কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল, প্রতিবাদে জামায়াতের ২দিনের হরতাল
নাজমিন রিয়া, বাংলাদেশ
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের রায় পূন:বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আজ সোমবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। এর ফলে এই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তবে কামারুজ্জামান চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় কামারুজ্জামানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না, সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।
কামারুজ্জামানের রিভিউ খারিজের রায় দেয়ার দুই ঘণ্টা পর হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব মকবুল আহমাদের নামে এই বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে হত্যার সরকারি ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এবং এই মুহূর্তে তার মুক্তির দাবিতে ৭ ও ৮ এপ্রিল মঙ্গল ও বুধবার দেশব্যাপী ২ দিনের সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
ফাঁসির আসামী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তার পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ করতে ডেকেছে কারা কর্তৃপক্ষ। আজ বেলা ৩টার দিকে তাদের কাছে কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পৌঁছায়। চিঠিতে বিকাল ৫টার মধ্যে দেখা করার নির্দেশনা রয়েছে বলে জানায় কামারুজ্জামানের পরিবার। তারা কারাগারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের চিঠি দিয়ে বলেছে, আমরা চাইলে সোমবার বিকাল ৫টায় কারাগারে সাক্ষাৎ করতে পারি। আমরা ওই সময়ের মধ্যেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যাব। এর আগে বেলা ১১টায় শিশির মনিরের নেতৃত্বে পাঁচ আইনজীবী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বিকেল ৪টায় দেখা করার আবেদন করেন। কিন্তু বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তাদের দেখা করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। শিশির মনির বলেন, আমরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ দেখা করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে আপিল বিভাগ গত বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছায়। ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়। এরপর গতকাল রোববার বিষয়টির ওপর প্রায় দুই ঘন্টা শুনানির পর আদালত আজ রায় ঘোষণা করলেন।