প্রিন্সেস ডায়ানার সাক্ষাৎকার: ‘প্রতারণার কৌশল’ অবলম্বনের জন্য বিবিসির সমালোচনা

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ এক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে ১৯৯৫ সালে বিবিসি প্রিন্সেস ডায়ানার যে বিখ্যাত সাক্ষাৎকার প্রচার করেছিল তা নেবার জন্য সাংবাদিক মার্টিন বশির যে “প্রতারণামূলক” কৌশল ব্যবহার করেছিলেন, বিবিসি তা ধামাচাপা দিয়েছিল।

কীভাবে এই সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল সে বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে।

এই তদন্তে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি লর্ড ডাইসন। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “বিবিসি বস্তুনিষ্ঠতা ও স্বচ্ছতার ব্যাপারে যে উঁচু মানদণ্ড মেনে চলে, যেটা তার সাংবাদিকতার মূল স্তম্ভ, এক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটেছে।”

বিবিসি বলেছে এই রিপোর্টে “স্পষ্ট ব্যর্থতার” চিত্র বেরিয়ে এসেছে এবং: “আমরা এ জন্য খুবই দুঃখিত।”

এই রিপোর্টে বলা হয়েছে মি. বশির ডায়ানার ভাই আর্ল স্পেনসারের সাথে প্রতারণা করেছিলেন। তিনি মি. স্পেনসারের আস্থা অর্জনের জন্য তাকে জাল নথিপত্র দেখান, যাতে মি. বশির প্রিন্সেস ডায়ানার কাছে সহজে পৌঁছতে পারেন।

এই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মি. বশির বিবিসির ম্যানেজারদের মিথ্যা বলেছিলেন যে তিনি কাউকে কোন জাল নথিপত্র দেখাননি। রিপোর্ট আরও বলছে ১৯৯৫ সালে মি. বশির যেসব কথা বলেছিলেন তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল “অনির্ভরযোগ্য, অকল্পনীয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অসৎ”।

মি. বশির নথি জাল করার জন্য একটি বিবৃতিতে দুঃখপ্রকাশ করেছেন, তবে বলেছেন এই সাক্ষাৎকার নিয়ে তিনি “অসম্ভব গর্বিত”।

তিনি বলেছেন: “তাকে এই সাক্ষাৎকার দিতে প্রিন্সেস ডায়ানা ব্যক্তিগতভাবে রাজি হয়েছিলেন এবং ব্যাংকের ওই দলিলপত্রের সাথে তার সিদ্ধান্তের কোন যোগাযোগ ছিল না।”

“প্রিন্সেস ডায়ানার নিজের হাতে লেখা এই মর্মে কাগজ প্রমাণ হিসাবে তদন্ত কমিটির কাছে দেয়া হয়েছিল, যা এই দাবির সত্যতা প্রমাণ করে। ওই কাগজটিও রিপোর্টের পাশাপাশি আজ প্রকাশ করা হয়েছে। লর্ড ডাইসনের কাছে এর স্বপক্ষে আরও তথ্যপ্রমাণ তুলে দেয়া হয়েছিল।”

বিবিসির ‘প্যানোরামা’য় প্রচারিত সাক্ষাতকারটি দেখেছিলেন ২ কোটি ৩০ লাখ লোক

বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি বলেছেন: “এই রিপোর্টে বলা হয়েছে ডায়ানা প্রিন্সেস অফ ওয়েলস বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেবার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন ঠিকই, কিন্তু এটা স্পষ্ট যে ওই সাক্ষাৎকার নেবার জন্য যে পথ নেয়া হয়েছিল, তা শ্রোতাদর্শক আমাদের কাছ থেকে যে মান প্রত্যাশা করে তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা এজন্য খুবই দুঃখিত। লর্ড ডাইসন এই ব্যর্থতা স্পষ্টভাবেই চিহ্নিত করেছেন।”

“আজকের বিবিসিতে প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির অনেক উন্নতি ঘটানো হয়েছে, তবে সেসময় যেভাবে এই সাক্ষাৎকার গ্রহণের পথ নেয়া হয়েছিল তা ঠেকানো উচিত ছিল।”

“সেসময় ঠিক কী ঘটেছিল তার গভীরে গিয়ে সেটা খতিয়ে দেখার জন্য বিবিসির আরও উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ছিল এবং বিবিসি যা জানে সে বিষয়ে স্বচ্ছ হওয়া উচিত ছিল।”

“বিবিসি ২৫ বছর পর সময়ের কাঁটা পেছিয়ে এখন অতীতে ফিরে যেতে পারবে না, কিন্তু বিবিসি এর জন্য আজ পূর্ণাঙ্গ এবং নিঃশর্তভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।”
প্যানোরামা অনুষ্ঠানের জন্য মার্টিন বশিরের নেয়া প্রিন্সেস ডায়ানার সাক্ষাৎকার তখন বিশাল একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বিবিসির এই সাক্ষাৎকারে প্রিন্সেস তার জীবন নিয়ে প্রথমবার এমনসব কথা বলেছিলেন যা ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।

মার্টিন বশির গত সপ্তাহে বিবিসি ছেড়ে যান

ওই সাক্ষাৎকারে ডায়ানা তার বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন: “এই বিয়েতে ছিলাম আমরা তিনজন।”

ওই সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ রাজ পরিবারের ভেতরের একজন সদস্য প্রথম এত খোলাখুলি কথা বলেছিলেন, যেখানে তিনি প্রিন্স চার্লসের সাথে তার অসুখী বিবাহিত জীবন ও তার বুলিমিয়ায় আক্রান্ত হবার কথা বলেন।

এর পর থেকে ডায়ানার ভাই দাবি করে আসছিলেন যে মি. বশির মিথ্যা কথা বলে এই সাক্ষাৎকার নেন। তিনি যাতে ডায়ানার সাথে মি. বশিরের পরিচয় করিয়ে দেন তার জন্য মি. বশির তাকে জাল ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখান এবং সেভাবে তিনি মি. স্পেনসারের আস্থা অর্জন করেন।

গত বছর মি. স্পেনসার প্রকাশ্যে তার অভিযোগ তুলে ধরেন। এবং বিবিসি নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেয়, যার ফল আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হল।

মি. বশির গত সপ্তাহে বিবিসির কাজে ইস্তফা দেন তার শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে। ৫৮ বছর বয়সী মার্টিন বশির ২০১৬ সাল থেকে বিবিসির ধর্ম বিষয়ক সংবাদদাতা এবং সম্পাদক ছিলেন।


Spread the love

Leave a Reply