বিপর্যস্ত অর্থনীতি , দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কটে দেশ, দৈনিক ক্ষতি ২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা

Spread the love

BD-GDPনাজমিন রিয়া, বাংলাদেশ
টানা অবরোধ ও হরতালে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। থমকে গেছে সবকিছুই। পণ্য পরিবহনে চলছে চরম অচলাবস্থা। মারাতœক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কৃষি ও পর্যটন খাত। তৈরি পোশাকশিল্পে বিরাজ করছে একই অবস্থা। রপ্তানি খাতেও নেই কোন আশার সঞ্চার। আর ব্যবসায়ীরা ভাবছেন ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার কথা। দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে।
২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে চলছে নানা হিসাব। ব্যবসায়ীদের কয়েকটি সংগঠনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের সব আর্থিক খাতে দৈনিক ক্ষতি অন্তত ২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৮ দিনে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা।
অর্থনীতি বিশ্লেকরা বলছেন, দৃশ্যত যে ক্ষতি দেখা যাচ্ছে এর চেয়েও বেশি হবে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি। টাকার অংকে তা পরিমাপ করা সম্ভব নয়। এভাবে চলতে থাকলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে নিতে হবে। উদ্যোক্তা, শ্রমিকদের পথে বসতে হবে। এ অবস্থায় উৎপাদন কমে গেলে দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কটে পড়বে দেশ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, যে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সে দেশের রাজনীতিও টিকবে না। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দলগুলোর উচিত নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করা।
তিনি বলেন, উৎপাদন কমে গেলে দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কট সৃষ্টি হবে। হরতাল অবরোধে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ বন্ধ রয়েছে। আস্থার পরিবেশ নেই। এ অবস্থায় জিডিপি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
gdp-growthসংগঠনগুলোর দেয়া ক্ষতির হিসাবে জানা যায়, হরতাল-অবরোধে খাতভিত্তিক প্রতিদিনের সার্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ৬৯৫ কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৩০০ কোটি টাকা, কৃষিখাতে ২৮৮ কোটি ১০ লাখ টাকা, আবাসন খাতে ২৫০ কোটি টাকা, পর্যটন খাতে ২১০ কোটি টাকা, পাইকারি বাজার, শপিং মল, শোরুম, ক্ষুদ্র ও মাঝারি দোকান খাতে ১৫০ কোটি টাকা, পোশাক খাতে ১৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা, উৎপাদন খাতে ১০০ কোটি টাকা, স্থলবন্দর ও বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়ে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ৩৩ কোটি টাকা, সিরামিক খাতে ২০ কোটি টাকা, পোল্ট্রি শিল্পে ১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা, প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুত ও রপ্তানি খাতে ১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, বীমা খাতে ১৫ কোটি টাকা, হকার্স খাতে ১৫ কোটি টাকা, স্থলবন্দরে আমদানি পণ্য খালাসে ১০ কোটি ৫ লাখ টাকা, হিমায়িত খাদ্য খাতে ৮ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। এসব সেক্টরে দৈনিক আর্থিক ক্ষতি হয় ২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকার বেশি।
বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পোশাক খাত বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে শ্রীলঙ্কার মতো করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। শিল্প চলে যাবে অন্য দেশে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুরো ব্যাংকিং খাতেও। প্রতিদিন কমছে ব্যাংকের স্বাভাবিক লেনদেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ আদায়ে ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। অবরোধের কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্বাভাবিক গতি না থাকায় খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতিদিনের লেনদেন কমেছে প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ।
একইভাবে প্রতিদিন কমছে শেয়ারবাজার সূচক। গড় লেনদেন নেমেছে ২০০ কোটি টাকায়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের শুরুতে বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও ৬ জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে সূচক কমছে। ৫ জানুয়ারি ডিএসইর সূচক ছিল ৪ হাজার ৯৬৯ পয়েন্ট। গত ডিসেম্বরে ডিএসই’র গড় লেনদেন যেখানে ছিল প্রায় ৪০০ কোটি টাকা, গত তিন সপ্তাহে তা নেমেছে ২০০ কোটি টাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
এসকল ক্ষতি ছাড়াও প্রতিদিন তো আছেই পেট্রোল বোমা আর ককটেলে প্রাণ হারানো। পেট্রোল বোমা বিষ্ফোরণে মরতে হবে এটাই যেন বাংলার মানুষের প্রতিদিনের রুটিন। দেশের দুনেত্রীর রেষারেশির বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আর্থিক ক্ষতি ও মানুষের জীবন, এসব নিয়ে খেলা করায় যেন এ দেশের চলমান রাজনীতি।


Spread the love

Leave a Reply