মওলানা ভাসানী মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে কেমন ছিলেন?

Spread the love

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী এক চরিত্র আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, যিনি তার অনুসারীদের কাছে মওলানা ভাসানী হিসেবে পরিচিত।

শুধু বাংলাদেশের ইতিহাস নয়, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু করে এ অঞ্চলে সারাজীবন মওলানা ভাসানী রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ছিলেন।

মওলানা ভাসানী ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগের (পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পাকিস্তান শাসনামলেও ভাসানীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশ জনপ্রিয় ছিল।

কিন্তু এক সময় ভাসানীকে ছাপিয়ে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার নামের ওপর ভিত্তি করেই স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান।

প্রশ্ন হচ্ছে, তৎকালীন আরেকজন প্রভাবশালী নেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন?

এনিয়ে অনেকের মধ্যেই আগ্রহের কমতি নেই। এ লেখার মাধ্যমে ভাসানীর সেই সময়ের দিকে ফিরে তাকানো হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিকে মওলানা ভাসানী বাংলাদেশেই ছিলেন। তখন তিনি টাঙ্গাইলে অবস্থান করছিলেন। তবে তিনি টাঙ্গাইলের সন্তোষে নিজ বাড়িতে ছিলেন না।

নিজ বাড়ি ছেড়ে সেসময় তিনি উঠেছিলেন টাঙ্গাইলের বিন্যাফৈর নামের আরেকটি গ্রামে তার এক অনুসারীর বাড়িতে।

এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে মওলানা ভাসানীর সাথে দেখা করতে টাঙ্গাইলে গিয়েছিলেন দুইজন বামপন্থী নেতা রাশেদ খান মেনন এবং হায়দার আকবর খান রনো।

মি. রনো তার ‘শতাব্দী পেরিয়ে’ বইয়ে লিখেছেন, তাদের পক্ষ থেকে মওলানা ভাসানীকে ভারতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হলেও তিনি সেটি গ্রহণ করেননি। তিনি চেয়েছিলেন টাঙ্গাইলে থেকে চীনের সাথে যোগাযোগ করতে।

ততক্ষণে টাঙ্গাইলে পাকিস্তানী বাহিনী আক্রমণ শুরু করেছে এবং টাঙ্গাইল শহর দখল করে তারা গ্রামের দিকে এগুচ্ছিল।

হায়দার আকবর খান রনো লিখেছেন, “আমি বললাম, চীনের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করবেন? চীন দূতাবাসের পক্ষেও আপনার এখানে আসা সম্ভব নয়, পথে তো যুদ্ধ হচ্ছে।

মওলানা সাহেব তারপরেও বললেন – হবে, যোগাযোগ হবে, সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না। বুঝলাম, তিনি অযৌক্তিক কথা বলছেন।”

পাকিস্তানী বাহিনী টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা ভাসানীর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল।

এরপর তারা বিন্যাফৈর গ্রামের দিকে অগ্রসর হওয়ার আগে মওলানা ভাসানী কৃষকের বেশে ওই গ্রাম ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তিনি সিরাজগঞ্জ যান।

সেখানে একজন বামপন্থী নেতা সাইফুল ইসলামকে সাথে নিয়ে মওলানা ভাসানী আসাম দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন।

ভারত
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল।

মওলানা ভাসানীর সহচর সাইফুল ইসলাম ছিলেন পাবনায় তৎকালীন ন্যাপ (মোজাফফর) নেতা।

ভাসানীর সাথে অবস্থানের নানা ঘটনার বর্ণনা উঠে এসেছে সাইফুল ইসলামের লেখা বই ‘ভাসানী স্বাধীনতা ভারত’ নামক বইতে।

সেখানে মি. ইসলাম লিখেছেন, বিন্যাফৈর গ্রাম আক্রান্ত হবার আগে মওলানা ভাসানী পাশের আরেকটি গ্রামে গিয়েছিলেন।

পরবর্তীতে তিনি নদী পার হয়ে সিরাজগঞ্জে আসেন। পরে সাইফুল ইসলামকে সাথে নিয়ে তিনি যমুনা নদী ধরে আসামে পৌঁছান।

ভারতে প্রবেশ

ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছাতে মওলানা ভাসানী এবং তার সহচরদের কয়েকদিন সময় লেগে যায়।

তবে ভাসানী প্রথমে ভারতে ঢুকতে পারছিলেন না।

কারণ, সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বিষয়টি নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কাউকে সে এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ নিষেধ করেছে।

মওলানা ভাসানীকে নিয়ে গবেষণা করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লেখক ও গবেষক সৌমিত্র দস্তিদার। ‘আমি ও আমার মওলানা ভাসানী’ শিরোনামে তার একটি বইও রয়েছে।

মি. দস্তিদার বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “মওলানা ভাসানী যখন আসাম সীমান্তে আসলেন তখন তাকে অভ্যর্থনা করা হয়েছিল ভালো মতোই। তখন আসামের মন্ত্রী মইনুল হক চৌধুরী মওলানা ভাসানীর শিষ্যের মতোই ছিলেন।”

তবে, মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মওলানা ভাসানী ভারত যেতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন লন্ডন যেতে।

‘মওলানা ভাসানী হঠাৎ অদৃশ্য’

ভাসানী ভারতে থাকাকালীন ভারত এবং তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে অনেকেই তার কোন খোঁজ-খবর জানতেন না।

তার মতো একজন সুপরিচিত এবং প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ কেন হঠাৎ লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছেন – তা নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল ভারতের তৎকালীন রাজনীতিবিদদের মধ্যে।

রাজনৈতিক মহলে অনেকে জানতেন যে মওলানা ভাসানী ভারতে আছেন। তবে তিনি ঠিক কোথায় আছেন এবং কীভাবে আছেন সেটি ছিল অনেকের অজানা।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু এবং অস্থায়ী সরকার গঠন করা হলেও মওলানা ভাসানী ছিলেন যুদ্ধের মূলধারা থেকে আলাদা।

অনেকে ভেবেছিলেন, তিনি হয়তো নিজ থেকেই নির্বাসিত জীবন-যাপন করছেন।

তার সাথে সবসময় থাকতেন পাবনার মুজাফফর ন্যাপ কর্মী সাইফুল ইসলাম। তার কাজ ছিল ভাসানীর বিবৃতি ও চিঠি বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা।

শাহ আহমদ রেজা ১৯৭১ সালে প্রকাশিত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকাকে উদ্ধৃত করে ‘যুগে যুগে মওলানা ভাসানীর সংগ্রাম’ বইতে লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় মার্কসবাদী কমিউনিস্ট নেতা হরে কৃষ্ণ কোঙার ১৪ই মে অভিযোগ করেছিলেন যে, ‘মওলানা ভাসানীকে কলকাতাতেই কোথাও অন্তরীণ রাখা হয়েছে’।”

জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, মওলানা ভাসানী কোথায় আছে সেটা তিনি বা তার সরকার জানেন না।”

মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক সাপ্তাহিক ‘বাংলাদেশ’ – এর ২১শে মে ১৯৭১ সংখ্যার প্রধান শিরোনাম ছিল ‘ভাসানী কলকাতাতেই অন্তরীণ, কিন্তু সরকার নীরব!’

“আমরা রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানাইতেছি যে, অবিলম্বে তারা এই রহস্যজাল ভেদ করুন এবং ভাসানী সাহেবের নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করিয়া যে উদ্বেগ এবং সংশয়ের সৃষ্টি হইয়াছে তা দূর করুন।”

সেসময়কার বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে জানা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মওলানা ভাসানী ভারতের কোন একটি জায়গায় ছিলেন।

তিনি বিভিন্ন জায়গায় থেকেছেন। কখনো থেকেছেন কলকাতায়, কখনো আসামে, কখনো বা দেরাদুনে।

মওলানা ভাসানী কি ভারতে গৃহবন্দী ছিলেন?

মওলানা ভাসানীর অনুসারীদের অনেকে মনে করেন, ভারতে প্রবেশ করে তিনি কার্যত নিজের স্বাধীনতা খুঁইয়েছিলেন।

সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ (প্রয়াত) তার ‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’ বইতে লিখেছেন, “তিনি যদি ভারতে যাবার সিদ্ধান্ত না নিতেন, তবে হয়তো তার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্যভাবে রচিত হতো।”

ফয়েজ আহমদ লিখেছেন, “ভারতে থাকার সময় মওলানা ভাসানীর গতিবিধি ছিল নিয়ন্ত্রিত। কেবলমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের সাথে তিনি ঘুরতে পারতেন।”

রাজনৈতিক ইতিহাসবিদদের অনেকের লেখায় ‌উল্লেখ আছে, নিরাপত্তার অজুহাতে তাকে সবসময় নজরদারিতে রাখা হতো। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদার কর্মকর্তা কিংবা একজন ম্যাজিস্ট্রেট সবসময় ভাসানীর সাথে থাকতো।

বিভিন্ন লেখায় দেখা যায়, প্রবাসী সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতার বাইরে অন্য কেউ তার সাথে দেখা করতে পারতেন না। মওলানা ভাসানীর সাথে কে দেখা করবেন এবং কে করবেন না সেটি নির্ভর করতো ভারত সরকারের মর্জির ওপর।

এমনকি ভাসানীর একান্ত অনুগত ও অনুসারী হিসেবে পরিচিত হায়দার আকবর খান রনো, রাশেদ খান মেনন এবং কাজী জাফর আহমেদও তার সাথে দেখা করতে পারেননি।

“আমরা মওলানা ভাসানীর সাথে দেখা করার অনেক চেষ্টা করেছি। সিপিআই(এম)-এর সাহায্য চেয়েছি, কোনভাবে ভাসানীর দেখা পাওয়া যায় কী না। তবে, তারা প্রকাশ্যে এবং পার্লামেন্টে প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন, মওলানা ভাসানী কোথায়? ভারত সরকার নিরুত্তর ছিল,” লিখেছেন হায়দার আকবর খান রনো।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর হবার আগে মওলানা ভাসানী সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্ত ও স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে লন্ডনে বিপ্লবী অস্থায়ী গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

সে লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের আটই এপ্রিল লন্ডনের পথে আত্মগোপন করে ভারতের অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন।

ফয়েজ আহমদ লিখেছেন, “ভারত থেকে লন্ডনে পৌঁছানোর সহজ পথ বেছে নেয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল ভ্রান্ত। এই রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের ফলেই তিনি ভারত সরকার কর্তৃক অঘোষিত গৃহবন্দী হয়ে পড়েন।

এবং তার বিপ্লবী সরকার গঠনের পরিকল্পনাটি স্বাভাবিকভাবেই বানচাল হয়ে যায়। জীবনে তার সবচাইতে বেদনাদায়ক ঘটনা ছিল এই ব্যর্থতা।”

এপ্রিল মাসের শেষের দিকে তাজউদ্দীন আহমদ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে মওলানা ভাসানী যে বাসায় থাকতেন সেখানে দেখা করতে যান।

“তিনি দেরাদুনে আদর-আপ্যায়নের মধ্যে আটকাবস্থায় আগস্ট মাসেই জানতেন যে, ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করবে,” লিখেছেন ফয়েজ আহমদ।

‘ভারত বিরোধী নেতা’

পাকিস্তানের রাজনীতিতে মওলানা ভাসানী অনেকের কাছে ‘ভারত বিরোধী’ নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

যে কারণে তিনি ভারত সরকারের পছন্দের তালিকায় ছিলেন না। তবে রাজনীতিবিদ হিসেবে ভাসানীকে উপেক্ষা করার সুযোগও ছিল না।

কলকাতার লেখক ও গবেষক সৌমিত্র দস্তিদারও বলছেন, “মওলানা ভাসানীকে নিয়ে তৎকালীন ভারত সরকারের মধ্যে অস্বস্তি ছিল। এর বড় কারণ হচ্ছে, তার চীনপন্থী রাজনীতি।

ভারত যেহেতু চীনের প্রতিপক্ষ সেজন্য মওলানা ভাসানীকে আস্থায় নিতো না ভারত সরকার। তবে ভারতের অনেক রাজনীতিবিদদের মধ্যে মওলানা ভাসানীর ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা ছিল।”

বিবিসি বাংলাকে সৌমিত্র দস্তিদার বলেন, “ওনার গায়ে চীনপন্থী হিসেবে ছাপ ছিল। উনি সেটা অস্বীকারও করতেন না। তখন তো পশ্চিমবঙ্গে নকশাল আন্দোলন ভয়ঙ্কর চেহারায় ছিল। তারাও ছিল চীনপন্থী।

যদি মওলানাও কখনো নকশালদের সমর্থন করেন সে চিন্তাও ছিল ভারত সরকারের মনে। এসব নিয়ে গোয়েন্দা রিপোর্ট মওলানার বিপক্ষে ছিল। সে আশংকা থেকে ভারত সরকার মওলানাকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায়নি।”

ভাসানীর ভারত বিরোধী মনোভাব থাকায় ভারতের ইন্দিরা গান্ধী সরকার মুক্তিযুদ্ধের সময় তাকে নজরবন্দি করে রেখেছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব যাতে বামপন্থীদের হাতে চলে না যায় সেজন্য বেশ চিন্তিত ছিল ভারত সরকার। সেজন্য তারা মওলানা ভাসানীকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল বলেও বিভিন্ন লেখায় উঠে আসে।

“ভারতে থেকে মওলানা ভাসানী যদি কথা বলেন তাহলে অন্য নেতাদের কথাগুলো গৌণ হয়ে যাবে। গণমাধ্যমে এবং রাজনৈতিক দলগুলো হয়তো ভাসানীকেই গুরুত্ব দেবে। এসব কারণেও ভারত সরকার মওলানা ভাসানীকে প্রকাশ্যে আসতে দেয়নি,” বলে মনে সৌমিত্র দস্তিদার।

১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের অংশগ্রহণের প্রশ্নে কলকাতায় একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে মওলানা ভাসানীর নামও ঘোষণা করা হয়েছিল।

কিন্তু সেই সমন্বয় কমিটির সাথে মওলানা ভাসানীর যোগাযোগ ভারত সরকার পছন্দ করেনি।

তিনি যাতে রাজনৈতিক কারণে বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ করতে না পারেন, সেজন্য তাকে কলকাতা থেকে কুঁচবিহারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল।

কলকাতা ত্যাগের আগে সরকারি উদ্যোগে কলকাতা প্রেসক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু ভারত সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে মওলানা ভাসানী সেই সংবাদ সম্মেলনে যেতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন।

ফলে মওলানা ভাসানীর সহচর সাইফুল ইসলাম প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত হয়ে মওলানা ভাসানীর পক্ষে একটি বিবৃতি পাঠ করেন।

সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ লিখেছেন, ‘’ভারতে অবস্থানকালে কোন এক সময় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে মওলানা ভাসানীর বৈঠক হয়েছিল।’’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরিচালনার জন্য পঞ্চদলীয় একটা উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির বৈঠকে তিনি একবার যোগ দিয়েছিলেন। সেই বৈঠকের একটি ছবি তৎকালীন বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।

মওলানা ভাসানীর অনুসারীরা তাদের বিভিন্ন লেখায় লিখেছেন, এর মাধ্যমে ভারত সরকার প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে, মওলানা ভাসানী ভারতে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।

তবে ফয়েজ আহমদের ভাষায়, যেদিন বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে, সেই ১৬ই ডিসেম্বর মওলানা ভাসানী ভারতের দেরাদুরে অঘোষিত গৃহবন্দী হিসাবে অবস্থান করছিলেন।


Spread the love

Leave a Reply