২৫ শিক্ষার্থীর জামিন

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃজাফরিন হক চিৎকার দিয়ে ‘আব্বু, ভাইয়া (জাহিদুল হক) জামিন হয়ে গেছে’ বলেই আদালতের বারান্দায় আনন্দে কেঁদে ফেলেন। জাহিদুল হক সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলার সময় ৬ আগস্ট বাড্ডার ভাঙচুরের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখন তিনি কারাগারে আছেন। জাহিদুল হকের মতো আরও ২৪ শিক্ষার্থীকে আজ রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত (সিএমএম) জামিন দিয়েছেন।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের কাজে বাধা এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে করা মামলায় এসব শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হন।

ঢাকার থানা ও আদালত সূত্র বলছে, আন্দোলনের সময় সংঘাত, ভাঙচুর, উসকানি ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ এ পর্যন্ত ৫১টি মামলায় ৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এঁদের মধ্যে ৫২ জন শিক্ষার্থী। আজ ঢাকার আদালতে জামিন চেয়ে ২৫ শিক্ষার্থীর পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আইনজীবীরা জামিনের পক্ষে শুনানি করেন।Eprothomalo

শুনানিতে ছাত্রদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এসব ছাত্রের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। মামলার এজাহারেও তাঁদের নাম নেই। সন্দেহজনকভাবে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার সবাই ছাত্র।

আদালত শুনানি নিয়ে ২৫ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেন।

বাড্ডা থানার মামলায় গ্রেপ্তার ১৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আজ জামিন পেয়েছেন ১০ জন। আর ভাটারা থানার মামলায় গ্রেপ্তার আট শিক্ষার্থীর মধ্যে জামিন পেয়েছেন ছয়জন। অন্যদিকে, ধানমন্ডি থানার পৃথক তিন মামলায় গ্রেপ্তার নয় শিক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। ধানমন্ডি এলাকায় ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত সূত্র বলছে, গ্রেপ্তার বাকি শিক্ষার্থীদের কারও কারও জামিন শুনানি আগামীকাল হতে পারে।

কয়েক ছাত্রের স্বজনেরা প্রথম আলোকে জানান, জামিন হওয়ায় এখন তাঁরা কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে যাচ্ছেন। আদালত সূত্র বলছে, আদালত থেকে ছাত্রদের জামিনের কাগজ কারাগারে পাঠানো হবে।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হন। এরপর ঘাতক বাসচালকের শাস্তি এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

ছেলে জাহিদুল হকের জামিন হওয়ার পর বাবা ফোনে সেই খবর স্বজনদের জানান। পাশে হাস্যোজ্জ্বল জাহিদুলের বোন। সিএমএম কোর্ট, ১৯ জুলাই। ছবি: দীপু মালাকার

জামিনের আবেদন করেছেন—এমন শিক্ষার্থীদের বাবা-মা, ভাই-বোন আজ সকাল থেকে আদালতে ভিড় করতে থাকেন। ধানমন্ডির মামলায় গ্রেপ্তার দুই ভাই মাহমুদুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান। মাহমুদ পড়েন ইউল্যাবে। আর মাহবুব বিএফ শাহীন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে এখন আইইএলটিএস করছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জামিন হওয়ার খবর শুনেই তাঁদের মা বলে ওঠেন, ‘আমার ছেলেদের জামিন হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।’

বাড্ডার মামলায় গ্রেপ্তার মেহেদী হাসানের জামিনের সংবাদ শুনে তাঁর বাবা এম এ মাসুদ খান আদালতের বারান্দায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আজ আমার আনন্দের দিন। ছেলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কত যে যন্ত্রণায় ছিলাম, সে কথা কাউকে বোঝাতে পারব না।’ ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ছাত্র রেদোয়ান আহমেদের বাবা অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ছেলের জামিন হওয়ায় বেজায় খুশি। তিনিও প্রথম আলোকে বলেন, ছেলের জামিন হওয়ায় খুব ভালো লাগছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নূর মোহাম্মাদের বোন মাবিয়া বললেন, ‘ভাইয়ার জামিন হওয়ায় আমার অনেক ভালো লাগছে। আমরা একসঙ্গে ঈদ করতে পারব’।

বাড্ডার আফতাবনগর এলাকার ভাঙচুরের মামলায় ১৪ ছাত্রকে এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ভাঙচুরের মামলায় ৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৭ আগস্ট ২২ শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এজলাসে স্বজনদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছাত্ররা। দুই দিনের রিমান্ড শেষে যখন ছাত্রদের প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা।

জাহিদুল হক ও নূর মোহাম্মাদের আইনজীবী আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদের জামিন করাতে পেরে তিনি নিজেও খুব আনন্দিত।

যাঁরা আজ জামিন পেলেন
বাড্ডার মামলায় জামিন পাওয়া ১০ শিক্ষার্থী হলেন রেদোয়ান আহমেদ, রাশেদুল ইসলাম, মুশফিকুর রহমান, ইফতেখার আহম্মেদ, রেজা রিফাত আখলাক, এ এইচ এম খালিদ রেজা, তারিকুল ইসলাম, নূর মোহাম্মাদ, জাহিদুল হক ও হাসান। আর ভাটারা থানার মামলায় জামিন পেয়েছেন আজিজুল করিম, মাসাদ মরতুজা বিন আহাদ, ফয়েজ আহম্মেদ আদনান, মেহেদী হাসান, শিহাব শাহরিয়ার ও সাখাওয়াত হোসেন। ধানমন্ডির মামলায় জামিন পাওয়া নয় শিক্ষার্থী হলেন সোহাদ খান, মাসরিকুল আলম, তমাল সামাদ, ওমর সিয়াম, মাহমুদুর রহমান, মাহবুবুর রহমান, ইকবাল হাসান, মিনহাজ রহমান ও নাইমুর রহমান।


Spread the love

Leave a Reply