লন্ডনে শেষ হলো ১৯তম রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসব
বাংলা সংলাপ ডেস্কঃভালো ছবি, ভালো দর্শক এবং ভালো সমাজ, এই স্লোগান নিয়ে ১৯৯১ সালে লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি। বিগত ২৭ বছর ধরে বৃটেনের বাঙ্গালী অধ্যুষিত এলাকা পূর্ব লন্ডনে এই সংগঠনটি বিবিধ কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে বিশেষভাবে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকে সবার সামনে তুলে ধরছে। চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশের পাশাপাশি ২০০০ সাল থেকে রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি নিয়মিত আয়োজন করে আসছে বার্ষিক চলচ্চিত্র উৎসব। শুরুতে ‘বংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও বর্তমানে ‘রেইনবো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ হিসেবে নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে এই উৎসবটি। মূলত বৃটিশ বাংলাদেশি দর্শকদের জন্য এই উৎসবের আয়োজন করলেও ইতিমধ্যে এই উৎসব স্থানীয় অন্যান্য জনগোষ্ঠীকেও আকর্ষণ করতে পেরেছে। বিশেষভাবে যারা বাংলাদেশ সহ বিশে^র অন্যান্য দেশের চলচ্চিত্র তথা সাংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী।
প্রতি বছরের মতো এবারো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ১৯তম রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসব। ১৫ থেকে ২২শে জুলাই পর্যন্ত আট দিনব্যাপি এই উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, তুরস্ক, আলজেরিয়া, ইরান, আইসল্যান্ড, রাশিয়া, বৃটেন সহ মোট ১৮টি দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। ১৫ই জুলাই বিশ^কাপ ফুটবল ফাইনাল উপেক্ষা করে পূর্ব লন্ডনের জেনেসিস সিনেমায় হল ভর্তি দর্শক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহি মেয়র জন বিগস, বেথনাল গ্রীণ এবং বো এলাকার সংসদ সদস্য রুশানারা আলী, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কাউন্সিলার মতিনুজ্জামান, ক্যানারী ওয়ার্ফ গ্রুপের এসোসিয়েট ডাইরেক্টর জাকির খান, রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক মোস্তফা কামাল, রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসবের সদস্য নাদিয়া লোদী ওয়াহাব, বাংলাদেশ থেকে আগত ‘ভূবন মাঝি‘ চলচ্চিত্রের পরিচালক ফখরুল আরেফিন খান, অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ, অভিনেতা মাজনুন মিজান। আমন্ত্রিত অতিথিরা তাদের বক্তব্যে রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসবের ১৯তম আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি মহতি উদ্যোগ এবং উৎসব আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশে নির্মিত এবং তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘হালদা’ ছবিটি প্রদর্শিত হয়। ১৬ই জুলাই আয়োজন করা হয় স্বল্পদৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং আলোচনা অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে স্থানীয় নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত দর্শকরা এই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদকে অভিনন্দন জানান। প্রতি বছর এই অনুষ্ঠান আয়োজনেরও আহ্বান জানান উপস্থিত দর্শকরা। এবারের উৎসবের অন্যতম সংযোজন ছিল দিনব্যাপি মহিলাদের জন্য ‘ফিল্ম কনফারেন্স’। ১৯শে জুলাই এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের আর্ট, কালচার কেবিনেট সদস্য কাউন্সিলার আমিনা আলী এবং টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহি মেয়রের উপদেষ্টা কাউন্সিলার সাবিনা আকতার। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন চলচ্চিত্র বোদ্ধা অমিতা শঙ্কর, ইয়েসিম গুজেলপিনার, উপমহাদেশের প্রখ্যাত অভিনেত্রী জয়শ্রী কবির, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ। অনুষ্ঠানটির সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন নাদিয়া লোদী ওয়াহাব ও সৈয়দা সাইমা আহমেদ। ২০শে জুলাই আয়োজন করা হয় শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত ওয়ার্কশপে নির্মিত দুটি এবং টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ইয়ুথ শাখার উদ্যোগে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বেশিরভাগ দর্শকদের বয়স ১৬ বছরের নিচে। ২২শে জুলাই রিচ মিক্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান। নাদিয়া লোদী ওয়াহাবের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ডেপুটি স্পিকার কাউন্সিলার ভিক্টোরিয়া ওবাজে, অভিনেত্রী জয়শ্রী কবীর, রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক মোস্তফা কামাল, ১৯তম রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি বোর্ড সদস্য অমিতা শঙ্কর। সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসবের পক্ষ থেকে জুরি বোর্ডের সদস্য অমিতা শঙ্কর এবারের উৎসবের পুরষ্কার ঘোষণা করেন। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরষ্কার দেয়া হয় ইরানে নির্মিত তাহমিনেহ মিলানি পরিচালিত ‘আন টেকেন পাথ’, শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরষ্কার দেয়া হয় বাংলাদেশের তৌকীর আহমেদ (হালদা), জুরি বোর্ড বিশেষ পুরষ্কার : ‘ভুবন মাঝি’, পরিচালক ফখরুল আরেফিন খান। উৎসবের পক্ষ থেকে ইমাজিং অভিনয় শিল্পীর পুরষ্কার দেয়া হয় অপর্ণা ঘোষ এবং মাজনুন মিজানকে। ফখরুল আরেফিন খান পরিচালিত ‘ভুবন মাঝি’ ছবিটি প্রদর্শনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।