশে আত্নীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সহিত পরম সুখে দিন কাটালেও মাঝে মাঝে ফোন করে ফ্রান্সে পুনরায় ফিরে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।