বৃদ্ধ বয়সে বাবা হওয়ার ঝুঁকি কী কী
ডেস্ক রিপোর্টঃ বাবা হওয়ার বয়স দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে পুরুষের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুব বেশি বেড়ে যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে কিংবদন্তির বলিউড তারকা আল পাচিনো নতুন করে বাবা হয়েছেন ৮৩ বছর বয়সে। তার ২৯ বছরের নারী সঙ্গী নূর আলফাল্লাহ হলেন পাচিনোর চতুর্থ সন্তানের মা।
শেষ বয়সে হওয়া বাবাদের ক্লাবে আগেই ঢুকেছেন আরেক হলিউড কিংবদন্তি রবার্ট ডি নিরো। ৭৯ বছরের এই তারকা গত মাসে জানান তিনি ৭ম সন্তানের বাবা হয়েছেন। আর বেশ কিছু চলচ্চিত্রে ডি নিরোর সহ-অভিনেতা আল পাচিনোও এখন সেই ক্লাবে যোগ দিলেন।
তবে এই দুজনেই নয়, আরো অনেক চলচ্চিত্র তারকা, নামী-দামী সঙ্গীত শিল্পী, এমনকি একাধিক আমেরিকান প্রেসিডেন্টও শেষ বয়সে নতুন করে বাবা হয়েছেন।
এগুলো কিছুটা ব্যতিক্রমী ঘটনা, কিন্তু সাধারণভাবে পুরুষদের বাবা হওয়ার গড় বয়স দিন দিন বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এই বয়স গড়ে বেড়েছে সাড়ে তিন বছর। আমেরিকাতে এখন পুরুষদের প্রথমবারের মত বাবা হওয়া গড় বয়স ৩০.৯ বছর। মেডিকেল জার্নাল হিউম্যান রিপ্রডাকশনের ২০১৫ সালে প্রকাশিত এক জরীপ রিপোর্ট বলছে, আমেরিকাতে নয় শতাংশ পুরুষ প্রথমবার বাবা হচ্ছেন ৪০ বছর বয়সে।
আর গিনেজ বুক অব রেকর্ড অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি বয়সে বাবা হয়েছিলেন ৯২ বছরে এক পুরুষ। তবে এর চেয়ে বেশি বয়সে বাবা হওয়ার দাবির কথা হঠাৎ হঠাৎ শোনা গেছে যদিও সেসব দাবীর কোনো প্রমাণ নেই।
তবে অনেক বেশি বয়সে বাবা হওয়ার একাধিক ঝুঁকি রয়েছে।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে আমেরিকায় ইউনিভার্সিটি অব ইউটা এবং অন্য কতগুলো প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ বিষয়ে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করে। সেখানে দেখানো হয় বেশি বয়সে বাবা হওয়ার প্রভাব কী হয় – ফার্টিলিটির ওপর প্রভাব কী হয় অথবা গর্ভধারণের ক্ষেত্রে এবং জন্ম নেওয়া শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব কিীভাবে পড়ে।
যদিও অনেক সমীক্ষায় আল পাচিনোর মত বয়সকে বিবেচনা করা হয়নি – কারণ তেমন বয়সে বাবা হওয়া ব্যতিক্রমী ঘটনা – কিন্তু এটা প্রমাণিত যে চল্লিশের এবং পঞ্চাশের কোঠার পুরুষদের বীর্যের শুক্রাণুর মান কমে যায় – সংখ্যা যেমন কমে তেমনি টিকে থাকা এবং মিউটেশনের ক্ষমতাও কমে যায়।
তার অর্থ, পুরুষের বয়স বেশি হয়ে গেলে সঙ্গীর গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়, এবং সেইসাথে গর্ভধারণ করলেও গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাবার বয়স অনেক বেশি হলে তার নারী সঙ্গীর গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
তারপর রয়েছে সন্তান জন্মের পর রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। ১৯৫০ দশক থেকে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে বেশি বয়সের পুরুষের শুক্রাণু দিয়ে সন্তান হলে সেই সন্তানের অ্যাকোনড্রোপ্লাসিয়া নামে জ্বিনগত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আরও অনেক জটিল রোগের ঝুঁকির কথাও পরে জানা গেছে।
“দিনে দিনে এটি পরিষ্কার হয়েছে যে নারীর ক্ষেত্রে যেমন তেমনি পুরুষের বয়সও জন্ম নেওয়া সন্তানের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে,” লিখেছেন ইউটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
কম ওজনের বাচ্চা হওয়ার ঝুঁকি
যেমন, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাদের গবেষণায় নবজাতকের ওজন কম হওয়া বা তার হঠাৎ হঠাৎ মূর্ছা যাওয়ার সাথে বাবার বয়সের যোগাযোগ খুঁজে পেয়েছেন। তাছাড়া, বাবার বয়স বেশি হলে অল্প বয়সে শিশুর ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে । সেইসাথে জন্মগত-ভাবে শিশুর হৃদপিণ্ডে অনেক ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
তবে এটা মনে রাখা দরকার যে অন্য সব গবেষণার মতই স্বাস্থ্য সমস্যা এবং তার সম্ভাব্য কারণ নিয়ে যেসব গবেষণা হয় সেগুলো সবসময় সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেনা। বাব-মায়ের বয়স ছাড়াও অন্যান্য কারণও থাকতে পারে – যেমন, বাবা-মা কেমন জীবনযাপন করে বা পরিবেশগত দূষণ।
কিন্তু গবেষকরা মোটামুটি নিশ্চিত যে পুরুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে যেসব কোষ দিয়ে তার শুক্রাণু তৈরি হয় সেগুলোর ডিএনএ দুর্বল হতে থাকে, এবং সেই দুর্বল শুক্রাণু পরবর্তী প্রজন্মের ওপর প্রভাব ফেলে।
এসব গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল এখন বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় কাজে লাগছে। একসময় বাচ্চা না হলে মনে করা হতো নারীর কারণেই তা হচ্ছেনা। নারীর বন্ধ্যাত্ব নিয়েই বেশি গবেষণা হয়েছে। কিন্তু এটা এখন ধীর ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে যে পুরুষও বন্ধ্যত্বের শিকার হয়। বিশেষ করে পুরুষের বয়স এখানে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
আল পাচিনো বা রবার্ট ডি নিরোর মতো আশি বা নব্বইয়ের কোঠায় বাবা হওয়ার ঘটনা এখনও বিরল। কিন্তু অল্প যুবক বয়সী বাবাদের সংখ্যা কমছে। ১৯৭০ দশক থেকে আমেরিকাতে ৩০ বছরের কম বয়সী বাবাদের সংখ্যা ২৭ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে ৪৫ থেকে ৪৯ বছর বছর বয়সে বাবা হওয়ার সংখ্যা ৫২ শতাংশ বেড়েছে।
এই প্রবণতা চলতে থাকলে শুধু সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানকে তার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।