আন্দোলনের লক্ষ্য একটাই, ‘হাসিনার পদত্যাগ’ : তারেক রহমান
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আন্দোলনের লক্ষ্য একটাই, ‘হাসিনার পদত্যাগ’। হাসিনাকে অপসারিত করে ‘দেশ বাচাঁও মানুষ বাচাঁও’। হাসিনার পতনের জন্য যে কোন পদক্ষেপ নিতে আন্দোলনে অংশ নেয়া নেতা কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, পতন না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন ঘরে ফিরে না যান। তিনি নির্দেশ দিয়ে বলেন, হাসিনার কোন লোক যেন ঘর থেকে বের হতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
বক্তব্যে আরো বলেছেন, এ আন্দোলন কোন দলের নয়, এটি আপামর জনগনের আন্দোলন। পুলিশের গুলি ঠেকাতে রাজধানী ঢাকার এক অংশকে অপর অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে। তেমনিভাবে সারা দেশের এক অংশকে অপর অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে। আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এখন ঘরে ফিরে যেতে হবে খুনি হাসিনার পতনের সংবাদ নিয়ে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি বানচাল করতে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। সোমবার থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাজ হবে ঢাকার এক অংশকে অপর অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া যাতে পুলিশ গুলি চালাতে না পারে।’ কোন আওয়ামী লীগ নেতা যেন ঘর থেকে বের হতে না পারে সেই ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ পুলিশ বা র্যাব ছাড়া কিছু করতে পারে না। জনতার শক্তির সামনে অন্য কোন ক্ষমতা চলে না।
তিনি বলেন, বিএনপি হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রতীক। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখার চেষ্ঠা করছে বর্তমান অবৈধ সরকার। সে সময় তারেক রহমান নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন করে বলেন, আপনাদের মাকে যদি আপনাদের কাছে আসতে না দেয়া হয় তবে আপনাদের কি করা উচিত? তাই আমাদের এবারের লক্ষ্য দেশকে মুক্ত করা, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা।
তিনি বলেন, সারা দেশে লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী আন্দোলনে ঝাপিয়েঁ পড়েছেন। যে আন্দোলন সারাদেশে শুরু হয়েছে সে আন্দোলনকে নির্ধারিত লক্ষ্যস্থলে নিয়ে যেতে হবে।
নির্দেশনা দিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, হাসিনা বিদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থামানো যাবে না। কারও কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, ‘এই আন্দোলন ব্যর্থ হলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে এই দেশের, এই দেশের মানুষের এবং তৃণমূল নেতকর্মীদের। তাই হাসিনা পদত্যাগ নিশ্চিত করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের অধীনে নির্বাচন না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে’। এ আন্দোলন কোন ভাবেই থামানো যাবে না। তাহলে ক্ষতি হবে দেশের,জনগণের ও নেতা-কর্মীদের।
তিনি আহবান জানিয়ে বলেন, জনগণের ভোটারাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশকে মুক্ত করার এবারের আন্দোলনের বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে একত্রিত করে সর্বশক্তি দিয়ে দেশ রক্ষার লড়াইয়ে শরিক হোন।
বিজয় সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি এ আন্দোলনের মাঠ ছাড়বে না ঘোষণা দিয়ে দেশের আপামর জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে অঘোষিত জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে। এজন্য কারো ঘোষণার অপেক্ষায় না থেকে যে যেখান থেকে যেভাবে পারেন দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষার এ চুড়ান্ত লড়াইয়ে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।
‘৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা ও কালো দিবস’ উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্যকালে তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে রং হেডেড শেখ হাসিনা তার পিতা বাংলাদেশে বাকশালের জনক মুজিবুর রহমানের মতোই দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।’ হাসিনা তার ক্ষমতাসীন ৬ বছর সময়ে দেশ ও জনগণের পক্ষে কোন কাজ করেনি।
তরুণদের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ দেশ সবার। কেবল ফেসবুকে পড়ে থাকলে হবে না। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাজপথে নেমে আসতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে।’
সমাবেশে বক্তব্যে তারেক রহমান বলেছেন, পিলখানায় যে সকল সেনা কর্মকর্তা ও জওয়ানদের হত্যা করেছে হাসিনা সরকার, তাদের সবার বিচার করা হবে। তথ্য প্রযুক্তিখাত উন্নয়নের নামে তার ছেলেকে যে অবৈধভাবে টাকা দিচ্ছে এ জন্য তার বিচার করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘গত ৬ বছরে ইলিয়াস আলীসহ বিএনপি নেতাদের গুম-খুনের জন্য তার বিচার করা হবে। বিচার করা হবে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের হত্যার জন্যও। কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লূটপাটের বিচার করা হবে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকারী হাসিনার বিচার করা হবে। শেয়ারবাজার লূটপাট কারীদের বিচার করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘কারো কথায় বিভ্রান্ত হওয়ার অবকাশ নেই। আজকের আন্দোলন থামতে দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, কোন কারণে আন্দোলন ব্যর্থ হলে দেশের অস্তিত্ব ও গণতন্ত্র থাকবে না।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এম এ কয়সরের উপস্থাপনায় সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মুহিদুর রহমান, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এম এ সালাম, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এমএ মালিক, যুক্তরাজ্য বিএনিপর সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল হামিদ চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, নরসিংদী জেলা বিএনপির নেতা ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর এলাহী, আইনজীবী নেতা ব্যারিস্টার মীর হেলাল, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উল কাদির ফাহিম, যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্টা ও লন্ডন নর্থ-ওয়েস্ট বিএনিপর সভাপতি শামীম আহমেদ, যুক্তরাজ্য আইনজীবী ফোরামের আহবায়ক ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ ও সদস্য সচিব সলিসিটর বিপ্লব পোদ্দার, যুবদল যুক্তরাজ্য শাখার আহ্বায়ক দেওয়ান মোকাদ্দেম চৌধুরী নিয়াজ, স্বেচ্ছাসেবক দল যুক্তরাজ্য শাখার সদস্য সচিব মো. আবুল হোসেন, জাসাস যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি এমএ সালাম, ক্যান্ট বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, তরুন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অলিউর রহমান ফাহিম প্রমুখ। সভার প্রথমে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা শামীম আহমেদ।