ফের বিক্ষোভে উত্তাল মিসর, ব্যাপক ধরপাকড়

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্ক:

প্রায় দুই বছর আগে ক্ষমতা গ্রহণের পর এই প্রথম জোরালো বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট ফাত্তাহ আল সিসি। সিসির পদত্যাগের দাবিতে আবারও সেই তাহরির স্কয়ার ঘিরেই যেন দানা বাধছে আরেকটি আরব বসন্ত।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, সৌদি আরবকে দ্বীপ উপহার দেওয়ার প্রশ্নে ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল-ফাত্তাহ আল-সিসি। এবার মিসরবাসী প্রথমে নিজ দেশের সম্পদ রক্ষার ডাক দিলেও সেই ডাক পরবর্তীতে পরিণত হয়েছে সিসির পদত্যাগের দাবিতে।

মিসরের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সিসিকে দায়ী করে সিনাই মুক্ত দিবসকে বিক্ষোভের রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে মিসরবাসী। তাই ভয় পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ফাত্তাহ আল সিসি। ভয় পেয়ে শুরু করেছেন ব্যাপক দমন-পীড়ন। সোমবারের তাহরির স্কয়ারে কয়েক হাজার মানুষের বিক্ষোভ দমাতে সেনা সদস্য ও আর্মড পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গ্রেফতার করা হয় কয়েকশ আন্দোলনকারী ও সাংবাদিককে।

এপ্রিলের প্রথম সৌদি বাদশাহ সালমানের মিসর সফরকালে প্রেসিডেন্ট সিসি নির্বাহী ক্ষমতাবলে সৌদি আরবকে লোহিত সাগরে মিশরের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুটি দ্বীপ সৌদি আরবকে উপহার হিসেবে প্রদানের ঘোষণা দেন। ১৯৫০ সাল থেকে দ্বীপ দুটি মিসরের দখলে ছিল। মিসরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিরান ও সানাফারি দ্বীপ দুটি সৌদি জলসীমায় অবস্থিত হওয়ার কারণেই এগুলো হস্তান্তর করা হচ্ছে।  এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। আন্দোলনকারীরা স্লোগান তুলেন, ‘আমরা সিসি মুবারক চাই না, ক্ষমতা ছাড়ো’, ‘আমরাই আমাদের জমির মালিক’।

তবে দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, তার বিরোধিরা জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছেন। তবে সোমবারের বিক্ষোভে ছিল জাতীয়তাবাদী ইস্যু। লোহিত সাগরের দুটি দ্বীপ সৌদি আরবের কাছে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভের প্রতীকী স্থান হয়ে ওঠা তাহরির স্কয়ারসহ সাংবাদিক, চিকিৎসক ইউনিয়ন ও বিক্ষোভকারীরা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয়।

সোমবার ছিল সিনাই মুক্ত দিবস। দিনটি উদযাপনের পরিবর্তে তা বিক্ষোভ ও প্রতিরোধের দিনে পরিণত হয়। দেশটির সেনাবাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, যারা দিনটি উদযাপন করতে চায় সেসব ‘শান্তিকামী জনগণকে রক্ষায়’ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ তিনজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছেন। এদের একজন হচ্ছে প্রেস সিন্ডিকেট বোর্ডের সদস্য খালেদ আল-বাশি। আন্দোলনকারী সংস্থা ফ্রিডম ফর দ্য ব্রেভ এর পক্ষ থেকে জানা হয়েছে গত সপ্তাহে কয়েকশ আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

দুটি দ্বীপ সৌদি আরবকে প্রদানের কারণে এ বিক্ষোভ শুরু হলেও এখন আর তা শুধু এই ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নেই। মিসরের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সিসিকে দায়ী করে তার পদত্যাগের দাবিও উঠছে জোরেসোরে।  বিক্ষোভকারীরা জানান, দুর্নীতি, দারিদ্র্য আর বেকারত্বে প্রতিনিয়ত বিক্ষুব্ধ মিশরীয়রা এবার আবারও আন্দোলনে শামিল হলো। সিসিকে তারা হোসনি মুবারক থেকে বেশি স্বৈরাচারী শাসক বলে উল্লেখ করেছেন।

এর আগে গত ১৫ এপ্রিল কায়রোর গিজা এলাকায় আল-সিসি শাসনের পতনের ডাক দেন বিক্ষোভকারীরা। ব্যাঙ্গ করে তারা সিসিকে নাম দেন  ‘সিসি মুবারক’।  বিক্ষোভকালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে মিসরের নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষও হয়েছে। ব্যাপক ধরপাকড় করা হয়। ওই দিনই ২৫ এপ্রিল বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।

হোসনি মুবারকের পতনের পর মিসরের ইতিহাসের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে মুসলিম ব্রাদারহুড। কিন্তু জনগণের দাবি পূরণে তারাও সফল হয়নি, এমন দাবিতে সরকার-বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে তা সেনাবাহিনীর সমর্থন পায়। ২০১৩ সালে পশ্চিমা শক্তির পরোক্ষ অনুমোদনে তৎকালীন মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিশরের সেনাবাহিনী পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়।

২০১৪ সালে এক বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেনাপ্রধান ফাত্তাহ আল-সিসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। মুরসিকে উৎখাতের পর থেকেই তার সমর্থকরা সিসি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার মুরসির সমর্থককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, মিসর এখন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এদিকে প্রেসিডেন্ট সিসির সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব।


Spread the love

Leave a Reply