জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়েছেন কপ২৬ প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ

কপ২৬ প্রেসিডেন্ট এর সফরের সময় বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক শক্তি থেকে সরে আসার এবং জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা জমা দেওয়ার আশা ব্যক্ত করে।

● কপ২৬ প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা ২-৪ জুন ২০২১ তারিখ বাংলাদেশ সফর করেন।
● জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সম্মিলিত লক্ষ্য ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে তিনি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, জলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও তরুণদের সাথে বৈঠক করেন।
● কপ২৬ প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মার সফরকালে জলবায়ু সংকট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের যৌথ বিবৃতি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই বিবৃতি দুই দেশের মাঝে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য অভিযোজন (adaptation), অর্থায়ন (finance), পরিবেশবান্ধব জ্বালানি শক্তি (clean energy) ও সহযোগিতার ব্যাপারে দীর্ঘ মেয়াদী ‘ক্লাইমেট পার্টনারশীপ’ এর ভিত্তি স্থাপন করেছে।
● কপ২৬ প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা বাংলাদেশ সফরের আগে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া সফর করেছেন।

২- ৩ জুন ২০২১ বাংলাদেশ সফরে কপ২৬ প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের নেতৃত্বকে স্বাগত জানান।
এই সফরে তিনি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে. আব্দুল মোমেন সহ সরকারের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, জলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও তরুণদের সাথে বৈঠক করেন।
বৈঠকে কপ২৬ প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা বাংলাদেশের সরকারের কয়লাভিত্তিক শক্তি থেকে সরে আসার ইচ্ছা, পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির প্রতি অধিক গুরুত্বারোপের সম্ভাবনা সম্পর্কে অবহিত হন। এই সম্ভাবনাগুলো বাস্তবায়িত হলে অর্থনৈতিক উন্নতি ও টেকসই কর্মস্ংস্থান সৃষ্টি হবে। অদূর ভবিষ্যতের জন্য নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে, বাংলাদেশের আগামী সপ্তাহের মধ্যে একটি জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও অলোক শর্মা বাংলাদেশ থেকে পান।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ এ.কে. আব্দুল মোমেন ও
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন – কপ২৬ এর মাননীয় প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা

কপ২৬ প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মার সফরকালে জলবায়ু সংকট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের যৌথ বিবৃতি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই বিবৃতি দুই দেশের মাঝে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য দীর্ঘ মেয়াদী ‘ক্লাইমেট পার্টনারশীপ’ এর ভিত্তি স্থাপন করেছে।
এই সফরে অলোক শর্মা সুন্দরবন পরিদর্শন করেন। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেখানে তিনি দেখেছেন যে কীভাবে সুন্দরবন বায়ুর গতি প্রশমন করে ঝড়ের তীব্রতা থেকে আশেপাশের লোকালয়কে প্রাকৃতিক উপায়ে সুরক্ষা প্রদান করে। দুর্ভাগ্যক্রমে, শিল্পায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ফলে সুন্দরবনের এই প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সুন্দরবনের আশেপাশের লোকালয়কে টেকসইভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করছে এমন একটি এনজিওর কার্যক্রমও তিনি পরিদর্শন করেন।
সফর শেষে কপ২৬ প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা বলেন:
“আমাদের পৃথিবীর জন্য পরবর্তী দশকটিই নির্ধারণ করবে – আমরা সফল হব, নাকি ব্যর্থ হব। বিশ্ব যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন তা মোকাবেলা করতে প্রয়োজন কার্যকর বৈশ্বিক সহযোগিতা। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশী বন্ধুদের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পেরে আমার ভালো লেগেছে। আমি আনন্দিত যে বাংলাদেশের সাথে আমাদের দৃঢ় ও সক্রিয় ক্লাইমেট পার্টনারশীপটি এই সফরে আরো সুদৃঢ় হয়েছে।
“জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব নিরসন করতে এখানে যে উদ্ভাবনমূলক কাজ দেখেছি তাতে আমি ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছি। একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার জন্য এবারের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৬) আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আশা। কপ২৬ এর আগে আমি প্রত্যাশা করছি যে, বাংলাদেশ উদাহরণ স্থাপনের মাধ্যমে নেতৃত্ব দেওয়া অব্যাহত রাখবে।“
মি. শর্মা বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) বিবেচনা, বাংলাদেশের ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান এ জলবায়ু সংকটের প্রাকৃতিক সমাধান অন্তর্ভুক্ত করা এবং কয়লা ব্যবহারের পরিবর্তে অফশোর উইন্ড এর মতো পরিবেশবান্ধব জ্বালানি শক্তির দিকে ক্রমাগত এগিয়ে যাওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এই কাজে তিনি যুক্তরাজ্যের সহায়তার কথাও উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের মন্ত্রীমহাদয়বৃন্দের সাথে আলোচনায় মি. শর্মা মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান কে স্বাগত জানান এবং নীতিনির্ধারকদের নেট জিরো কার্বন নির্গমন লক্ষ্য অর্জন করতে উৎসাহিত করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ার (অভিযোজন) প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য স্থানীয়ভাবে জলবায়ু সংকট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ এবং জলবায়ু অর্থায়ন আরো উন্নত করতে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ কীভাবে একত্রে কাজ করতে পারে তাঁরা আলোচনা করেছেন।

মি. শর্মা বাংলাদেশের জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে আরও কত বেশি খাপ খাওয়ার ক্ষমতা দরকার ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষয়ক্ষতির ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির বিষয় উঠে আসে। জলবায়ু সংকট নিরসনে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতির বিষয়ে মিঃ শর্মা তরুণদের সাথেও আলোচনা করেন। এই সফরে অলোক শর্মা বাংলাদেশের কৃষি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও জীবিকার উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে গ্রাম ও শহর উভয় অঞ্চলে বন্যার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে – যা মানুষকে নিজ বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসাবে – বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দেখেছে যে জলবায়ু সংকট মানুষ, পরিবেশ ও অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে পারে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে মানিয়ে নিতে উদ্যোগ নেয়ায় জলবায়ু অভিযোজনে বিশ্বে শীর্ষস্থানে রয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে দেশটি জলবায়ু অভিযোজনের কাজে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেছে।


Spread the love

Leave a Reply