গাজায় সাহায্য কর্মীদের মৃত্যুর ঘটনার পূর্ণ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের দাবি

Spread the love

গাজায় ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় সাহায্য সংস্থার সাত কর্মীর মৃত্যুর ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ও স্বাধীন তদন্তের আহবান জানিয়েছে একটি সাহায্য সংস্থা।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ কিছু ‘মারাত্মক ভুল’ এর কারণে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) এর সাত কর্মী হামলার টার্গেটে পরিণত হয়েছেন বলার পর সংস্থাটি এ আহবান জানালো।

ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী এ ঘটনায় দুজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে।

তবে ওই সাহায্য সংস্থার সিইও বলেছেন ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী ‘গাজায় নিজেদের ব্যর্থতার গ্রহণযোগ্য তদন্ত করতে পারে না’।

এক বিবৃতিতে এরিন গোর বলেছেন: “[আইডিএফের] দু:খপ্রকাশ আমাদের সাত সহকর্মীর ভয়ানক মৃত্যুর ঘটনার নিছক সান্ত্বনা মাত্র। এটা নিহতদের পরিবার ও বিশ্বজুড়ে ডব্লিউসিকে পরিবারের প্রতি নিছক সান্ত্বনা”।

তিনি বলেন ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় মানবিক সহায়তার সাথে জড়িত কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। ওই মৃত্যুর ঘটনার পর সেখানে অনেকগুলো সংস্থা তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে।

গত পহেলা এপ্রিল মাত্র চার মিনিটের মধ্যে গাজায় ত্রাণ সাহায্য বিতরণের সাথে জড়িত কর্মীদের গাড়িকে লক্ষ্য করে একের পর এক তিনটি মিসাইল আঘাত করলে সাতজন ত্রাণকর্মী মারা যান।

ওই ত্রাণ দলটি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অনুমোদন নিয়েই উপকূল থেকে ত্রাণসহায়তা গুদামে স্থানান্তরের কাজ করছিলো।

ইসরায়েল এ ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের চাপের মুখে রয়েছে
ইসরায়েল এ ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের চাপের মুখে রয়েছে

কিন্তু আইডিএফের ভুল ও নিজেদের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝির কারণে হামাসের পরিবর্তে তারাই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

আইডিএফ বলছে ‘কয়েকজন সশস্ত্র বন্দুকধারী’কে ওই কনভয়ের কাছাকাছি দেখা যাচ্ছিলো। তবে ড্রোন অপারেটররা ভুলবশত ত্রাণকর্মীদের বহনকারী গাড়িগুলোকে শনাক্ত করেছিলো।

সেনাবাহিনী দু:খপ্রকাশ করে স্বীকার করেছে যে তাদের সৈন্যরা প্রটোকল মেনে কাজ করেনি এবং ত্রাণ দলের পুর্বানুমোদনের বিষয়টি সম্পর্কে তাদের জানানো হয়নি।

এ ঘটনায় একজন কর্নেল ও একজন মেজরকে বরখাস্তের পাশাপাশি আইডিএফের তিনজন কমান্ডারকে তিরস্কার করা হয়েছে। এছাড়া যেই ড্রোন ইউনিট এ ঘটনায় জড়িত সেটিকেও স্থগিত করা হয়েছে।

ইসরায়েল এ ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের চাপের মুখে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন প্রাথমিক তথ্যগুলো ব্রিটিশ কর্মকর্তারা সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে দেখছেন। তিনি দুই কর্মকর্তার বরখাস্ত হওয়াকে ‘প্রাথমিক পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সামাজিক মাধ্যমে এক্স-এ তিনি লিখেছেন: ‘তদন্তে যা উঠে এসেছে তার পুরোটা প্রকাশ করতে হবে এবং পূর্ণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্বাধীন পর্যালোচনা করতে হবে”।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন যে তিনি ইসরায়েলের তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছেন এবং সেটি সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করছেন। তিনি বলেন ‘কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেটি নয় বরং এসব পদক্ষেপ ফল দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র’।

ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেয়া নিয়ে বাইডেন প্রশাসন ডেমোক্র্যাটদের দিক থেকেও চাপের মুখে রয়েছেন।

শুক্রবার সাবেক স্পীকার ন্যান্সি পেলোসিসহ কংগ্রেসের প্রায় তিন ডজন সদস্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও মি. ব্লিংকেনকে চিঠি দিয়ে ইসরায়েলকে সশস্ত্র সহায়তার একটি প্যাকেজ অনুমোদনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহবান জানিয়েছেন।

ইসরায়েল গাজায় নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি যথেষ্ট কমিয়ে আনতে ব্যর্থ হলে বা সাত ত্রাণকর্মীকে হত্যার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত রাখতেও বলেছেন তারা।

ওদিকে আইডিএফের প্রকাশ্যে দু:খ প্রকাশের আগে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের একটি ভিডিও ফুটেজসহ তদন্তের আরও কিছু উপাদান দেখানো হয়েছে। ফুটেজে দেখানো হয় ত্রাণবাহী ট্রাকের ওপরে হামাসের একজন বন্দুকধারী দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে।

তবে তদন্তে যা পাওয়া গেছে তার একটি সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে মাত্র।

ইসরায়েলের তদন্তে সামরিক অসদাচরণের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হয়েছে একজন মেজর জেনারেলের নেতৃত্বে।

গাজা এবং পশ্চিম তীরের বর্তমান মানচিত্র
গাজা এবং পশ্চিম তীরের বর্তমান মানচিত্র

আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন ‘পেশাদার এবং চেইন অব কমান্ডের বাইরে থাকা স্বাধীন একটি কমিটি’ এই তদন্ত করেছে।

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন তদন্তে যা পাওয়া গেছে তা ‘পরিষ্কারভাবে ও স্বচ্ছতার সাথে’ প্রকাশ করা হবে। তবে এটি করা হবে ডব্লিউসিকে ও যেসব দেশের নাগরিকরা মারা গেছে সেসব দেশের প্রতিনিধিদের সামনে উপস্থাপনের পর।

তিনি বলেন সৈন্যরা ‘নিশ্চিতভাবেই হামাসকে টার্গেট করেছিলো’ কিন্তু ‘মারাত্মক ভুলের ধারাবাহিকতায়’ হামলাটি একটি ট্রাজেডিতে পরিণত হয়।

শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে প্রায় ১৯৬ জন সাহায্য কর্মী মারা গেছেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন ‘ইসরায়েলের সরকার ভুল স্বীকার করে। কিন্তু কে ভুলটি করেছে সেটি সমস্যা নয়। সমস্যা হলো সামরিক কৌশল ও প্রক্রিয়াই বারবার এ ধরণের ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে’।

“এসব ভুল ঠিক করার জন্য দরকার স্বাধীন ও অর্থবহ তদন্ত এবং মাঠের পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন”।

বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন ওয়াশিংটনের আরও সহায়তা গাজায় যাচ্ছে এবং ত্রাণকর্মী সুরক্ষায় বাড়তি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে বলেছেন।

পরে ইসরায়েল জানায় গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য তারা আরও দুটি রুটের অনুমোদন দিয়েছে। তবে কখন এই দুই রুট খুলে দেয়া হবে সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।

উত্তর গাজায় দ্যা ইরেজ গেইট যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথমবারের মতো খুলে দেয়া হচ্ছে এবং গাজার কাছে ইসরায়েলি কন্টেইনার পোর্ট আশডড- এ মানবিক সহায়তা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া জর্ডান হয়ে আরও সহায়তা আসবে কেরেম শালম ক্রসিং এর মাধ্যমে।


Spread the love

Leave a Reply