TOEIC মামলাঃ হেরে গেল হোম অফিস , ক্ষতিপুরন পাবে শিক্ষার্থীরা

Spread the love

কে এম মফিজুর রহমান :

ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্ট (  TOEIC – ETS    ) মামলায় হেরে গেল হোম অফিস । ফিরে পাচ্ছেন সার্টিফিকেট জালিয়াতির কারনে প্রত্যাখিত স্টুডেন্টরা ভিসা অধিকার । যথাযত প্রমাণ ছাড়া ভিসা প্রত্যাখিত করে অর্ধ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো  সম্পূর্ন  অন্যায় এবং এ সংক্রান্ত কোন প্রমাণ হোম অফিস দেখাতে না পারায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে রায় প্রদান করে আদালত । এর ফলে পূর্ন অধিকার ফিরে পাচ্ছেন ভিসা প্রত্যাখিত হওয়া অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থী ।এছারা জালিয়াতির কারন দেখিয়ে যাদের কে বিতারিত করা হয়েছে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও উদ্যোগ গ্রহন এবং এসকল স্টুডেন্টরা  কতি পুরন দাবী করে  ক্লেইম করতে পারবে । বুধবার বাংগালী ছাত্র মজুমদারের দায়ের করা আপ্যিল মামলায় আপার ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট বিচারক ম্যাক ক্লস্কি এন্ড ডেপুটি আপার ট্রাইব্যুনাল জাজ সাইনি এ রায় প্রদান করেন ।  একই সাথে  পার্লামেন্টারিয়ান বিতর্কেও মুখোমুখি হতে হচ্ছে তেরেসা মে কে । এবং স্টুডেন্ট সংক্রান্ত আরও কিছু আইনের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে  । আগামী সেপ্টেম্বর থেকে স্টুডেন্টরা টিয়ার- ২ তে মাইগ্রান্ট করতে পারবে  ।

উড়ো খবরের ভিত্তিতে ব্রিটেন থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বহিস্কারের ঘটনায় হোম সেক্রেটারী থেরেসা মে কে একটি সংসদীয় তদন্তের মুখোমুখী হতে হচ্ছে। এ বিষয়ক ট্রাইব্যুনালের তদন্তে দেখা গেছে আপিল করা দুই শিক্ষার্থীর ইংরেজী ভাষাগত দক্ষতা পরীক্ষার সত্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে হোম অফিস যথপোযুক্ত প্রমান ছাড়াই তাদের বিতারিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ‌’উড়ো খবর’ কে প্রমান হিসেবে আমলে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে একই অভিযোগে বহিস্কৃত হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে অবিচার করা হয়েছে। তাই বিষয়টি পুন:তদন্তে একটি সংসদীয় কমিটি গঠনের রুল জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল। এ রুলের মাধ্যমে বহিস্কৃত কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ব্রিটেনে ফেরত আসার পথ সুগম হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী স্টুডেন্ট ভিসা পেতে কিংবা ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদনকারীদের অন্যান্য শর্তাবলী পুরণের পাশাপাশি ইংরেজী ভাষায় প্রয়োজনীয় দক্ষতা প্রমান করতে হয়। স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে কলেজ ও ইউনিভার্সিটি ভেদে ল্যাংগুয়েজ রিকোয়ারমেন্টের তারতম্য দেখা যায়। ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন বোর্ড বা প্রতিষ্ঠান/ইন্সস্টিটিউট থেকে বিভিন্ন ধরনের ইংরেজি কোর্স সম্পন্ন করে অথবা প্রয়োজনীয় স্কোর অর্জনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ল্যাংগুয়েজ রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করে থাকে।

তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গ্রহনযোগ্য কোর্সটি হলো- টি.ও.ই.আই.সি (টেস্ট অব ইংলিশ ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশনস)। আন্তর্জাতিক পরিবেশে কারো ইংরেজির ভাষার উপর দক্ষতা যাচাইয়ের সবচেয়ে গ্রহযোগ্য এ কোর্সটি সম্পন্ন করে থাকে ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত মার্কিন প্রতিষ্ঠান ই.টি.এস (এডুকেশনাল টেস্টিং সার্ভিস)।

কিন্তু ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি প্রচারিত প্যানারামাতে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখানো হয় যে, আবেদনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা জালিয়াতি করে প্রক্সি-টেকার দিয়ে স্পিকিং টেস্টের মাধ্যমে সার্টিফিকেট নিচ্ছে।এদের অনেকেরই ইংরেজি ভাষাজ্ঞান খুবই দুর্বল অথবা ইংরেজি একবারেই বলতে পারেননা। এধরনের আবেদনকারীর পরিবর্তে অন্য এক ব্যক্তি শত শত, এমনকি হাজার হাজার প্রার্থীর প্রক্সি স্পিকিং টেস্ট দিয়ে দিচ্ছে পাঁচ’শ থেকে হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে। এমনকি লিখিত পরীক্ষাতেও ঘটছে এমন জালিয়াতি।

ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর পর হোম অফিস থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর খড়গ নেমে আসে। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রাইভেট এডুকেশনাল টেস্টিং এন্ড এসেসমেন্ট সংস্থা ইটিএস ছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিল করে হোম অফিস।

সনদ জাতিয়াতির অভিযোগ এনে প্রায় অর্ধলক্ষাধীক শিক্ষার্থীর ভিসা আবেদন কিংবা ভিসা বাতিল করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তবে অনেকটা হুট করে প্রয়োজনীয় যাচাই বাচাই ছাড়াই গণহারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে সমস্যায় পড়েন অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীও। অনেককে মাসের পর মাস বন্দি থাকতে হয়েছে ডিটেনসন সেন্টারে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

এর মধ্যে বিদেশী দুই শিক্ষার্থী হোম অফিসের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। এর প্রেক্ষিতে ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন বিষয়ক উচ্চ ট্রাইব্যুনাল বুধবার তাদের রায়ে বলেন, আপিলকারী দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃত প্রতারণা’র অভিযোগ প্রমানে ব্যর্থ হয়েছে হোম অফিস।

একজন আপিলকারীর আইনজীবী আতিফ লতিফ ওয়াট্টো বলেন, আমি প্রায় শতাধীক অভিযোগ যাচাই করে দেখেছি যাদের ব্রিটেন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে অথবা দিনের পর দিন বন্দি থাকতে হয়েছে কারন শুধুমাত্র এই যে তারা ইটিএস থেকে কোর্স সম্পন্ন করেছিলেন।

ঠিক কতজন শিক্ষার্থীকে ইটিএস কোর্সের বলি হতে হয়েছে তা সঠিক জানা না গেলেও হোম অফিস বলছে অন্তত ৩০ হাজার আবেদনকারীর স্কোর ছিলো সন্দেহজনক।

অভিযোগ ওঠার পর আবেদনকারীদের যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাছিলো এক কথায় অমানবিক। শুধু নতুন আবেদনকারী নয় বরং অতীতে কোন সময়েও যদি টিওইআইসি সনদ দিয়ে কোন ধরনের লীভ টু রিমেইন  পেয়ে থাকে অথবা সনদের জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন বা পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেট নিয়েছেন কিন্তু আবেদনের সাথে তা জমা দেননি বা কখনও ঐ সার্টিফিকেট ব্যবহারই করেননি তাদের আবেদনও প্রত্যাখ্যান করে রিমোভাল ডাইরেকশন দিয়ে দেশে পাঠাবার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনটাও ঘটেছে যে পাঁচ-ছয় বছর আগে সনদ দিয়ে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছেন এরপর দুই-তিনবার অন্যান্য স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের সার্টিকেটই দিয়ে লীভ টু রিমেইন   বাড়িয়ে ব্রিটিশ নাগরিককে বিয়ের মাধ্যমে পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পেয়েছে, এবং পরে বেড়াতে গিয়ে আসার সময় এয়ারপোর্টে আটকে দেয়া হয়েছে অতীতে টিওইআইসি সনদ ব্যবহার করার কারণে।

অনেককে হঠাৎ রেইড দিয়ে বাসা থেকে ধরে কোন ইন-কান্ট্রি আপীল রাইট না দিয়েই দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ইন-কান্ট্রি আপীল রাইট না থাকার কারণে এসব ছাত্র-ছাত্রীরা মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন। তারা হোম অফিসের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তকে কোর্টে চ্যালেঞ্জ করতে পারেননি।দেশেফেরতগেলেওমাথায়নিতেহয়েছেমিথ্যাবাদীকিংবাজালিয়াতেরতকমা।

অবস্থা এমন যে তারা শিক্ষার্থী নন, কোনো ক্রিমিনাল। অথচ যে প্রতিষ্ঠানের সনদ নিয়ে এতো হৈ চৈ তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো অ্যাকশন নেয়া হয়নি। হোম অফিস কর্তৃক সুপারিশকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করায়দায় যেন সব শিক্ষার্থীর।

হোম অফিসের এ পদক্ষেপকে “একটি বিধ্বংসী রায়” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন কমন্স হোম অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান কেইথ ভাজ। তিনি বলেন, নিখুঁত ইংরেজী জানা সত্বেও এবং কোনো আইন না ভেঙেও অনেকে যুক্তরাজ্যে বসবাসের অধিকার হারিয়েছেন। তুচ্ছ কারণে ট্যাক্স পরিশোধকারীকে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়েছে বিভিন্ন কোর্ট-ট্রাইব্যুনালে।

তিনি আরও বলেন, কমন সেন্স জাগ্রত করতে হবে এবং হোম অফিসকে প্রতিটি কেস আলাদাভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। কমিটিকে অধিকতর তদন্ত করে দেখতে হবে।

তবে ট্রাইব্যুনালের রুল জারিতে অনেকটা হতাশা প্রকাশ করে হোম অফিসের এক মুখপাত্র বলেন, আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ব্যবস্থার সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে এবং ইমিগ্রেশন সিস্টেমের অপব্যবহার রোধে সরকার বদ্ধ পরিকর। ইরেজী ভাষার দক্ষতা পরিক্ষায় ২০১৪ সালে ব্যাপক পরিসরে পরিকল্পিত জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়েছিল। ট্রাইব্যুনালের রায়ে আমরা হতাশ এবং রায়ের পূর্নাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। এর পর আপিল করাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নেয়া হবে। এই মুহূর্তে এর বেশী মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।তবে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও ইটিএস’র পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


Spread the love

Leave a Reply