ফরাসি নবজাগরণ

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃব্রাজিল, আর্জেন্টিনার পর স্বাগতিকদের বিদায়ে বিশ্বকাপের উত্তেজনা কমে এসেছে রাশিয়াতে। ম্যাচের দিনও অনলাইনে সেমিফাইনালের টিকেট পাওয়া গেছে। স্টেডিয়ামের বাইরে কালো বাজারিদের হাতে দেখা গেছে ফ্রান্স-বেলজিয়াম ম্যাচের টিকেট। প্রায় ৬৫ হাজার ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামে বেশকিছু আসন খালিও ছিল। দর্শকদের আগ্রহে ভাটা পরলেও বেলজিয়াম-ফ্রান্স কিন্তু হতাশ করেনি। দু’দলই দারুণ এক উপভোগ্য ম্যাচ উপহার দিয়েছে সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে।ম্যাচের প্রথমার্ধ গোলশূন্য সমতায় থাকলেও নাটক হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। এই অর্ধের শুরুতেই স্যামুয়েল উমতিতির গোলে লিড পায় ফ্রান্স। গোল পরিশোধে মরিয়া বেলজিয়াম ঝড় তোলে ফ্রান্সের রক্ষণে। তবে হ্যাজার্ড-লুকাকুর ব্যর্থতা আর হুগো লরিসের দৃঢ়তায় গোল পায়নি বেলজিয়াম। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে জয় নিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে ফরাসিরা।

বিশ্বকাপে কখনোই ফাইনাল খেলা হয়নি বেলজিয়ামের। এর আগে একবার সেমিফাইনাল খেলা বেলজিয়াম ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে তৃতীয় হয়। চলতি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের আগ পর্যন্ত কোন ম্যাচে হারেনি রবার্তো মার্টিনেজের শিষ্যরা। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ জিতেই দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত করে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বারে থাকা দলটি। দ্বিতীয় রাউন্ডে জাপানকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে বেলজিয়াম। শেষ আটের ম্যাচে নিজেদের অন্যতম সেরা ম্যাচ খেলে রেডডেভিলরা। শক্তিশালী ব্রাজিলকে বাক্সবন্দি করে ২-১ গোলের জয় ছিনিয়ে নেয় তারা। অন্যদিকে ১৯৯৮’র চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালেও খেলেছিল। নকআউট পর্বে তারা বিদায় করেছে দুই বারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে। ব্রাজিলÑআর্জেন্টিনাকে বিদায় করা দু’দলের কাছে সবার যেমন প্রত্যাশা ছিল, ঠিক তেমন খেলাই উপহার দিয়েছে তারা। উত্তেজনাপূর্ণ সেমিফাইনালে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের পরও গোলশূন্য থাকে ম্যাচের প্রথমার্ধ। এই অর্ধে বেশি সুযোগ পেয়েছিলো বেলজিয়াম। ম্যাচের ১৫তম মিনিটে প্রথম আক্রমণটি করে বেলজিয়াম। ডি বক্সের বাইরে থেকে হ্যাজার্ডের শট গোলবারের উপর দিয়ে চলে যায়। ১৮ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিল ফ্রান্সও। কিন্তু ডি বক্সের বাইরে থেকে মাতুইদির আচমকা জোরালো ভলি সোজা কুর্তোয়ার তালুবন্দী হয়। ১৯ মিনিটে ফ্রেঞ্চ ডিফেন্সের বা পাশ থেকে হ্যাজার্ডের নেয়া বাঁকানো শট মাথা ছুঁয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ভারান। তার মাথায় না স্পর্শ করলে নির্ঘাত এগিয়ে যেতে পারতো বেলজিয়াম। ২১ মিনিটে আবারো গোলের সুযোগ পায় বেলজিয়াম। নাসের চাদলির কর্নার থেকে অল্ডারভিরাল্ডের নেয়া শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন হুগো লরিস। ২৫ মিনিটের পর কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে বেলজিয়াম। এই সুযোগে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে তরুণ ফ্রান্স দল। ৩১ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে গ্রিজম্যানের দুর্বল শট গোলের নিশানা খুঁজে পায়নি। ৩৪ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি পেয়েছিল ফ্রান্স। ডান পাশ থেকে এমবাপ্পের শট গোলমুখে কুর্তোয়াকে একা পেয়ে বাইরে শট নেন ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার জিরু। ৩৯ মিনিটে ফ্রান্সের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান বেলজিয়ামের আগের ম্যাচের নায়ক কুর্তোয়া। পাভার্টের শট ডান পায়ের বদৌলতে রুখে দেন এই গোলরক্ষক। দ্বিতীয়ার্ধে কৌশলে পবিরর্তন এনেই সফলতা পান ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম। পল পগবাকে ডাকদিকে সরিয়ে আনেন ফ্রান্স কোচ। তাতেই আক্রমণের ধার বাড়ে ফ্রান্সের। এমনই এক আক্রমণ থেকে কর্নার আদায় করে ১৯৯৮’র চ্যাম্পিয়নরা। গ্রিজম্যনের নেয়া কর্নারে উমতিতির হেড গোলে পরিনত হয়ে লিড পায় ফ্রান্স (১-০)। ম্যাচে গোল হওয়ার পরই প্রাণ ফিরে পিটার্সবার্গের গ্যালারিতে। আর্জেন্টিনাÑব্রাজিল সেমিফাইনালের হবে ভেবে যারা পিটার্সবার্গের টিকেট কিনেছিলেন তারাও দাঁড়িয়ে যান। এরাও রাশিয়ানদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে রাশিয়া রাশিয়া বলে চিৎকার করতে থাকেন।

কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়েকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফ্রান্স। আর ব্রাজিলের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় নিয়ে সেমিফাইনালে উঠে বেলজিয়াম।

ফ্রান্স একাদশ : হুগো লরিস (গোলরক্ষক, অধিনায়ক), স্যামুয়েল উমতিতি, রাফায়েল ভারান, লুকাস হার্নান্দেজ, বেনজামিন পাভার্দ, আন্তোইন গ্রিজম্যান, এনগোলা কান্তে, পল পগবা, অলিভিয়ের জিরু, ব্লেইস মাতুইদি এবং কিলিয়ান এমবাপ্পে।

বেলজিয়াম একাদশ: থিবো কুর্তোয়া (গোলরক্ষক), ভিনসেন্ট কম্পানি, ইয়ান ভার্টোঙ্গেন, টবি অলডারভিরাল্ড, অ্যাক্সেল উইটসেল, কেভিন ডি ব্রুইনা, মারুয়ান ফেলাইনি, দেম্বেলে, রোমেলু লুকাকু, ইডেন হ্যাজার্ড (অধিনায়ক), নাসের চ্যাডলি।


Spread the love

Leave a Reply